জামালপুরের বকশীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রারের অপসারণের দাবিতে কর্মবিরতির কর্মসূচি পালন করছেন দলিল লেখকরা। গত ১২ নভেম্বর থেকে তারা এ কর্মসূচি পালন করছেন। সাব-রেজিস্ট্রারের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দলিল লেখকরা। এদিকে সাব-রেজিস্ট্রার ও দলিল লেখকদের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন জমির দাতা-গ্রহীতারা।
বকশীগঞ্জ দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ফিরোজ মিয়া বলেন, চলতি বছরের ১৫ অক্টোরব বকশীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করেন আবদুর রহমান মুহাম্মদ তামীম। এর আগে তিনি লক্ষীপুর জেলার রামগতি সাব-রেজিস্ট্রার ছিলেন। যোগদানের পর দলিল লেখকদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
ফিরোজ মিয়া আরও বলেন, বৈঠকে সাব-রেজিস্ট্রার দলিল লেখকদের উদ্দেশ্যে বলেন আপনারা আমাকে সহযোগিতা করবেন, আমি আপনাদের পাশে থাকব। এ সময় দলিল প্রতি বাড়তি সাড়ে ৫ হাজার টাকা চান তিনি। বাড়তি টাকা না দিলে একটা দলিলও পাস হবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়। তাৎক্ষণিক দলিল লেখকরা বাড়তি টাকার বিষয়ে আপত্তি জানালে সনদ বাতিলের হুমকিও দেন সাব-রেজিস্ট্রার। সনদ হারানোর ভয়ে তাৎক্ষণিক দলিল লেখকরা আর কিছু বলার সাহস করেনি। ফলে বাড়তি টাকা দিয়েই দলিল করতে বাধ্য হয় দলিল লেখকরা। এতে জমি রেজিস্ট্রি করতে আসা দাতা গ্রহীতারা দারুণভাবে ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছিলেন। এই নিয়ে দলিল লেখকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার দলিল প্রতি বাড়তি টাকা দিতে পারবেন না বলে সাব-রেজিস্ট্রারকে জানান দলিল লেখকরা। এতেই দারুণভাবে ক্ষিপ্ত হন তিনি। বনিবনা না হওয়ায় দলিলের প্রতি পাতার জন্য ১৫ টাকা দিতে হবে জানিয়ে দেওয়া হয়। এসব নিয়ে সাব-রেজিস্ট্রার ও দলিল লেখকদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এতে তার অপসারণের এক দফা দাবিতে কর্মবিরতি ঘোষণা দেন দলিল লেখকরা।
বকশীগঞ্জ দলিল লেখক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন হিলারী বলেন, বকশীগঞ্জে যোগদানের পরেই দলিল প্রতি বাড়তি অর্থ দাবি করেন সাব-রেজিস্ট্রার। তার দাবি না মানায় কোনো কারণ ছাড়াই সনদপ্রাপ্ত দলিল লেখকদের সঙ্গে অসদাচরণ, সনদ বাতিলের হুমকি, দলিলের দাতা গ্রহীতাদের নানাভাবে হয়রানি ও তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে আসছেন তিনি। এ কারণেই সাব-রেজিস্ট্রারের অপসারণের এক দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছি। তাকে অপসারণ না করা পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।
মেরুরচর গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঢাকার একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করে কষ্ট করে এলাকায় ৫ শতক জমি কিনেছি। জমি রেজিস্ট্রি নিতে দুই দিনের ছুটি নিয়ে বাড়িতে এসেছিলেন। কর্মবিরতির কারণে দলিল করতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন। পুনরায় আবার ছুটি নিয়ে আসতে হবে বলে আমি চরম হতাশ।
এ ব্যাপারে সাব-রেজিস্ট্রার আবদুর রহমান মুহাম্মদ তামীম বলেন, আমার নাম ভাঙিয়ে দলিল লেখকরা জমি রেজিস্ট্রি করতে আসা দাতা ও গ্রহীতাদের কাছে বাড়তি টাকা নেয় বলে জানতে পারি। ঠিক তখনই আমি দুর্নীতি বন্ধের ঘোষণা দেই। এতেই দলিল লেখকরা আমার প্রতি মনোক্ষুণ্ন হন। দলিল লেখকরা অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও কর্মবিরতি করছেন। অন্যায়ের সঙ্গে আপস না করে আমি আমার নীতিতে অটল থাকব।
মন্তব্য করুন