আতিকুর রহমান, কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০২:১৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা ‘ইচিং বিচিং’

কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের শ্যামনগরে জনপ্রিয় লৌকিক খেলা 'ইচিং বিচিং' খেলছে একদল শিশু। ছবি : কালবেলা
কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের শ্যামনগরে জনপ্রিয় লৌকিক খেলা 'ইচিং বিচিং' খেলছে একদল শিশু। ছবি : কালবেলা

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এলাকাভিত্তিক প্রাচীন খেলাগুলো একসময় খুবই জনপ্রিয় ছিল। গ্রামবাংলার জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম লৌকিক খেলা ছিল ‘ইচিং বিচিং ছিচিং ছা’। সাধারণত এসব খেলায় শৈশবের দুরন্তপনায় মেতে থাকত ছেলেমেয়েরা। এখন ইচিং বিচিং খেলার দৃশ্য চোখে পড়া দায়। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও খুঁজে পাওয়া মুশকিল। শহুরে কিশোর-কিশোরীদের কাছে অজানা এসব খেলার আদি-অন্ত।

আধুনিকতার স্পর্শ আর সভ্যতার ক্রমবিকাশে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এসব খেলা। প্রযুক্তির দাপটে অস্তিত্ব হারিয়েছে অধিকাংশ খেলা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ডিভাইস গেমিং কিংবা টিভি সিরিয়ালের দিকে ঝুঁকে পড়ায় শিশুরা এসব খেলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং একইসঙ্গে এসব খেলাও বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

ইচিং বিচিং বাংলাদেশসহ ভারত উপমহাদেশের একটি জনপ্রিয় গ্রামীণ খেলা। সাধারণত এই খেলার জন্য শিশু ও কিশোরীরা গ্রাম সংলগ্ন সবুজ মাঠকে নির্বাচন করে। উচ্চতা অতিক্রম করা এই খেলার একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এই উচ্চতা অতিক্রম করার পর বসে থাকা খেলোয়াড়দের যুক্ত পাকে প্রতিটি খেলোয়াড় শূন্যে লাফিয়ে ‘ইচিং বিচিং চিচিং ছা, প্রজাপতি উড়ে যা’ দম বলতে বলতে দু’বার করে অতিক্রম করে। পাশেই অপেক্ষমাণ তাকিয়ে থাকে অন্য শিশুরা। প্রজাপতি উড়ে যায়, নাকি হাতের সঙ্গে পা লেগে পড়ে যায় দেখতে। পড়লেই অপেক্ষমাণ অপর শিশু এসে হবে প্রজাপতি।

বর্তমান প্রজন্মের শিশুদের মোবাইল আসক্তির কারণে ঐতিহ্যবাহী অনেক খেলার নাম পর্যন্ত তাদের জানা নেই। অথচ একটা সময় গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহর পর্যন্ত শিশু ও যুবকরা পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন খেলাধুলায় অভ্যস্থ ছিল। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা অবসরে দলবেঁধে খেলত নানা প্রকারের খেলা। এসব খেলা বাড়ির উঠান থেকে শুরু করে রাস্তার আনাচে-কানাচে, খোলা মাঠে কম পরিসরেই খেলা যেত।

