আতাউর রহমান, ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:৫৩ এএম
অনলাইন সংস্করণ

বিলুপ্তির পথে ঔষধি উদ্ভিদ থানকুনি

ঔষধি উদ্ভিদ থানকুনি। ছবি : কালবেলা
ঔষধি উদ্ভিদ থানকুনি। ছবি : কালবেলা

প্রকৃতির সৃষ্টি নানা উদ্ভিদ ও গাছেই আছে বিভিন্ন রোগের ওষুধ। সেই আদিকাল থেকেই মানুষ এসব ভেষজ উদ্ভিদ ও গাছ ব্যবহার করে সুস্থ হয়েছেন নানা অসুখবিসুখ থেকে। এসব ঔষধি উদ্ভিদের মধ্যে ঔষধি গুণে ভরা থানকুনি পাতা মানবদেহের নানা ধরনের রোগে ব্যবহৃত হয়ে আসছে প্রাচীনকাল থেকেই। একটা সময় থানকুনি পাতার খুব কদর ছিল। বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠরা এই পাতার খুব গুরুত্ব দিতেন। শরীর সুস্থ রাখতে এই পাতার জুড়ি নেই। নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে এর উপকার বলে শেষ করা যাবে না। অথচ এই আধুনিক চিকিৎসার সময়ে এসে অবহেলায় জর্জড়িত হয়ে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে ক্রমে ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে ঔষধি উদ্ভিদ থানকুনি। এটিকে বাণিজ্যিক উদ্দেশে চাষের আওতায় আনার পরামর্শ স্থানীয় সচেতন মহলের।

ইউনানি চিকিৎসকরা বলছেন, থানকুনি পাতার রস খুবই উপকারী। তবে মধুর সঙ্গে থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেলে কাশি এবং শ্বাসযন্ত্রের অন্যান্য অসুখ সারাতে সাহায্য করে। তুলসি ও গোল মরিচ দিয়ে থানকুনি পাতা খেলে তা ঠান্ডা এবং জ্বরও নিরাময় করে। গলাব্যথা এবং কাশি নিরাময়ের জন্য, থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে সামান্য চিনি মিশিয়ে পান করুন। নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য থানকুনি পাতা খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কোনোভাবে চোট পেলে কিংবা কেটে গেলে দ্রুত রক্তপাত বন্ধ করতে থানকুনি পাতার কোনও জুড়ি নেই। থানকুনি পাতা বেটে কাটা জায়গায় লাগালে ব্যথা কম হবে আর রক্ত পড়াও বন্ধ হয়ে যাবে। অনেকের থ্রম্বোসিসের সমস্যা থাকে।

এ ছাড়াও অনেকের দেহেই অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে রক্তপ্রবাহে সমস্যা হয়। থানকুনি পাতার রস খেলে রক্ত শুদ্ধ থাকে। ফলে শরীরের প্রতি কোশে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছে যায়। ফলে অনেক সমস্যার উপশম হয়। হাত ফুলে যাওয়া, পা ফুলে যাওয়া এসব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। থানকুনি পাতার মধ্যে থাকে নানা রকম খনিজ উপাদান, যা তাড়াতাড়ি রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। যে কারণে অনেক জটিল রোগ থেকে খুব দ্রুত উপকার পাওয়া যায়। আমাশয় থেকে আলসার সেরে যায় এই পাতার গুণেই। আর নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে। ক্রনিক আমাশয়ের ক্ষেত্রে খুবই ভালো থানকুনি পাতা।

মানসিক সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য খুব ভালো থানকুনি পাতার রস। থানকুনি স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে মানসিক চাপ আর অস্থিরতা দুই কমে। এর ফলে অ্যাংজাইটির আশঙ্কাও কমে যায়। মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়া শুরু করলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পেন্টাসাক্লিক ট্রিটারপেনস নামের একটি উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যে কারণে ব্রেনসেল ভালোভাবে কাজ করতে পারে। স্মৃতিশক্তির উন্নতি তো ঘটেই, সেই সঙ্গে বুদ্ধির ধারও বাড়ে চোখে পড়ার মতো।

স্থানীয় বাসিন্দা জুনাব আলী (৬৯) বলেন, ছোট বেলায় দেখেছি প্রায়ই থানকুনি পাতা দিয়ে ভর্তা, শাক ও তরকারি রান্না করা হতো। এতে আমাদের অসুখবিসুখ তেমন হতো না। সে সময় পথের ধারে, বাড়ির আঙিনায় ও জমিতে অহরহ থানকুনি গাছ দেখা যেতো। গ্রামীণ জনপদে এখন আর সে রকমভাবে এই ঔষধি গাছটি দেখা যায় না।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউনানি চিকিৎসক ডা. সোহেল রানা কালবেলাকে বলেন, আমাদের দেশ থেকে ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে ভেষজ এ উদ্ভিদটি। এটা পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ। বিলুপ্তির পথে যেসব ভেষজ উদ্ভিদ ও গাছ সেগুলো সংরক্ষণ জরুরি হয়ে পড়েছে। এই সংরক্ষণের দায়িত্বটা আপামর বাঙালির। এই সংরক্ষণের উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাবে এবং মানুষের চিকিৎসায় এসব গাছ ও উদ্ভিদ কাজে আসবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে রাজধানীতে স্বস্তি

একাদশে ভর্তি / নটর ডেমে আবেদন ২৫ মে শুরু হয়ে চলবে ৩০ মে পর্যন্ত

বাংলাদেশি সমর্থকদের বিশ্বকাপ উপভোগে বাধা ‘টাইম জোন’!

ছুটির দিনে ঢাকার বাতাস কেমন?

সাতক্ষীরায় ধান বোঝায় ট্রাক উলটে নিহত ২

ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে কালের সাক্ষী ‘অভিশপ্ত নীলকুঠি’

দুপুর ১টার মধ্যে ৮০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস

রিকশাচালকের পা ভেঙে দেওয়া সেই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার

ধানের বাম্পার ফলনের পরও হতাশ কৃষক

হোয়াটসঅ্যাপে প্রতারণা এড়াতে যা করবেন

১০

বাঁশ-দড়ি বেয়ে মসজিদে যান ১১৫ বছর বয়সী অন্ধ মোয়াজ্জিন

১১

আফগানিস্তানে বন্দুকধারীদের গুলিতে ৩ স্প্যানিশ পর্যটকসহ নিহত ৪

১২

সৌদিতে বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু

১৩

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে স্নাতক পাসে চাকরি

১৪

মেসির সেই ন্যাপকিন কত দামে বিক্রি?

১৫

হাইকোর্টের আদেশ সত্ত্বেও যুদ্ধাপরাধীর নামে থাকা স্কুলের নাম বহাল

১৬

ব্র্যাক ব্যাংকে অ্যাসোসিয়েট ম্যানেজার পদে নিয়োগ

১৭

আজ ঢাকার যেসব এলাকায় গ্যাস কম থাকবে

১৮

শনিবার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

১৯

কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

২০
X