হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বদলপুর ইউনিয়নের উদয়পুর গ্রাম সংলগ্ন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ফসল রক্ষা বাঁধের সংস্কারকাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বাঁধের গোড়া থেকে মাটি কেটে সেই মাটি দিয়েই বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে।
কমিটির সদস্য সচিব বলছেন, কমিটিতে থাকলেও উনারা স্থানীয় ইউপি সদস্যের মাধ্যমে কাজ করছেন। আর ইউপি সদস্যদের দাবি, বাঁধ সংস্কারের কাজ কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিবই করছেন।
জেলা পাউবো সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে উপজেলায় পিআইসি গঠনের মাধ্যমে ৯টি প্রকল্পে ১২ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কারের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। যার প্রস্তাবিত বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৯০ লাখ ৮২ হাজার টাকা।
সরেজমিনে বদলপুর ইউনিয়নের উদয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন বাঁধে গিয়ে দেখা গেছে, ৭ লাখ ৭৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩৮৫ মিটার বাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে। কিন্তু সেখানে নেই দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা কিংবা পিআইসি কমিটির সভাপতি কিংবা সদস্য সচিব।
এ সময় আলাপকালে এস্কেভেটর চালক জানান, স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য অরুন তালুকদার তাদের বাঁধের কাজ করার জন্য নিয়ে এসেছেন।
এ সময় দেখা যায়, বাঁধের সংস্কারকাজে বাঁধের গোড়ার মাটি কেটে সেই মাটিই বাঁধেই ফেলা হচ্ছে। এতে করে বাঁধটি দুর্বল হয়ে আগামী বর্ষা মৌসুমে এটি ভাঙার সংশয়ে দিন পার করছেন স্থানীয় কৃষকসহ সাধারণ মানুষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, বাঁধের গোড়া কেটে যদি বাঁধ মেরামত করা হয় তবে সেই বাঁধের কী হবে?
হাওরের ফসল রক্ষা নীতিমালা অনুযায়ী, ৫০ মিটার (১৬৭ ফুট) দূর থেকে মাটি তোলার কথা থাকলেও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি এই নিয়ম মানছেন না। তারা বাঁধের মাত্র ৮-১০ মিটার দূর থেকেই মাটি তুলেছেন। এছাড়াও হাওরে বাঁধের কাজের নীতিমালা অনুযায়ী, নভেম্বর মাসের মধ্যে প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠনের কাজ শেষ করে ১৫ ডিসেম্বর থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে হবে। কাজ শেষ করার কথা আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু অধিকাংশ বাঁধে এখনো কাজ শুরুই হয়নি।
উদয়পুর বাঁধের পিআইসি কমিটির সভাপতি নরেশ চন্দ্র দাস ও সদস্য সচিব গোপেশ চন্দ্র দাস কালবেলাকে বলেন, আমরা মেম্বারকে দিয়ে কাজ করাচ্ছি। কত মিটার কাজ তা আমরা জানি না।
বদলপুর ইউনিয়নের উক্ত ওয়ার্ডের সদস্য অরুন তালুকদার কাজের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, কাজ পিআইসি কমিটির লোকজনই করছেন।
বাঁধ সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. একরামুল হকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। তাই এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুয়েল ভৌমিক বলেন, এমন হবার কথা নয়। বিষয়টি নিয়ে আমি পাউবোর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলব।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) হবিগঞ্জ জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ কালবেলাকে জানান, বাঁধ সংস্কারে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরেই সব কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, বাঁধের মাটি কেটে বাঁধ সংস্কারের কোনো সুযোগ নেই। পিআইসি গঠনে অনিয়ম হয়ে থাকলে আমরা সরেজমিনে গিয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিসহ দেখে এই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
মন্তব্য করুন