নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৪৪ এএম
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৫০ এএম
অনলাইন সংস্করণ

বিদ্যুৎ লাইনের জন্য ৫ শতাধিক তালগাছের মাথা কাটল নেসকো

বিদ্যুতের তার টানার অজুহাতে ৫ শতাধিক তালগাছের মাথা কেটে ফেলা হয়েছে। ছবি : কালবেলা
বিদ্যুতের তার টানার অজুহাতে ৫ শতাধিক তালগাছের মাথা কেটে ফেলা হয়েছে। ছবি : কালবেলা

ঠিক দুই সপ্তাহ আগেও রাস্তার ধারে শোভা পাচ্ছিল বড় বড় তালগাছ। সারিবদ্ধ তালগাছগুলো দেখতে যেমন সুন্দর লাগছিল, মানুষের জন্যও সেগুলো ছিল উপকারী। দিত অক্সিজেনের সরবরাহ। এ ছাড়া বজ্রপাত নিরোধক হিসেবেও তালগাছের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। অথচ সেই তালগাছগুলোর মাথা কেটে ফেলা হয়েছে।

বিদ্যুতের তার টানার অজুহাতে ৫ শতাধিক তালগাছের মাথা কেটে ফেলা হয়েছে। এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ করেছে নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো)।

নওগাঁ সদর উপজেলার নওগাঁ পৌরশহরের বাইপাস সড়কের এক পাশের সারিবদ্ধ ৫ শতাধিক বড় তালগাছকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে তারা। এই গাছগুলোর ওপর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন যাওয়ায় ১০-১২ দিন আগে তালগাছগুলোর মাথা মুড়িয়ে দেয় তারা। সড়কটির বাইপাস ব্রিজ থেকে বোয়ালিয়া মোড় (সান্তাহার বাইপাসের) পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সড়কের এক পাশে মাথা মুড়িয়ে দেওয়া তালগাছগুলো চোখে পড়ে। তালগাছগুলো বাঁচাতে কারও কোনো উদ্যোগ নেই।

অথচ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বজ্রপাত থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তালগাছ রোপণের ওপর জোর দিয়ে আসছে সরকার ও পরিবেশবিদরা। নওগাঁতে বিগত কয়েক বছরে সরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে সড়কের দুই ধারে হাজার হাজার তালগাছের চারা রোপণ করা হয়েছে।

রানীনগর উপজেলার রায়হান ও আবু সাইদ নামের দুই যুবক বলেন, ‘আমরা বাইপাসের এই রাস্তা দিয়ে ঘুরছিলাম। হঠাৎ চোখে পড়ে তালগাছের মাথা কাটা। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি নেসকোর লোকজন শুধু তার টানার কারণে এই রকম কাজ করেছে। যা মোটেও ঠিক হয়নি। অথচ জেলার এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানে তালগাছের কারণে বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে।’

তারা আরও জানায়, বিষয়টি খারাপ লাগায় ফেসবুকে প্রতিবাদ জানায়। এবং বিষয়টি কিছু পরিচিতদের জানায়। আসলে কাজটি মোটেও ঠিক হয়নি। আমাদের জানামতে মানুষের উপকারী এতগুলো গাছ আর বাঁচবে না। কারণ মাথা কেটে দিলে তালগাছ বাঁচে না। এখন সংশ্লিষ্টরা সিদ্ধান্ত নেবেন।

নওগাঁ পৌরসভার বোয়ালিয়া এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নব্বইয়ের দশকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নওগাঁ-সান্তাহার বাইপাস সড়কের দুপাশে তালগাছগুলো রোপণ করা হয়। সেই তালগাছগুলো বড় হয়ে বছরের পর বছর ধরে শোভা ছড়াচ্ছে। বছরে দুবার বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন এসে সড়কের এক পাশের তালগাছের পাতা ছেঁটে দেন। আর এবার একদম মাথা মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’

