নাটোরের বড়াইগ্রামে অফিস কক্ষে ঢুকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুর রউফকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারীর ভাগিনা সদ্য আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া জহির উদ্দিন মিয়াজী ও উপজেলা সৈনিক লীগের সভাপতি রুবেল বালিসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে নাটোরের বড়াইগ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর অফিস চত্বরের সিসিটিভির ধারণকৃত ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্ত করা হচ্ছে। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রুবেল বালি ও জহির উদ্দিনের নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৩৫ জন যুবক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঢুকে দরজা বন্ধ করে আব্দুর রউফকে লাঞ্ছিত করে। এ সময় অভিযুক্তকরা শিক্ষা কর্মকর্তাকে কিল-ঘুষি ও চড়-থাপ্পড় মেরে লাঞ্ছিত ও অফিসের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। এর আগে বুধবার একইভাবে এক মাদ্রাসা অধ্যক্ষকেও লাঞ্ছিত করেছে তারা।
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রউফ বলেন, আমি অফিসে বসে দাপ্তরিক কাজ করছিলাম। এ সময় ১৪ থেকে ১৫ জন যুবক হঠাৎ আমার রুমে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দেয়। আমি তাদের আসার কারণ জানতে চাইলে রুবেল বালি নামে একজন এসে আমার ডান হাত ধরে বলতে থাকেন, এই হাতটা কেটে নেওয়ার হুকুম আছে। অপরজন বলে, মেশিন বের কর, একে শেষ করে দে। তারা আমাকে চেয়ার থেকে তুলে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এবং অফিসের টেবিল-চেয়ার ও ফাইলপত্র তছনছ করে। এ সময় আরও ১৫-২০ জন বাইরে দাঁড়িয়ে দরজা আটকে রাখে। ফলে অন্য কেউ আমার রুমে প্রবেশ করতে পারছিলেন না। আমি প্রাণ ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি।
উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মনিরুজ্জামান বলেন, আমি নিচতলায় বসি। স্যারকে রুমে আটকে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে দ্রুত গিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করি। এ সময় একজন বের হয়ে এসে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। পরে বিষয়টি আমি ইউএনও স্যারকে জানাই। খবর পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বোরহান উদ্দিন মিঠু ও বনপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ সিরাজুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। এ ছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) আতাউর রহমান ও বনপাড়া পৌর মেয়র কে এম জাকির হোসেন ইউএনও দপ্তরে যান। তারা ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানান। অপরদিকে, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তর প্রধানরাও ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এভাবে অফিসের ভেতরে বাইরের লোকদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়াটা খুবই দুঃখজনক। এমন হলে এখানে অফিসাররা কাজ করবে কীভাবে।
ইউএনও আবু রাসেল বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করা হচ্ছে। অভিযুক্তদের শনাক্ত করে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) আতাউর রহমান আতা বলেন, এই প্রথম উপজেলা পরিষদ ভবনে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটল। এটি খুবই অন্যায় করা হয়েছে।
সংসদ সদস্য ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমার নাম ভাঙিয়ে কেউ অপকর্ম করলে তার দায়ভার আমি নেব না। অপরাধী যেই হোক পুলিশ তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। উল্লেখ্য, উপজেলার ইসলামপুর গুনাইহাটি ফাজিল মাদ্রাসায় নিয়োগকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন ধরে উত্তেজনা চলছে। গত বুধবার অভিযুক্তরা ওই মাদ্রাসায় গিয়ে অধ্যক্ষ মাওলানা ওসমান গণিকে তার দপ্তরে লাঞ্ছিত করে নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।
মন্তব্য করুন