কালবেলায় সংবাদ প্রকাশে অবশেষে সুন্দরবনের দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত সেই বন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন স্বাক্ষরিত এক আদেশে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের খুলনা রেঞ্জের কাশিয়াবাদ স্টেশন কর্মকর্তা (ফরেস্টার) শ্যামা প্রসাদ রায়কে বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, বিভাগীয় বন কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত ২২,০১, ০০০০, ৪৬১,০৫,০০৫, ২৩,৩২১০নং স্মারকের এক অফিস আদেশে শ্যামা প্রসাদ রায়কে বদলি করা হয়। এ ছাড়া (নবাগত) স্টেশন কর্মকর্তা হিসেবে নির্মল কুমার মণ্ডলকে কাশিয়াবাদ স্টেশনে পদায়ন করা হবে।
অপরদিকে, শ্যামা প্রসাদের বদলির খবর সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে নির্যাতিত জেলে বাওয়ালি-পেশাজীবীসহ সাধারণ মানুষের মাঝে অনেকটা স্বস্তি ফিরে এসেছে।
স্থানীয় জেলে-বাওয়ালিদের কয়েকজন বলেন, শ্যামা প্রসাদ রায় গত ১ বছর আগে সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ স্টেশনে যোগদান করেন। তার কয়েক মাস পর থেকে বন সংলগ্ন বজবজা, খাঁশিটানা, আন্ধারমানিক, ৪নং কয়রা, ৬নং কয়রা, সুতি বাজার, মঠবাড়ী, জোড়শিং, ঘড়িলালসহ বিভিন্ন এলাকার বন্যপ্রাণী এবং বনজসম্পদ পাচারকারী চক্রের সদস্যদের সাথে গোপনে গভীর সখ্য গড়ে তুলে নানা অপকর্মে জড়িয়ে অর্থ-বাণিজ্যেসহ বিএলসি নবায়নে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ে মেতে ওঠেন। ফলে তার সময়ে ব্যাপকভাবে হরিণসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী নিধনের পাশাপাশি বিষ প্রয়োগে সুন্দরবনের নিষিদ্ধ এলাকায় অবাধে মাছ শিকারের মহোৎসব শুরু হয়।
গত কয়েকদিন আগে বিএলসি নবায়নে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ে স্থানীয় জেলে আবুল কালামের কাছে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাকে নানাভাবে মামলার ভয় দেখিয়ে হয়রানির হুমকি দেন শ্যামা প্রসাদ। ভুক্তভোগী নিরূপায় হয়ে কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট আদালতে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এর আগে কালাবগী স্টেশনে থাকাকালে তার নামে স্থানীয় জেলে-বাওয়ালিদের করা একাধিক মামলাও রয়েছে। এ ঘটনা কালবেলাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হলে নড়ে বসে বন বিভাগের কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলে-বাওয়ালি বলেন, শ্যামা প্রসাদের দায়িত্বকালে আমরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছি। তিনি অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তাদের বনের নিষিদ্ধ এলাকায়ও মাছ ধরার সুযোগ দিয়েছেন। আর আমরা বৈধভাবে নদী ও সমুদ্র হতে মাছ আহরণ করতে গেলেও অনেক সময় অনুমতি পাইনি।
এদিকে শ্যামা প্রসাদ রায়ের বদলির বিষয়টি স্বীকার করলেও কালবেলাকে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে উঠা সব অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের (ডিএফও) ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন জানান, কাশিয়াবাদ স্টেশন কর্মকর্তা শ্যামা প্রসাদ রায়কে পাটকোষ্টা টহল ফাঁড়িতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়েছে এবং নবাগত স্টেশন কর্মকর্তা হিসেবে নির্মল কুমার মণ্ডলকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন