দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-১ আসনে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ৯ জন প্রার্থী। হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, এই আসনে সম্পদে এগিয়ে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। তার পেশা ব্যবসা (মেসার্স পায়েল ট্রেড করপোরেশন)। তিনবারের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের গেল প্রায় ১৫ বছরে নগদ টাকাসহ সম্পদ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।
২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মোয়াজ্জেম হোসেন রতন তার নির্বাচনী হলফনামায় স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে সম্পদ দেখিয়েছিলেন ৪ কোটি ৫ লাখ ৫৯৩ টাকার। এবার তার স্থাবর-অস্থাবর মিলে মোট ৯ কোটি ৩১ লাখ ৬৫ হাজার ১২৮ টাকার সম্পদ দেখিয়েছেন।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় মোয়াজ্জেম হোসেন রতন পেশা উল্লেখ করেছিলেন কনসালটেন্সি ব্যবসা। সেই সময় কৃষি খাত থেকে তার বাৎসরিক আয় ছিল ৫ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ৫ লাখ ৪২ হাজার ৫৪৬ টাকা, পেশা থেকে ২ কোটি ১০ লাখ ৮৮ হাজার ২৬০ টাকা এবং অন্যান্য ৫৪ হাজার ৪০ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ছিল নগদ ২২ লাখ ৬৬ হাজার ৪৩০ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ১ হাজার ৩০৩ টাকা, সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানত (১৩ লাখ ৬৬ হাজার ও ১৯ হাজার ৪২৫), দুটি কার ও একটি জিপ ৬৯ লাখ ৫০ হাজার ৩১ টাকা, স্বর্ণালংকার ৪০ তোলা, ইলেকট্রনিক্সসামগ্রী ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, আসবাবপত্র ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও অন্যান্য ৪ লাখ ৬৭ হাজার ৩০০ টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ৩.৯৩ একর কৃষি জমি ১ লাখ ১৭ হাজার ৫০ টাকা, অকৃষি জমি ১.১৫ একর ৩৬ লাখ ৪৯ হাজার ৪৫৪ টাকা, স্ত্রী/স্বামীর নামে ১.০৭ একর ৩৫ লাখ ২৩ হাজার ৭৫৪ টাকা, যৌথ মালিকানায় ২.১৪ একর মূল্য ৩০ হাজার টাকা ও ১৬ শতক ২০ হাজার টাকা।
এদিকে এবারের নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী মোয়াজ্জেম হোসেন রতন কৃষি খাত থেকে বাৎসরিক ১১ লাখ ৯০ হাজার টাকা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯৫৬ টাকা, পেশা (শিক্ষকতা, চিকিৎসা, আইন, পরামর্শ ইত্যাদি) সংসদ সদস্য হিসেবে প্রাপ্ত অর্জিত ভাতা বাবদ ২৫ লাখ ৫৩ হাজার ৪২৭ টাকা, অন্যান্য ১ কোটি ১২ লাখ ৮৩ হাজার ৯২৪ টাকা আয় করেন। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ টাকা ২ কোটি ৩৬ লাখ ৮৪ হাজার ৬৬৯ টাকা, স্ত্রী/স্বামীর নামে ৬৪ লাখ ৭৮ হাজার ৮২৬ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ১০ লাখ ৮ হাজার ৬৩, বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার ৩০ লাখ টাকা, টয়োটা ল্যান্ড ক্রজার স্টেশন ওয়াগন জেডএক্সের মূল্য ৮১ লাখ ৭৯ হাজার, ৩৭২ টাকা, টয়োটা ৪ হাজার ৪৬১ কার মূল্য ১৮ লাখ টাকা, স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু নিজ নামে ৪০ তোলা, স্ত্রী/স্বামীর নামে ৬০ ভরি, ইলেকট্রনিক্সসামগ্রী নিজ নামে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, স্ত্রী/স্বামীর নামে ১ লাখ টাকা, আসবাবপত্রের মূল্য নিজ নামে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, স্ত্রী/স্বামীর নামে ১ লাখ টাকা, অন্যান্য ২ লাখ ২০ হাজার টাকা।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে কৃষি জমি ১,১১৪.১০ শতাংশ মূল্য ৪৫ লাখ ৯৮ হাজার ৩৯৩ টাকা, স্ত্রী ও স্বামীর নামে ১৪০.০০ শতাংশ মূল্য ৩৫ লাখ ৫১ হাজার ২৫৪ টাকা, নির্ভরশীলদের নামে ১৬১.৬০ শতাংশ মূল্য ১০ লাখ ২৬ হাজার টাকা। অকৃষি জমি ০.৮২৫ শতাংশ মূল্য ১১ লাখ ১৯ হাজার ২৫০ টাকা, ১টি দালান ও ৩টি আধাপাকা ঘর ১ কোটি ২৬ লাখ ৩২ হাজার ৯৯৪ টাকা, ১টি অ্যাপার্টমেন্ট মূল্য ৭২ লাখ ৭১ হাজার টাকা। অন্যান্য- পায়েল টেক্স লি. ১০ লাখ টাকা, হাওর বাংলা গ্রুপ লি. ৩ লাখ টাকা, হাওর বাংলা ফিসারিজ অ্যান্ড এগ্রো কমপ্লেক্স লি. ৩ লাখ টাকা, হাওর বাংলা-কোরিয়া গ্রিন এনার্জি লি. ৩ লাখ ৯৯ হাজার টাকা, পিআর এস ইমপোর্ট এক্সপোর্ট লি. ৬ লাখ টাকা এর শেয়ার হোল্ডার। স্ত্রী/স্বামীর নামে পায়েল টেক্স লি. ২ লাখ টাকা, হাওর বাংলা গ্রুপ লি. ১ লাখ টাকা।
