উত্তরের হিমেল হাওয়ার সঙ্গে ঘনকুয়াশা। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত কুয়াশার আবরণে পথঘাট ঢাকা থাকছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমেছে। এতে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। শীত বাড়ায় রাজশাহীতে ঠান্ডাজনিত নানা রোগে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতালগুলোতে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগী স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দুই-তিনগুণ বেড়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার হাসপাতালগুলোতে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দুই-তিনগুণ বেড়ে গেছে। প্রতিদিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল, উপজেলা হাসপাতাল ও বেসরকারি ক্লিনিকে রোগীরা চিকিৎসার জন্য আসছেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের দেওয়া তথ্য মতে, বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১০৩ শিশু হাসপাতালের ১০ ও ২৪নং ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে এই দুই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি আছে ৫৩০ জন। গত কয়েক দিনে তারা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। কোনো কোনো বেডে দুইজনকে রাখা হয়েছে। শয্যা সংকটের কারণে অনেক শিশুকে হাসপাতালের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বেশিরভাগ শিশু জ্বর-সর্দি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত।
শিশু ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, গত ১৪ জানুয়ারি রোগী ভর্তি হয়েছিল ৪৬ জন। ১৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ৭২ জন। এভাবেই প্রতিদিন ঠান্ডাজনিত কারণে রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ঠান্ডাজনিত কারণে মোট ১০৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছে।
শীতজনিত রোগী দিন দিন বাড়ছে উল্লেখ করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘এর মধ্যে শিশুদের সংখ্যা বেশি। ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে তারা। এ ছাড়া বয়স্কদের পাশাপাশি বিভিন্ন বয়সীরাও আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন। আক্রান্তদের বেশিরভাগই ডায়রিয়া, জ্বর-সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছেন।’
শীত বাড়ায় শিশু ও বয়স্কদের প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না করার পরামর্শ দিয়ে ডা. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘এই সময়ে যে কেউ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এসব রোগ থেকে রেহাই পেতে গরম কাপড় ব্যবহার, যতটা সম্ভব ঠান্ডা পরিবেশ এড়িয়ে চলা জরুরি। শিশুদের ঠান্ডা বাতাস থেকে দূরে রাখা, সেইসঙ্গে ধুলাবালু থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে হবে। শৈত্যপ্রবাহ চলাকালে শিশুদের ঘর থেকে কম বের করতে হবে। ঘরের মধ্যে ঠান্ডা বাতাস যেন না ঢোকে, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে অভিভাবকদের।’
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে ভর্তি রোগীর চেয়ে বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা বেশি। তবে পরিস্থিতি খুব খারাপ, এমনটা নয়। প্রতি বছর এই সময়ে রোগী বাড়ে। সে রকম ব্যবস্থাপনাও আছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ রোগীকে বহির্বিভাগে চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যাদের অবস্থা গুরুতর তাদের ভর্তি নেওয়া হচ্ছে।’
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ। আর সন্ধ্যা ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৯ শতাংশ। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।’
মন্তব্য করুন