

যাত্রা শুরু হলো নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমের। এতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হলো শিক্ষার। বিশ্ববিদ্যালয়টির অধীনে দুটি অনুষদের আওতায় দুটি নতুন বিভাগ খোলার অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) জারি করা ইউজিসির এক অফিস আদেশে এ অনুমতি দেওয়া হয়।
এ সিদ্ধান্তের ফলে আগামী ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকেই প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে পাঠদান শুরু করা সম্ভব হবে। এতে করে আনন্দের জোয়ার বইছে জেলাজুড়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম এগিয়ে নিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন বর্তমান ভিসি প্রফেসর ড. হাসানাত আলী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র প্রতিনিধিরা, বিএনপি, এনসিপি ও অন্যান্য দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
ইউজিসি সূত্রে জানা যায়, ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে শর্তসাপেক্ষে আইন অনুষদের আওতায় ‘আইন বিভাগ’ এবং বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের আওতায় ‘অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস (AIS) বিভাগ’ চালুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
ইউজিসির অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. মহিবুল আহসান স্বাক্ষরিত অনুমোদনপত্রটি নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন বিভাগ চালুর কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে পারবে।
অন্যদিকে ইউজিসির এ সিদ্ধান্ত নওগাঁর উচ্চশিক্ষার প্রসারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এতে নওগাঁবাসীর দীর্ঘদিনের উচ্চশিক্ষা সম্প্রসারণের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে আরও এক ধাপ অগ্রগতি ঘটল।
বিশ্ববিদ্যালয় চালুর প্রক্রিয়াটিকে এগিয়ে নিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র প্রতিনিধিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে দাবি করেন ছাত্র প্রতিনিধি সাদনান সাকিব ও আরমান হোসেন। তারা কালবেলাকে বলেন, আজ আমাদের আন্দোলন ও প্রচেষ্টা সফল হলো। নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয় জেলাবাসীর প্রাণের দাবি ছিল। কৃষি প্রধান জেলায় অনেক মেধাবী ছাত্র আছে, যারা অনেক সময় বাইরে গিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পায় না। সেদিক থেকে এখন অনেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পাবে। আমরা আশা করছি, উত্তরবঙ্গের মধ্যে একদিন শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ হিসেবে পরিচিত লাভ করবে এ বিশ্ববিদ্যালয়।
তারা আরও বলেন, ৫ আগস্টের পর আমরাই প্রথম নাম পরিবর্তন করার আন্দোলন করেছি। যেখানে স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা করেছেন বর্তমান ভিসি স্যার। তার অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণেই আমাদের তথা নওগাঁবাসীর মনের আশা পূরণ হয়েছে। আমাদের অনুভূতি অনেক ভালো। এখন ভিসি স্যারের পরামর্শে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাব।
একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চালুর প্রক্রিয়াটিকে এগিয়ে নিতে অনেক চেষ্টা করেছেন বলে দাবি করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেত্রী মনিরা শারমিন। তিনি কালবেলাকে বলেন, ব্যক্তিগত ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আজ নওগাঁবাসীর জন্য কিছু করতে সক্ষম হলাম।
জানতে চাইলে তিনি কালবেলাকে বলেন, নওগাঁকে নিয়ে আমার অনেক পরিকল্পনা ছিল। তার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর একটি অন্যতম। এ ছাড়া নওগাঁ যেহেতু কৃষি প্রধান জেলা, তাই গবেষণার অনেক সুযোগ আছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা দূর করতে ইউজিসি-এর সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করেছি। কৃষি প্রধান জেলা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নতুন বিভাগগুলো যেন এলাকার কৃষি, আম, চাল ব্যবসা এবং উদ্যোক্তা সম্ভাবনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। এই জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে নৈতিক, মানবিক ও মেধাভিত্তিক মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে উল্লেখ করে আশা প্রকাশ করেন এখানকার তরুণরাই আগামী দিনে দেশ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু কালবেলাকে বলেন, আমরা জানতে পারি দুটো বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল। সাধারণ মানুষকে নিয়ে জেলা বিএনপি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। যার সুফল আজ পাওয়া গেল। এজন্য জেলা বিএনপি খুবই আনন্দিত। এবং সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। এতে করে নওগাঁ জেলা আরও একধাপ এগিয়ে গেল। এখন অনেক দরিদ্র পরিবারের মেধাবী ছাত্রসহ অন্যান্য মেধাবী ছাত্ররা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে ভবিষ্যতে জেলার মুখ উজ্জ্বল করবে।
নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) প্রফেসর ড. হাসানাত আলী অনুমোদনের খবরটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ‘ঐতিহাসিক একটি মুহূর্ত’ বলে উল্লেখ করেন। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি কালবেলাকে বলেন, নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্যই ছিল স্থানীয় শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার কার্যকর সুযোগ সৃষ্টি করা। আইন ও হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ চালুর অনুমোদন তার বাস্তবায়নের পথ উন্মুক্ত করেছে। আমরা খুব দ্রুত পরবর্তী প্রশাসনিক ও একাডেমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বিভাগ দুটির কার্যক্রম শুরু করব।
তিনি আরও বলেন, নওগাঁ ও আশপাশ জেলার শিক্ষার্থীরা এখন অন্য কোথাও না গিয়েও মানসম্মত শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবেন। এটি নওগাঁর সামগ্রিক উন্নয়নেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
নওগাঁর বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সাবেক অধ্যাপক আতাউল হক সিদ্দিকী বিষয়টিকে নওগাঁর শিক্ষাখাতে ‘বড় অর্জন’ হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু থেকেই জেলার মানুষের প্রত্যাশা ছিল ধীরে ধীরে এখানে গুরুত্বপূর্ণ ও চাহিদাসম্পন্ন বিভাগ চালু হবে। আইন ও AIS বিভাগ চালুর অনুমোদন সেই প্রত্যাশাকে আরও শক্তিশালী করল। বিশেষ করে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা নিজেদের এলাকায় থেকে পড়াশোনা করার সুযোগ পাবে।
তিনি আরও যোগ করেন, সরকার ও ইউজিসির এই সিদ্ধান্ত নওগাঁ অঞ্চলের মানবসম্পদ উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক বিস্তৃতি বাড়লে গবেষণার সুযোগও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।
নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাঠামো ধীরে ধীরে বিস্তৃত হচ্ছে। আইন ও হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ যুক্ত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে। স্থানীয় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ইতোমধ্যেই এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, কারিকুলাম প্রণয়ন, একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে দ্রুত ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ২০২৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, নওগাঁ’ বিল পাস হয়। ৫ আগস্ট পরবর্তীতে ২০২৫ সালের ১৬ জানুয়ারি অধ্যাদেশ জারি করে এ বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তন করে ‘নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়’ করা হয়। তবে ভিসিসহ কিছু জনবল নিয়োগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য জমি অধিগ্রহণের অনুমোদন ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টির তেমন দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। সর্বশেষ বর্তমান ভিসি, ছাত্রপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন দলীয় নেতাকর্মীদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আজ দুটি বিষয়ের অনুমোদন পেল বিশ্ববিদ্যালয়টি।
মন্তব্য করুন