সুনামগঞ্জ-১ আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী অন্যান্য প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রনজিত চন্দ্র সরকার পেশায় একজন আইনজীবী। বাৎসরিক তিনি আয় করেন ৮ লাখ ৭০ হাজার ৪ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ টাকা ১৫ লাখ ৩৪ হাজার ৭৩ টাকা, পোস্টাল, সেভিং সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ (৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯০২ ও ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা), বাস, ট্রাক, মরগাড়ি, মোটরসাইকেল ৪৫ হাজার টাকা, স্ত্রী/স্বামীর নামে স্বর্ণালংকার ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ইলেকট্রনিক্সসামগ্রী ৮০ হাজার টাকা, আসবাবপত্র ১ লাখ টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে- অকৃষি জমি ৫৭.৯৩ শতক জমির মূল্য ১ লাখ টাকা।
বিকল্পধারা বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী মো. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী পেশায় একজন চিকিৎসক। কৃষিখাত থেকে বাৎসরিক আয় ১ লাখ ১২ হাজার টাকা, বাড়ি অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান বা অন্যান্য ভাড়া ৬ লাখ ২১ হাজার ৬০০ টাকা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত ১২ হাজার ৭৭৩ টাকা, পেশা (শিক্ষকতা, চিকিৎসা, আইন, পরামর্শ ইত্যাদি) থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে- নগদ টাকা ১ লাখ ৫৭ হাজার ২৩২ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৫ লাখ ৫৭ হাজার ১৫৮ টাকা, স্ত্রী/স্বামীর নামে স্বর্ণালংকার ৯০ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে কৃষি জমি ৫৬৫ শতাংশ, অকৃষি জমি ৪.২৪ শতাংশ।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নবঞ্চিত ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, জাতীয় শ্রমিক লীগ সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সাবেক সভাপতি সেলিম আহমদের পেশা ব্যবসা। কৃষিখাত থেকে বাৎসরিক আয় ৫ লাখ টাকা, ব্যবসা থেকে ১৪ লাখ ৫৪ হাজার ১২০ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে- নগদ ৪ কোটি ৪৩ লক্ষ ৯০০ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৩ কোটি ৯ লাখ ৬৫ হাজার ২৮০ টাকা, ২টি মোটর গাড়ি ১ কোটি ৫৮ লাখ, স্বর্ণালংকার ৪ লাখ টাকা, ইলেকট্রনিক্সসামগ্রী ২ লাখ টাকা, আসবাবপত্র ২ লাখ টাকা, অন্যান্য ৩৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫৭০ টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে- কৃষি জমি ৮.১১৫ একর, মূল্য ৫৯ লাখ ৭৬ হাজার ১০১ টাকা, অকৃষি জমি ০.২৭৬৬ একর ১ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, ১টি দালান ৮১ লাখ ৯২ হাজার ৩১০ টাকা। সুনামগঞ্জ-১ আসনে তৃণমূল বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. আশরাফ আলী হলফনামায় নিজের পেশা হিসেবে আড়ত ব্যবসা উল্লেখ করেছেন। কৃষি খাত থেকে বাৎসরিক তিনি আয় করেন ২ লাখ ব্যবসা থেকে ১০ লাখ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ টাকা ও ব্যাংকে ১৫ লাখ টাকা। স্বর্ণালংকার ১০ লাখ টাকা, আসবাবপত্রের মূল্য ২ লাখ টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ০.২৬ একর কৃষি জমি।
বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মনোনীত প্রার্থী হারিছ মিয়ার পেশা কৃষি ও ব্যবসা। ব্যবসা থেকে বাৎসরিক তিনি ৩ লাখ টাকা আয় করেন। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ টাকা ৬ লাখ ৬৭ হাজার ৭৮৬ টাকা, স্বর্ণালংকার ১ লাখ টাকা, ইলেকট্রনিক্সসামগ্রী ১ লাখ টাকা, আসবাবপত্র ১ লাখ টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ৫ বিঘা কৃষি জমি, মূল্য ২৫ হাজার টাকা। ১টি দালান ১ লাখ টাকা।
গণফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী জাহানুর রশীদ মর্ডান পল্লী এগ্রিকালচার ফার্ম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। কৃষি খাত থেকে তিনি বাৎসরিক ২০ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় করেন। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৫ লাখ ৯৬ হাজার, বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানি শেয়ার ৭ হাজার, ইলেকট্রনিক্সসামগ্রী ৩০ হাজার টাকা, আসবাবপত্র ২০ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে কৃষি জমি ২২ বিঘা। যার মূল্য ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।
জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী আব্দুল মান্নান তালুকদারের পেশা কৃষি। কৃষি খাত থেকে বছরে ৯০ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ২ লাখ টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা আয় করেন। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ১ লাখ টাকা, ১০ ভরি স্বর্ণ ১ লাখ টাকা, ইলেকট্রনিক্সসামগ্রী ৫০ হাজার টাকা, আসবাবপত্র ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে কৃষি জমি ৮ একর, দুটি দালান ২০ লাখ টাকা, ১টি বাড়ি।
মন্তব্য করুন