কখনো কাজ করেন শ্রমিকের সঙ্গে, আবার খাবার খান দিনমজুরের সঙ্গে, এলাকাবাসীর সঙ্গে খালে নেমে কচুরিপানা পরিষ্কার করেন, আবার লুঙ্গি-গেঞ্জি পরে কাটেন কৃষকের ধান। শুধু তাই নয়, দিনে কিংবা গভীর রাতে মানুষের বাড়ি হাঁস-মুরগি নিয়ে ঠেলে উঠতেন তিনি। বলছিলাম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আলোচিত-সমালোচিত এমপি জগলুল হায়দারের কথা। তবে এসব কিছু মানবিকতা বা জনপ্রতিনিধি হিসেবে নয় বরং লোক দেখাতে এসব করেন বলে এমন গুঞ্জন ছিল দীর্ঘদিনের।
দেখা যায়, মাটি কাটার বিরতিতে শ্রমিকদের সঙ্গে বসে আম আর কাঁচা মরিচ দিয়ে পান্তা ভাত খাওয়া, লুঙ্গি পরে নিজ জমিতে চাষাবাদ করা, শ্রমিক বেশে ছাদের ঢালাই দেওয়া, নদী ভাঙন সংস্কারের কাজে শ্রমিকদের সাথে কাজের সহযোগিতা, রমজানে বাজার খরচ করে অসহায় মানুষের বাড়িতে যাওয়া ও ভিক্ষুকের বাড়িতে ইফতার করাসহ বেশকিছু কাজ করে অনেকবার সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন এমপি জগলুল হায়দার। একজন সংসদ সদস্যের এমন সাদাসিধে জীবন নিয়ে বেশ অনেকবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন জগলুল হায়দার।
তবে, এখন অনেকটাই আড়ালে। দাপুটে এ এমপি জগলুল হঠাৎ কেন আড়ালে? বর্তমানে কোথায় আছেন তিনি। এমন সব প্রশ্নের মধ্যেই বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর ভিডিও। সাতক্ষীরা-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জগলুল হায়দার। তুমুল আলোচিত সরকারদলীয় এ এমপির খ্যাতি ছড়িয়েছে দেশের সকল প্রান্তে। তাকে চেনেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াটা মুশকিল। নানা ধরনের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে জেলা পেরিয়ে দেশের সমগ্র মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করেছেন এমপি জগলুল হায়দার।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেরিয়ে এলো আলোচিত এ এমপির কথিত মানবিকতার নাটকীয় ভিডিও। ভিডিওতে দেখা গেছে, রাতে একজন দিনমুজুরের বাড়িতে গিয়ে তার খোঁজ খবর নিচ্ছেন তিনি, আবার ওই দিনমুজুরের বাড়িতে তার অনুরোধে রাতের খাবার খাচ্ছেন তিনি। তবে এসব কিছুই ছিল নিছক শুটিং।
কথিত মানবিকতার ভিডিওতে দেখা গেছে, শুটিংয়ের প্রডিউসার হিসেবে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন অন্য একজন। তার নির্দেশনায় শোনা যায়, বাহিরের কারোর মোবাইল যদি থাকে দয়া করে বন্ধ করুন। পরে দিনমজুরকে নাটকের স্ক্রিপ্ট বোঝাতে লাগলেন এমপি জগলুল হায়দার। বোঝানো শেষে সেভাবেই অভিনয় করছেন ওই দিনমজুর ও এমপি জগলুল হায়দার।
তবে অতি সম্প্রতি রাজনৈতিসহ সকল কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে দেখা গেছে জগলুল হায়দারকে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ায় রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডে দেখা মিলছে না।
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাতক্ষীরা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক জিএম শফিউল আজম লেনিন বলেন, নির্বাচনের বাকি কয়েকদিন। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নৌকার দুই বারের এমপি হয়েও এসএস জগলুল হায়দার এখনো নৌকার পক্ষে কাজ করছেন না। তিনি এমপি হয়ে বিভিন্ন সময়ে নাটকের মতো শুটিং করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেকে স্বরগরম রাখতেন। তবে বাস্তবে সবই ছিল তার তৈরি করা নাটক।
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক ও দ্বাদশ জাতীত সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব এজাজ আহমেদ স্বপন বলেন, নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন না বর্তমান সংসদ সদস্য জগলুল হায়দার।
নাটকীয় মানবিকতার বিষয়ে তিনি বলেন, তার এ ধরনের কর্মকাণ্ডে আগে থেকেই সন্ধিহান ছিলাম আমি। তবে তার যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে তার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে এসব ঘটনা মানুষের সাথে তামাশা ছাড়া আর কিছু নয়।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে এমপি জগলুল হায়দার বলেন, আমি রেগুলার মানুষের কাছে যেতাম, সেই হিসেবে গিয়েছি, সাধারণ মানুষের সাথে তো অনেক রকম কথা বলতে হয় তাই বলেছি, খারাপ কোনো কথা তো বলিনি।
মন্তব্য করুন