গ্রামবাংলার এক সময়ের জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে ছিল হা-ডু-ডু, কাবাডি, ঘুড়ি খেলা, দাঁড়িয়াবান্ধা, ডাংগুলি, গোল্লাছুট, কুস্তি, গোশত চুরি, কুতকুত, চোর-পুলিশ, হাড়িভাঙা, ইচিং বিচিং, ওপেন টু বায়োস্কোপ, কড়ি খেলা, কানামাছি, লাঠি খেলা, বউ-ছি, বলী খেলা, টোপাভাতি, নোনতা খেলা, নৌকা বাইচ, লুডু খেলা, রুমাল চুড়ি, পুতুল বৌ, ফুল টোক্কা, বাঘ ছাগল, বরফপানি, মার্বেল, মোরগ লড়াই, লাটিম, লুডু, ষোল গুটি, এক্কা দোক্কা, সাত পাতা, রস-কস, চারগুটি, চেয়ার সিটিংসহ আরও অনেক প্রকার খেলা। আজ আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়া ও প্রযুক্তির বিকাশের দোহাই দিয়ে জনপ্রিয় এসব গ্রামীণ খেলাধুলা প্রায় বিলুপ্ত।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ স্কাউটস রোভার অঞ্চলের প্রকাশনা কমিটির সদস্য ও কুমিল্লা জেলা রোভারের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. মহিউদ্দিন লিটন বলেন, বর্তমান প্রজন্মের শহরের শিশুরা ঘরের কোণে বসে বিভিন্ন ডিভাইস নিয়ে পড়ে থাকে। যার কারণে তাদের মেধার বিকাশও সঠিকভাবে হয় না। গ্রামীণ এসব খেলাধুলা হলো বিনোদনমূলক, স্বাস্থ্য সচেতনমূলক ও প্রতিভা বিকাশে অন্যতম। যা আমাদের আদি ক্রীড়া সংস্কৃতি। এসব খেলাধুলা এক সময় আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্যবহন করত। বর্তমানে গ্রামীণ খেলাগুলো বিলুপ্ত হতে হতে অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ক্রীড়া সংগঠক অধ্যক্ষ মো. শফিকুর রহমান বলেন, বর্তমান সময়ে মাঠ, বিল-ঝিল হারিয়ে যাওয়া, আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়া ও প্রযুক্তির বিকাশে বিলুপ্ত হতে বসেছে জনপ্রিয় এসব গ্রামীণ খেলাধুলা। আমাদের সবার সম্মিলিত চেষ্টাই পারে নতুন প্রজন্মকে এসব খেলার সঙ্গে পরিচিত করাতে। যা আমাদের ইতিহাস আর শিকড়কে টিকিয়ে রাখতে শক্তিশালী একটা মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে। সরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগে এসব খেলার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যায়। স্কুলে শিশুদের এসব খেলার সঙ্গে পরিচয় করানো উচিত। তাহলেই জেগে উঠবে, বেঁচে থাকবে খেলার প্রাণ। চাইলেই বর্তমান প্রজন্মের শিশুদের মোবাইল আসক্তি কমানো যায় এসব খেলাধুলায় যুক্ত করে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সীমান্তে নারী-শিশুসহ ১১ অনুপ্রবেশকারী আটক

ভারতে পালানোর সময় দুই আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার

বর্ণাঢ্য আয়োজনে পঞ্চগড়ে কালবেলার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত

নামাজ শেষে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন সোহেল, ঘরে ঢুকে মাথায় গুলি

প্রতিদিন মদ খেলে মস্তিষ্কে যা ঘটে জানাচ্ছে গবেষণা

আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম : প্রধান উপদেষ্টা

জঙ্গলে বিমান বিধ্বস্ত, সবাই নিহত

জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যায়নি যেসব দল

কালবেলা পাঠকদের কাছে আস্থা অর্জন করতে পেরেছে : টুকু

সাতক্ষীরার তিন কলেজে পাস করেনি কেউ

১০

রুই মাছের ৮ পদ, আজই বানিয়ে ফেলুন আপনার পছন্দের রেসিপিটি

১১

তারেক রহমানের সাক্ষাৎকার প্রদর্শনী / ‘দেশ বিনির্মাণে তারেক রহমানের পরিকল্পনা সবার কাছে পৌঁছে দেব’

১২

কী বলা হয়েছে জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামায়

১৩

জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেন যারা

১৪

ঝিনাইদহে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন / ‘বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের মাধ্যমে কালবেলা পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছে’ 

১৫

কলেজে নেই শিক্ষক, ৮ শিক্ষার্থীর সবাই ফেল

১৬

ফল খাওয়া নিয়ে ৫ ধারণা — বিজ্ঞান যা বলে

১৭

উইন্ডিজ সিরিজে কেমন হবে মিরপুরের উইকেট?

১৮

জুলাই সনদে স্বাক্ষর করল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল

১৯

জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যারা এলেন 

২০
X