

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে দেশের প্রথম সাপে কাটা ও বিষবিদ্যা ওয়ার্ড চালুর পর গত এক মাসে সাপে কাটা কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। রাজশাহী অঞ্চলে সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা বেশি এবং অতীতে মৃত্যুহারও উল্লেখযোগ্য হওয়ায় মৃত্যুহার কমানোর লক্ষ্যেই এ বিশেষায়িত ওয়ার্ডটি চালু করা হয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওয়ার্ড চালুর পর সেবার মানে উল্লেখযোগ্য উন্নতি এসেছে। এর আগে রামেকে সাপে কাটা রোগীর বড় একটি অংশের মৃত্যু হতো।
হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই ২০২৫ থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে ৭৯৫ জন নন-ভেনোমাস (বিষহীন) সাপে কাটা রোগী ভর্তি হয়েছেন। একই সময়ে ৩৪১ জন ভেনোমাস (বিষধর) সাপের কামড়ের রোগী ভর্তি হন। শুধু রাসেলস ভাইপারের কামড়ে ভর্তি হয়েছেন ৬৮ জন। এদের মধ্যে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের।
ওয়ার্ড চালুর পর গত এক মাসে (২৪ অক্টোবর থেকে ২৪ নভেম্বর) এ বিশেষ ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিয়েছেন ১১১ জন। এরমধ্যে ৭৫ জন বিষহীন এবং ৩৬ জন বিষধর সাপের কামড়ের রোগী। তবে এ সময়ে একজনেরও মৃত্যু হয়নি, যা রামেকের জন্য নতুন মাইলফলক বলে মন্তব্য চিকিৎসকদের।
গত ২৩ অক্টোবর রামেক হাসপাতালে ১২ শয্যার এ বিশেষায়িত সাপের কামড় ও বিষবিদ্যা ওয়ার্ডটি চালু করা হয়। হাসপাতালের পুরোনো ক্যান্টিনের জায়গায় তৈরি এ এইচডিইউমানের ওয়ার্ডে সাপের বিষজনিত জটিলতা— শ্বাসকষ্ট, হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতা, স্নায়বিক সমস্যার তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। ওয়ার্ডে ৮ জন পুরুষ ও ৪ জন নারী রোগীর জন্য শয্যা রয়েছে।
রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. শংকর কুমার বিশ্বাস বলেন, আগে রাসেলস ভাইপারের কামড়ে মৃত্যুহার ছিল ২৭ শতাংশ। এখন সমন্বিত ও দ্রুত চিকিৎসা, সার্বক্ষণিক চিকিৎসক ও নার্স এবং পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম সরবরাহের কারণে মৃত্যুহার অনেক কমে এসেছে। রোগী ওয়ার্ডে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু হয়, ফলে বাঁচার হার আরও বেড়েছে।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ কালবেলাকে বলেন, দেশের প্রথম সাপের কামড় ও বিষবিদ্যা ওয়ার্ড আমরা চালু করেছি। এর আগে এখানকার চিকিৎসক ও নার্সদের ‘স্নেক বাইট ন্যাশনাল গাইডলাইন’ অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আগে বড় ওয়ার্ডের কোনায় সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসা হতো, অনেক সময় দেরিও হতো। এখন পৃথক ওয়ার্ড থাকায় রোগীরা দ্রুত ও নিরাপদ চিকিৎসা পাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ওয়ার্ডটি এখন খুব ভালো কাজ করছে। গত এক মাসে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। আলাদা চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণে রোগীরা দ্রুত সুস্থ হচ্ছেন। আশা করছি, ভবিষ্যতেও এটি সফলভাবে চলবে। আগে রামেকে সাপে কাটা রোগীদের ৪০ শতাংশই মারা যেত, কিন্তু এ বিশেষ ওয়ার্ড চালুর পর মৃত্যুহার শূন্যে নেমে এসেছে।
মন্তব্য করুন