কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় মিষ্টি আলুতে মাঠে স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা। ভালো দামে বেশি লাভের আশায় চাষিরা আগাম জাতের মিষ্টি আলু চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সদ্য গজানো আলু চারার পরিচর্যায় ব্যস্ত কোনো কোনো চাষি। কোনো কোনো স্থানে চাষি আগাম জাতের আলু রোপণ করেছেন। আবার কেউ ধান কাটার পর আলু রোপণের জন্য জমি প্রস্তুতে ব্যস্ত।
এদিকে স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানায়, এ উপজেলায় এ মৌসুমে মিষ্টি আলুর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১০ হেক্টর। উঁচু মাটি মিষ্টি আলু চাষের জন্য খুব উপযোগী। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মাঠের পর মাঠ আগাম মিষ্টি আলু চাষে কাজ করছেন স্থানীয় কৃষকরা। মিষ্টি আলু চাষে কৃষকদের সকল প্রকার সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের অলুয়া, চন্ডিপুর, পূর্ব চন্ডিপুর, রামনগর, আসাদ নগর ও মাধবপুর ইউনিয়নের মনগোজ, নুনহাটি, কলেজপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠ থেকে বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় মিষ্টি আলুর চারা বপন। ফাল্গুন মাসের প্রথম দিকে থেকে মিষ্টি আলু মাটির নিচে পরিপক্ব হয় এবং এসব আগাম জাতের আলু তোলা শুরু হয়। চৈত্র ও বৈশাখ মাসে এখানকার মাঠে আবাদকৃত আলু তোলার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়বে মিষ্টি আলুর চাষিরা।
অলুয়া গ্রামের মিষ্টি আলু চাষি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, এ মৌসুমে ৪২ শতক জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে। গত বছর প্রতি মণ মিষ্টি আলু পাইকারি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি করছিলাম। ৪২ শতক জমিতে চারা বপন ও আলু তোলা পর্যন্ত মোট খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। এ বছর ভালো ফলন হলে লক্ষাধিক টাকা বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি।
মনোহরপুর এলাকার মিষ্টি আলুচাষি মাকসুদ আলী বলেন, এ এলাকায় এই মৌসুমে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি মিষ্টি আলু আবাদ হয়। চলিত মৌসুমে আমি ৪৫ শতক জমিতে আগাম মিষ্টি আলুর চাষ করেছি। এখন মাঝেমধ্যে নিজেই জমির পরিচর্যা করি। এবার আগাম মিষ্টি আলুর ফলন ভালো হবে আশা করছি। তবে এ আলু বিক্রি করতে কোনো কষ্ট করতে হয় না। বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে জমি থেকে আলু তোলার পর নিয়ে যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুদ রানা বলেন, মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ আছে। মিষ্টি আলু চাষে সময় লাগে কম এবং ফলনও ভালো হয়। এ বছর ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় মিষ্টি আলুর আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ১১০ হেক্টার ধরা হয়েছে। উপজেলার অনেক কৃষক আগাম মিষ্টি আলু আবাদ করেছেন। স্থানীয় জাতের পাশাপাশি উচ্চফলনশীল জাতের মিষ্টি আলুর চাষ করেছেন চাষিরা। চলতি মৌসুমে এ আলু চাষে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মিষ্টি আলুর বাম্পার ফলন আশা করছি।
তিনি বলেন, বাড়ির আনাচে-কানাচে ও পতিত জমিতে মিষ্টি আলু চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগ কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসছে।
মন্তব্য করুন