পৌরসভার আরেক বাসিন্দা আল মামুন বলেন, ‘তালগাছগুলো আমাদের ছায়া দেয়, ফল দেয়। এরা বিদ্যুৎ বিভাগ মাথা মুড়ে দিছে, এখন যত দূর ওপরে আছে, এর পরেরবার মাথাই কাটতি হবে নে। আমরা চাই বিদ্যুতির লাইন যে কোনো দিক একটু সরায়ে হলিও যাতে গাছগুলো বাঁচে। কারণ, একটা তাল গাছের ফল আসতে প্রায় ২০ বছর সময় লাগে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) নওগাঁ কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এভাবে গাছ কাটা উচিত নয়। কারণ, গাছ আমাদের জীবন বাঁচায়। কিন্তু ওনারা (বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন) কোনো কথা শোনেন না। শুধু এখানে নয়, বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুতের লাইনের জন্য গাছ কাটা পড়ে। গাছ না কেটে বিদ্যুতের খুঁটি একটু সরিয়ে বসালেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। ’

স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯৫ সালের দিকে নওগাঁ কাঁঠালতলী এলাকায় নেসকোর বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র থেকে নওগাঁ সদর উপজেলার বোয়ালিয়া, তিলকপুর ও বক্তারপুর এবং বদলগাছী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে বাইপাস সড়কের দুই পাশে খুঁটি বসানো হয়। তখন তালগাছগুলো ছোট ছিল। গাছগুলো বড় হয়ে গত ১০-১২ বছর ধরে নেসকোর লোকজন বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক রাখতে গাছগুলোর মাথা মুড়িয়ে দিচ্ছে। এলাকাবাসী গাছগুলো রক্ষায় বারবার আবেদন জানালেও তারা কর্ণপাত করেনি।

এ বিষয়ে নেসকোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ কালাম কালবেলাকে বলেন, নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বিদ্যুৎ লাইনের আশেপাশের বিভিন্ন গাছের ডাল ও পাতা কাটা হয়েছে।’ তার ধারণা, তালগাছগুলো লাইন বসানোর পর লাগানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘লাইন সরাতে হলে অন্যের জমির ওপর দিয়ে যাবে হয়তো, তখন আবার স্থানীয় ব্যক্তিরা বাধা দেবেন। লাইন স্থানান্তরের খরচও আছে। বিদ্যুৎ বিভাগের প্রয়োজনে লাইন সরালে, বিদ্যুৎ বিভাগ খরচ বহন করে আর স্থানীয় ব্যক্তিদের প্রয়োজনে সরাতে হলে তাদের খরচ বহন করতে হয়।’

এ বিষয়ে নওগাঁ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘তালগাছ থাকতেই এর ওপর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন টানা হয়েছিল। তখন গাছগুলো ছোট ছিল। বিদ্যুতের লাইন ও তালগাছ দুটিই সরকারের জায়গায়। তাই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বান্দরবানে পুলিশ সুপার কার্যালয় ঘেরাও

ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, আটক ১২

ভারতকে হারিয়ে সেমিফাইনালে বাংলাদেশ

‘আমরা সবাই হাদি হবো, যুগে যুগে লড়ে যাব’

সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ল কয়েকটি চিতাবাঘ

বেনাপোলে লংমার্চ টু বর্ডার ও অবস্থান কর্মসূচি পালন

হাদি হত্যার প্রতিবাদে সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ শিক্ষার্থীদের

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে স্যার ফজলে হাসান আবেদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী পালন

হাদির মৃত্যুতে মা‌র্কিন দূতাবাসের শোক প্রকাশ

বাসের ধাক্কায় যুবদলের ২ নেতা নিহত

১০

ওসমান হাদির গ্রামের বাড়িতে মানুষের ঢল

১১

জেগে ওঠা বিস্তীর্ণ বালুচরে স্বপ্ন বুননে ব্যস্ত কৃষকরা

১২

ঢাবির বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত

১৩

প্রিয় মানুষের অভিমান ভেঙে ফেলুন সহজ কিছু উপায়ে

১৪

জানা গেল বিপিএলে কারা থাকছেন আম্পায়ারিংয়ে

১৫

হাদির রুহের মাগফিরাত কামনায় বাদ জুমা বিশেষ দোয়া

১৬

পুরোপুরি নিভেছে প্রথম আলো কার্যালয়ের আগুন

১৭

ফের শাহবাগে বিক্ষোভ 

১৮

এমন সাহসী কণ্ঠস্বর কি আর পাব, হাদির স্মরণে নিলয়

১৯

পাঠকদের উদ্দেশে প্রথম আলোর বার্তা

২০
X