একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত সাতক্ষীরার উপকূলবাসীর জন্য টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ হয়নি। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই নতুন ঝড়ের খবরে রীতিমতো দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ে তাদের কপালে। প্রতিকূলতা পেরিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও বাঁধের ভাঙন বারবার সর্বস্বান্ত করেছে তাদের।
উপকূলে নদী রক্ষা বাঁধগুলো অরক্ষিত থাকায় ঝড়ে আবারও লোকালয়ে প্লাবনের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলা সবচেয়ে বেশি ঝূঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভাষ্য, বাঁধগুলোর ঝূঁকিপূর্ণ অংশ সংস্কার করা হয়েছে।
সুন্দরবন স্টুডেন্ট সলিডারিটি টিমের সভাপতি মারুফ হোসেন মিলন জানান, সুন্দরবনসংলগ্ন গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী, আটুলিয়া, কাশিমাড়ী এলাকার কয়েকটি বেড়িবাঁধ অতিঝুঁকিপূর্ণ। এসব বাঁধ ঘূর্ণিঝড় সৃষ্ট প্লাবন মোকাবিলায় সক্ষম নয়। একই কথা জানালেন শ্যামনগর পদ্মপুকুর ইউপির সদস্য হাবিবুর রহমান ও মাসুমা খাতুনসহ স্থানীয় আরও কয়েকজন।
শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউপির পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধটি ঝূঁকিপূর্ণ বলে জানালেন সাবেক চেয়ারম্যান ভবতোষ মণ্ডল।
একই উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আবদুর রহিম জানান, তার ইউপির হরিষখালী, পার্শেমারী টেকেরহাট, গাবুরা, চকবারা, লেবুবুনিয়াসহ পাঁচটি স্থানে বেরিবাঁধ জরাজীর্ণ।
এ ছাড়া আটুলিয়া ইউনিয়নে তিনটি পয়েন্টেও পাউবোর বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে জানিয়েছেন এই ইউপির চেয়ারম্যান আবু সালেহ বাবু।
তিনি বলেন, ‘বিড়ালক্ষ্মীতে দুটি ও বড়কুপটের একটি জায়গা এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে এসব জায়গায় বাঁধ টিকবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।’
সাতক্ষীরা সদর, আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার বেড়িবাঁধের কিছু অংশের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন।
এ প্রকৌশলী জানান, তার আওতাধীন মোট ৩৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ২০ কিলোমিটার। আর অতিঝুঁকিপূর্ণ ৩ কিলোমিটার। তবে অতিঝুঁকিপূর্ণ ৩ কিলোমিটার সংস্কার করা হচ্ছে। মূলত বাঁধগুলোর সাইডে মাটি ফেলে প্রশস্ত করা হচ্ছে।
সদর ও আশাশুনি উপজেলারই বেড়িবাঁধের আরেকটি অংশ পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২। কলারোয়ার অংশও তাদের দায়িত্বে রয়েছে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহানেওয়াজ তালুকদার বলেন, ‘আমাদের আওতাধীন মোট ৩০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে ৩ কিলোমিটার। আর অতিঝুঁকিপূর্ণ সব এলাকায় সংস্কার করা হয়েছে।’
বারবার সংস্কার করা হলেও সাতক্ষীরা উপকূলে কেন টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না—জানতে চাইলে নওয়াবেঁকী গণমুখী ফাউন্ডেশন (এনজিএফ)-এর নির্বাহী পরিচালক মো. লুৎফর রহমান জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধগুলো ষাটের দশকে নির্মাণ হয়েছে। এরপর এই নকশার আর কোনো পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে নদীতে যে জোয়ার-ভাটা হয়, এই বাঁধ তা আটকে রাখতে পারে না। নদীরক্ষা বাঁধগুলো একদম তলার প্রস্থ ১০০ ফুট ও উচ্চতা ২০ ফুট হলে বাঁধগুলো টেকসই হবে।
সাতক্ষীরা উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ সব বেড়িবাঁধ এলাকায় দ্রুত সংস্কারকাজ চলছে জানিয়ে সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দার বলেন, নতুন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাঁধ সুরক্ষিত থাকবে বলে তিনি আশাবাদী।
মন্তব্য করুন