শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পাট চাষিদের কপালে চরম দুশ্চিন্তার ভাঁজ। প্রখর রোদ, অনাবৃষ্টির কারণে এবার চাষের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চাষিদের পোহাতে হয়েছে চরম ভোগান্তি । যার ফলশ্রুতিতে উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে। কিন্তু বর্তমান বাজার মূল্য নিয়ে হতাশায় ভুগছেন জাজিরার কৃষকরা। বৈশ্বিক সব কিছু মিলে এ বছর তেল, সার, কীটনাশকের দাম ও শ্রমিক মজুরি বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচও প্রচুর পরিমাণে বেড়েছে গিছে।
বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) জমে উঠেছে পাটের হাট। তবে মন্দা পাটের বাজার। বিক্রেতার কোনো অভাব না থাকলেও তুলনামূলকভাবে ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না।
জানা যায়, শরীয়তপুর জেলায় সর্বাধিক পাটের আবাদ হয়ে থাকে জাজিরা উপজেলায়। বিগত বছর গুলোর তুলোনায় এ বছর পাট চাষে কৃষকদের গুনতে হয়েছে অতিরিক্ত টাকা। সব পণ্যের বাজার মূল্য বৃদ্ধিতে বেড়েছে শ্রমিক ব্যয়, সঙ্গে পাটের জন্য ব্যবহৃত সারও বিক্রি হয়েছে গত বছরের তুলনা বস্তা প্রতি অধিক মূল্যে। একবিঘা জমিতে ব্যবহৃত হয় প্রায় ১ বস্তা ডিএপি, এতে গত বছরের তুলনায় কেজিতে বেড়েছে ৬ টাকা আর বস্তায় বেড়েছে ৩০০ টাকা। এছাড়াও ইউরিয়াসহ সব দিক থেকে কৃষকদের গুনতে হয়েছে অতিরিক্ত টাকা। তবে গত বছরের তুলনা এ বছর পাটের দাম কমেছে মন প্রতি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত । এতেই মাথায় হাত জাজিরায় কৃষকদের।
কৃষক সালাউদ্দিন মোল্লা জানায়, আমি ১৫ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি, তবে এই হাটে পাটের দাম দেখে হতাশ আমি। গত বছরের তুলনায় এ বছর পাটের বাজার মূল্য কম। কৃষকের বিঘা প্রতি ১০-১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এতে এবছর আমাদের কোনো চালান আসতেছে না। বাজার অনুপাতে এখন মূল্য আছে ১ হাজার ৫০০ থেকে সর্বচ্চ ২৫০০ টাকা। তবে ৩৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হলে হয়তো কৃষকরা কোনো রকম খেয়ে থাকতে পারবে।
কাজির হাটের পাইকার হাজী দেলোয়ার মাদবর জানায়, পাটের বর্তমান যেই দাম তাদিয়ে কৃষকরা লাভে নেই। ন্যায্য মূল্য কৃষকও পাচ্ছে না। আমরাও টাকা পাই না। ঘর ভর্তি পাট। মোকামে চাহিদা কম।
এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা শংকর রঞ্জন সরকার জানান, পাট সরকারিভাবে মূল্য নির্ধারণ করা হয় না তাই এতে কিছু সমস্যা রয়েছে। এলাকা ভিক্তিক পাটের দাম ওঠা নামা করে। ফরিদপুরের দিকে পাট আমাদের শরীয়তপুরের পাটের তুলনায় উন্নত, তাই সেখানে তুলনামূলক দাম বেশি। ফরিদপুরের কানাইপুরে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা করে পাট বিক্রি হলেও এখানে দুই হাজার টাকাও বিক্রি হয় না।
জাজিরা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তার মো. জামাল হোসেন বলেন, সরকার পাট চাষ বৃদ্ধির জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও পাট অধিদপ্তর থেকে পাট চাষিদের নানা উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছেন। গত দুই বছর দাম ভালো হওয়ায় এবছর পাটচাষ বেশি হয়েছে। শুরু দিকে দাম ভালো হলেও বর্তমানে বাজারে পাটের দর কম। তবে পাটের দাম প্রতি মণ ৩ হাজার টাকার বেশি হলে কৃষকরা পাটচাষে আরও আগ্রহী হবেন। পাট সংরক্ষণ করে রাখলে পাটের দাম কিছু দিনের মধ্যে বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
মন্তব্য করুন