লাল-সবুজের পতাকা হাতে ক্রেতার আশায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছেন লাল মিয়া। বিজয়ের মাস উপলক্ষে গত কয়েক দিন ধরে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার পৌর এলাকা ও তার আশপাশে সড়কের পাশে এভাবেই দেখা মিলছে তার। এভাবে দুই যুগ ধরে পতাকা বিক্রি করেই চলছে তার সংসার। বিভিন্ন জাতীয় দিবস উপলক্ষে পতাকা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি।
সবুজবেষ্টিত লাল বৃত্তে লাল মিয়া নামটি যেন মিশে গেছে তার পেশার সঙ্গে। নামটি কে রেখেছেন জানতে চাইলেই এক গাল হেসে জবাব দিলেন মা-বাবাই শখ করে রেখেছেন।
লাল মিয়ার বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। পাঁচ মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। তিনি মাটিরাঙ্গা বাজারের মূল সড়কের পাশে অলিতে-গলিতে, স্কুল ও কলেজের সামনে পতাকা বিক্রি করেন।
শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) দেখা হয় পঞ্চান্ন বছর বয়সী লাল মিয়ার সঙ্গে। দীর্ঘ আলাপচারিতায় বেশ সাবলীলভাবেই নিজের জীবন কাহিনি তুলে ধরেন তিনি। নিজেকে সুখী মানুষ দাবি করে তিনি বলেন, এ পেশাটা আমি পছন্দ করি। পেশাকে বুকে ধারণ করি বলেই বিক্রি ভালো হয়। তা দিয়ে চলে সংসার। দেশের জাতীয় দিবস ছাড়াও বিশ্বকাপ ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার সময় বিভিন্ন এলাকায় পতাকা বিক্রি করে আসছেন তিনি।
লাল মিয়া জানান, বড় আকারের একটি পতাকা ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, মাঝারি আকারের পতাকা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, ছোট আকারের পতাকা আকারভেদে ২০ টাকা থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। এ ছাড়া ছোট আকারের পতাকা ১০ টাকা এবং হেড বেল্ট ও হ্যান্ড বেল্ট প্রতিটি ১০ টাকা দরে বিক্রি করেন তিনি। দিনে দুই হাজার টাকার মতো বিক্রি হয়। এর অর্ধেকই লাভ বলে তিনি জানান।
পতাকা কিনতে আসা মাটিরাঙ্গায় ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী মো. আল-অমিন জানান, ছোট ভাইয়ের আবদার বিজয় দিবসে পতাকা কিনে দেবার। তাই আবদার পূরণ করতে এক জোড়া পতাকা কিনলাম।
পতাকা কিনতে আসা রমজান আলী বলেন, বছরের অন্য সময় জাতীয় পতাকা কেনার প্রতি মানুষের তেমন আগ্রহ থাকে না। ভাষার মাস, স্বাধীনতার মাস ও বিজয়ের মাসকে সামনে রেখে মানুষ জাতীয় পতাকা কেনে। বিজয় দিবসের মনোগ্রামযুক্ত ফিতা কিনলাম।
মাটিরাঙ্গা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, পতাকা আমাদের বিজয়ের কথা বলে, আমাদের অস্তিত্বের কথা বলে। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে অর্জিত হয়েছে এ দেশের স্বাধীনতা, এসেছে বিজয়। তাই এই বিজয়ের মাসে লাল মিয়ার পতাকা বিক্রি করে জীবিকা অর্জনকে সাধুবাদ জানাই।
মন্তব্য করুন