বগুড়ার শেরপুরে জামুর ইসলামিয়া সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল মান্নানকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে (শজিমেক) ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২২ জুন) সকালে থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
আহত অধ্যক্ষের ছেলে আব্দুল হক বাদী হয়ে সাতজনের নাম উল্লেখ করাসহ অজ্ঞাতনামা আরও ছয়জনকে অভিযুক্ত করে মামলাটি দায়ের করেন।
এর আগে মঙ্গলবার (২০ জুন) রাত অনুমান সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের টুনিপাড়া নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। সন্ত্রাসী হামলায় আহত আব্দুল মান্নান উপজেলার একই ইউনিয়নের জামুর গ্রামের মৃত ওলি মাহমুদের ছেলে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান জানান, মাদ্রাসার জলাশয় জোরপূর্বক দখলে নিতে স্থানীয় একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ মরিয়া হয়ে ওঠে। এজন্য একাধিকবার তাকে হুমকি-ধমকিও দেয় তারা। তাই বিষয়টি লিখিতভাবে জানাতে মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে যান। পরে ইউএনওর পরামর্শে থানাতেও অভিযোগ করেন। এ সময় তার সঙ্গে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোশারফ হোসেনও ছিলেন। এসব কাজ শেষে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি যাচ্ছিলেন তারা। পথে টুনিপাড়া নামক স্থানে পৌঁছালে মোটরসাইকেলটির গতিরোধ করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় মোটরসাইকেলের পেছনে থাকা মাদ্রাসার সভাপতি দৌঁড়ে আত্মরক্ষা করেন। কিন্তু চারপাশ থেকে তাকে ঘিরে ধরে দুর্বৃত্তরা। এমনকি লোহার রড দিয়ে উপর্যুপরি পেটাতে থাকে। সেইসঙ্গে তার শরীরের একাধিক স্থানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। একপর্যায়ে মৃত ভেবে ফেলে রেখে চলে যায় তারা। কিছু সময় পর জ্ঞান ফিরে এলে চিৎকার করতে থাকি। পরে আশপাশের লোকজন এসে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে বগুড়ায় শজিমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এই হামলার ঘটনায় ১৫-২০ জন সশস্ত্র লোকজন অংশ নেয় বলে দাবি করেন ভুক্তভোগী মাওলানা আব্দুল মান্নান।
হাসপাতালের চিকিৎসক জানান, মাদ্রাসা অধ্যক্ষের দুটি হাত ও একটি পা ভেঙে গেছে। এ ছাড়া শরীরের একাধিক স্থানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তিনি বর্তমানে শঙ্কামুক্ত হলেও তাকে দীর্ঘসময় চিকিৎসাধীন থাকতে হবে বলে জানান।
জানতে চাইলে শেরপুর থানার ওসি বাবু কুমার সাহা মামলার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঘটনাটি গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেইসঙ্গে ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
এদিকে মাদ্রাসা অধ্যক্ষের ওপর সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল হাই বারী বলেন, এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাই এ হত্যাচেষ্টার ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার জন্য জোর দাবি করেন। অন্যথায় মাদ্রাসা শিক্ষক সমাজ বসে থাকবে না। আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
মন্তব্য করুন