

রাতের আবছা অন্ধকারে আখক্ষেতের আল ধরে হাঁটছিল এক কিশোর। হঠাৎ ক্ষেতের গভীর থেকে ভেসে এল অদ্ভুত একটি শব্দ। পর মুহূর্তেই অন্ধকার ছিঁড়ে সমস্ত শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল একটি ছায়া। গ্রামের লোকজন চিৎকার শুনে ছুটে এলো, কিন্তু ততক্ষণে সবকিছু শেষ। এই লোমহর্ষক দৃশ্যই এখন বাস্তব ভয় হয়ে তাড়া করে ফিরছে আশপাশের প্রায় সব অঞ্চলের মানুষকে।
এলাকাটিতে গত কয়েক মাস ধরে চিতাবাঘের মুখোমুখি হওয়া যেন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আশপাশের এলাকায় ঘন আখক্ষেত চিতাবাঘের লুকিয়ে থাকার জন্য সবচেয়ে আদর্শ জায়গা হয়ে উঠেছে। নভেম্বরের ৩ তারিখে ১৩ বছরের এক শিশুর মৃত্যু পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। স্থানীয়রা আশপাশের এলাকার সমস্ত রাস্তা অবরোধ করে নিরাপত্তা বাড়ানোর জোর দাবি জানিয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত মোট ৯ জনসহ গত ৫ বছরে চিতাবাঘের আক্রমণে এলাকাটিতে অন্তত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
তবে এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে স্থানীয় বন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে গ্রামবাসীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে লোহার কাঁটা লাগানো বিশেষ একধরনের কলার। গলা রক্ষা করাই যার মূল উদ্দেশ্য। ভারতের মহারাষ্ট্রের পুনের পিম্পারখেডসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে এখন অনেকেই এই কলার পরে ক্ষেতে কৃষি কাজ করতে যাচ্ছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন এলকায় বসানো হয়েছে এআই নির্ভর সয়ংক্রিয় ক্যামেরা, যা চিতাবাঘের গতিবিধির চিত্র নির্ভূল ধারণ করতে পারে। ইতোমধ্যেই ২৩৩টি গ্রামকে ঘোষণা করা হয়েছে অতি সংবেদনশীল এলাকা হিসেবে।
এদিকে দক্ষিণে কর্ণাটকে চলছে আরেক ভয়াবহ আতঙ্ক। সর্গুর ও এইচডি কোটে এলাকায় কৃষকের ওপর বাঘের আক্রমণে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পরপরই ব্যান্ডিপুর ও নাগরহোল টাইগার রিজার্ভে সব সাফারি কার্জক্রম বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। মাইসুরু অঞ্চলের পর্যটন এই সাফারির ওপরই অনেকাংশে নির্ভরশীল। এমন সিদ্ধান্তের ফলে বড় ধাক্কা খেয়েছেন স্থানীয় গাইড, গাড়িচালক থেকে শুরু করে রিসোর্ট ও হোমস্টের মালিকরা। ফলে পর্যটন খাতের সংঙ্গে সংস্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে সাফারি খুলে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। আক্রমণকারী দুটি বাঘকে ইতোমধ্যে আলাদা করে বন্দি করা হয়েছে।
মানুষ ও বন্যপ্রাণীর টানাপড়েন তাই আরও জটিল হয়ে উঠেছে দেশটিতে। একদিকে কৃষিজমি বাড়ছে, মানুষ তাদের বিচরণ এগোচ্ছে বনের দিকে, আর অন্যদিকে প্রাণীরা হিংস্র হয়ে উঠে হামলে পড়ছে মানুষের ওপর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্রমণকারীদের এখন আগের তুলনায় আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। বনের ধারে একা না যাওয়া, নির্দেশিকা পুরোপুরি মেনে চলা এবং বিপদের মুখোমুখি হলে দৌড় না দিয়ে স্থির থাকা এক্ষেত্রে খুবই জরুরি।
সব মিলিয়ে এটি ভারতের দুই রাজ্যের দুই ভিন্ন এলাকার ঘটনা হলেও তা এখন রীতিমতো আতঙ্কের পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। উত্তরে মহারাষ্ট্রের পুনে, আর দক্ষিণে কার্নাটকের ব্যান্ডিপুর ও নাগরহোল এখন কার্যত ত্রাসের রাজত্বে পরিণত হয়েছে। ফলে এখানকার মানুষের এই মুহূর্তে প্রতিটি দিন কাটছে প্রকৃতির সঙ্গে অদ্ভুত টানাপড়েনে, যেখানে ভয় আর বেঁচে থাকার লড়াই যেন চলেছে একইসঙ্গে।
মন্তব্য করুন