বরিশালের হিজলা উপজেলাধীন মেঘনা নদীতে মা ইলিশ রক্ষার অভিযানে গিয়ে আবারও জেলেদের হামলার শিকার হয়েছেন মৎস্য বিভাগ ও নৌ পুলিশের সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে হিজলার মেঘনা নদীতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। উপজেলার হিজলা গৌরবদী ইউনিয়নের জানপুর ও খালিশপুর অংশে দেড় থেকে দুইশ জেলে মিলে তাদের ওপর হামলা করে।
হামলায় আভিযানিক দলের কোনো সদস্য গুরুতর আহত না হলেও ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১২ জেলেকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ। তা ছাড়া হামলার ঘটনায় আটক ১২ জনসহ মোট ২২ জনকে অভিযুক্ত করে হিজলা থানায় মামলা করেছে নৌ-পুলিশ।
হিজলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এমএম পারভেজ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ‘আটক ১২ জেলেকে সরকারি কাজে বাধা এবং পুলিশ ও মৎস্য বিভাগের লোকেদের ওপর হামলার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, হিজলা ছাড়াও ইতিপূর্বে বরিশালের বাবুগঞ্জ, মুলাদী এবং বানারীপাড়ায় ডিমওয়ালা মা ইলিশ রক্ষার অভিযানে কয়েক দফা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় পৃথক মামলাও হয়েছে।
সবশেষ গত বৃহস্পতিবার বিকেলে হিজলার মেঘনা নদীতে হামলার বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এমএম পারভেজ জানান, ‘সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে ইলিশ শিকার করছিল জেলেরা। বিষয়টি জানতে পেরে মৎস্য বিভাগ ও নৌ-পুলিশ সমন্বিতভাবে মেঘনা নদীর খালিশপুর অংশে অভিযান পরিচালনা করেন।
তিনি বলেন, ‘আভিযানিক দল ঘটনাস্থলে পৌঁছানো মাত্রই জেলেরা আকস্মিকভাবে হামলা করে। তারা পুলিশ এবং মৎস্য বিভাগের লোকের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপের পাশাপাশি নৌকায় থাকা লাঠির মাথায় মশাল সদৃশ্যের কিছুটা একটা আমাদের বোট লক্ষ্য করে ছুড়ে মারে। এতে আমাদের মাঝি ও শ্রমিকসহ কয়েকজন আহত হয়। পরে নৌ-পুলিশ তাড়া করলে ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত পালিয়ে যায় জেলেরা।
হিজলা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘হামলায় মৎস্য বিভাগ ও পুলিশের কেউ গুরুতর আহত হয়নি। তবে এ ঘটনায় আটক ১২ জনসহ মোট ২২ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। আটক ১২ জনকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হিজলা উপজেলাধীন মেঘনা নদীর গৌরবদী ইউনিয়নের জানপুর, খালিশপুর এবং মেঘনা নদীর ইলিশের অভয়াশ্রম সবুজ বায়া অংশে সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নিয়মিত ইলিশ নিধন চলছে। এসব এলাকায় ইলিশ শিকারের সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা জড়িত। যে কারণে প্রশাসন অভিযানে গেলেই হামলার শিকার হতে হয়। চলতি বছরের গত ১০ মার্চ সন্ধ্যায় একইভাবে জেলেদের হামলার শিকার হন নৌ পুলিশের সদস্যরা। এ সময় আট রাউন্ড ফাঁকা গুলিও করে পুলিশ। হামলায় ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জসহ ১৬ জন আহত হয়।
অপরদিকে বরিশাল জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানিয়েছে, ‘হিজলা ছাড়াও ইতোপূর্বে গত ১৮ অক্টোবর রাতে মুলাদী উপজেলার মৃধারহাট, ভেদুরিয়া, আবুপুর, গোসাইরহাট এলাকায় নদীতে অভিযান পরিচালনা করে উপজেলা মৎস্য অফিস। এ সময় আভিযানিক দলের ওপর টেঁটা হামলা চালায় অসাধু জেলেরা। তবে এ ঘটনায় কেউ আহত হয়নি। তার আগে ১৪ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টায় তেঁতুলিয়া নদীতে অভিযানে গিয়ে হামলার শিকার হন ভ্রাম্যমাণ আদালত, নৌ পুলিশ ও মৎস্য বিভাগের আভিযানিক টিম। প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ জেলে সঙ্গবদ্ধভাবে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালিয়ে ছিনিয়ে নেয় জব্দ করা ১২টি নৌকা ও ১০ হাজার মিটার জাল। এ ঘটনায় ওইদিনই থানায় ১৫০ জনের নামে নিয়মিত মামলা হয়েছে।
তা ছাড়া একই দিন বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সন্ধ্যা নদীতে অভিযানে গিয়ে অসাধু জেলেদের হামলার শিকার হয় উপজেলা মৎস্য অভিযানের অভিযানিক টিম। হামলায় অতুল জোমাদ্দার নামের এক মৎস্য কর্মকর্তা আহত হন। এ ঘটনায় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হয়েছে।
মন্তব্য করুন