নাটোরের নলডাঙ্গায় রেললাইনের প্রচুর কংক্রিট স্লিপার ক্ষতিগ্রস্ত ও শত শত ক্লিপ না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে ট্রেন। স্লিপারগুলো দ্রুত মেরামত ও ক্লিপ সংযোজন করা না হলে যে কোনো সময়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন রেলে কতব্যরত আনসার, রেলওয়ে কর্মচারী ও স্থানীয়রা।
রাজধানীসহ এ রেললাইন দিয়ে প্রতিদিন আপ-ডাউন মেইল, আন্তঃনগর ও ঢাকাগামীসহ ৩৪টির অধিক ট্রেন যাতায়াত করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নলডাঙ্গা, মাধনগর ও বাসুদেবপুরসহ বিভিন্ন স্থানে প্রচুর স্লিপার ভেঙ্গে গেছে, স্লিপারের ঢালাই ভেঙে ভেতর থেকে তার বের হয়ে গেছে। শত শত ক্লিপ সংযোজন নেই, বিভিন্ন স্থানে রেলের জয়েন্টে নাটবল্টু ঢিলা হয়ে আছে, রেল গেটের বেহাল দশা দেখা গেছে।
রেলওয়ের কর্মচারীরা মেরামতের কাজ করলেও অকেজো স্লিপার দিয়েই দায়সারা কাজ করছেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে যে কোনো সময় বড় রকমের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন রেলে কতব্যরত আনসার, রেলওয়ে কর্মচারী ও স্থানীয়রা।
এদিকে রেলপথে নাশকতা রোধে নাটোরসহ বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্ব পালন করেছেন আনসার সদস্যরা। তিন ভাগে ভাগ হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন তারা। আনসার সদস্যরা নাটোর রেলপথের বিভিন্ন ব্রিজ ও রেল স্টেশনে টহলের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং রেলে টহলের সময় বিভিন্ন জয়েন্ট নিবিরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং নিজেরাই নাটগুলো ঠিক করে দিচ্ছেন, বলে জানান কর্তব্যরত আনসার সদস্যরা।
ইতোমধ্যে, নাটোর রেলস্টেশনে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণ করেছে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও রেলওয়ে বিভাগ। এ সময় নাটোরের জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা, পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম ও বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রেলওয়ের বিভাগের মিস্ত্রি, মাহমুদ আলী জানান, যেখানে স্লিপার বেশি ভাঙা, সেখানে অকেজো কিছু স্লিপার দিয়ে আপাতত কাজ করা হচ্ছে।
মাধনগর রেল গেটের গেট কিপার হাসানুল ফরহাদ বলেন, গেটের এক পাশের বার ভালো, অন্য পাশের বার ভাঙা। বারবার অভিযোগ দিয়েও কোনো কাজ হয়নি।
মাধনগর স্টেশন মাস্টার মো. মমিন ইসলাম জানান, এখানে মালবাহী ট্রেন ছাড়াও ৩৪টি ট্রেন যাতায়াত করে। গেটের বারের জন্য অভিযোগ দিলেও কাজ হয়নি, যার ফলে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
নলডাঙ্গা উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকতা শাহ্ আলম জানান, উপজেলার রেলের বিভিন্ন স্থানে অনেক স্লিপার ভাঙ্গা, ক্লিপ নেই, নাট থাকলেও ঢিলা, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সব তথ্য আমরা সংগ্রহ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করেছি। তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
নাটোরের পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, সব ধরনের নাশকতা রোধ ও রেলপথের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে একটি মালবাহী ট্রেন নলডাঙ্গা উপজেলার বাসুদেবপুর এলাকা দিয়ে নাটোরের দিকে অতিক্রম করার সময় পাঙ্গাল সেতুর কাছে বিকট শব্দ হয়। ট্রেনটি নির্বিঘে ওই স্থান পার হয়। পরে স্থানীয়রা গিয়ে দেখেন পাঙ্গাল সেতুর কাছে রেললাইনের জয়েন্টে কিছু অংশ ভাঙা। নাশকতা ঘটাতে রেললাইন কাটার চেষ্টা করতে পারে বলে ধারণা করছে স্থানীয়রা।
এ সময় রাজশাহী থেকে পার্বতীপুরগামী তিতুমীর এক্সপ্রেস আসতে দেখতে পেয়ে লাল কাপড় দেখিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী ও আনসার সদস্যরা ট্রেনটি থামিয়ে দেন। এতে অল্পের জন্য বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় ট্রেনটি।
এ ঘটনায় ট্রেন চলাচল সাময়িক বন্ধ থাকলেও দেড় ঘণ্টা পর রেললাইন মেরামত করার পর তা ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ ঘটনায় রেলওয়ে কর্মকর্তা, নলডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
রেলওয়ের বিভাগের ওয়েম্যান সারোয়ার হোসেন বলেন, এটি কোনো নাশকতা নয়। স্বাভাবিকভাবেই রেললাইনের কোনো কোনো জয়েন্টে মাঝে মধ্যে প্রচণ্ড শীতে এ রকম ভেঙে যায়। পরে রেললাইনের সেই অংশ মেরামত করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
মন্তব্য করুন