রংপুরের পীরগাছায় বিকল্প সড়ক তৈরি না করেই পুরোদমে চলছে একটি সেতুর নির্মাণকাজ। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী হাজার হাজার সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থী। বিশেষ করে অসুস্থ ও গুরুতর রোগীদের চিকিৎসাসহ হাসপাতালে আনা-নেওয়ায় বিপাকে পড়ছেন স্বজনরা। এ কারণে জনসাধারণের চলাচল স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে সেতু নির্মাণকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত একটি বিকল্প সড়ক তৈরির দাবি জানিয়ে আসছেন ভুক্তভোগী মানুষজন।
জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ‘ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক অবকাঠামো পুনঃবাসন’ প্রকল্পের আওতায় পীরগাছার পাকারমাথা-কান্দি সড়কের অনন্তরাম দলবাড়ি খামার ও বলিহার গ্রামের সীমান্তবর্তী স্থানে একটি পুরোনো সেতু ভেঙে সেখানে ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি ১২ মিটার দীর্ঘ আরসিসি ব্রিজ নির্মাণকাজ গত নভেম্বর মাস থেকে শুরু করা হয়। সেতুটি নির্মাণকাজের দায়িত্ব পান রংপুরের ইএফটিই.ইটিসিএল প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজের শুরুতে সেখানে বিকল্প সড়ক হিসেবে একটি বাশের সাঁকো তৈরি করা হলেও তা কিছুদিন যেতে না যেতেই ভেঙে গিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এতে করে ওই সড়ক দিয়ে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী পার্শ্ববর্তী সুন্দরগঞ্জ উপজেলাসহ পীরগাছা, কান্দি ও কৈকুড়ি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ।
সরেজমিনে রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুরোদমে চলছে সেতু নির্মাণের কার্যক্রম। ওই জায়গাতেই এক পাশে অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে ভাঙা বাঁশের সাঁকোটি। না জানার কারণে যারা ভুল করে ওই সড়ক দিয়ে এসেছেন তারা কেউ কেউ ফিরে যাচ্ছেন দূরের বিকল্প সড়ক দিয়ে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য। আবার যারা সাইকেল বা মোটরসাইকেলে করে এসেছেন তারা পার্শ্ববর্তী একটি পুকুরের সরু ও ভাঙা পাড় দিয়ে অনেক কষ্টে যাতায়াত করছেন। সাইকেল বা মোটরসাইকেল কোনো মতে ওই পুকুরের পাড় দিয়ে চললেও ভ্যান, রিকশা বা অন্যকোনো যানবাহন ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে দেখা যায়নি।
এ সময় নজরমামুদ গ্রামের হারুন অর রশীদ, মোস্তাইন বিল্লাহ, মাইদুল বলেন, এখানে ব্রিজ নির্মাণ শুরু করার সময় দায়সারাভাবে নড়বরে একটা বাঁশের সাকো তৈরি করেছিল ঠিকাদার। সেই সাঁকো দিয়ে চলাচলের সময় কমপক্ষে ২০-২৫টি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। একপর্যায়ে সাঁকোটি ভেঙে গিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লেও কর্তৃপক্ষ এখানে আর বিকল্প সড়ক করেনি। আমরা এলাকাবাসী দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়ে আসলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পীরগাছা জেএন উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী সাফায়েত বলেন, আমরা শিক্ষার্থীরা এ সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত স্কুলে যাতায়াত করি। আগে মাত্র ১৫ টাকায় অটোরিকশা বা ভ্যানে করে স্কুলে যেতাম। এখন এই সড়ক দিয়ে কোনো যান চলাচল করতে না পারায় আমাদের পার্শ্ববর্তী চৌধুরানী দিয়ে ঘুরে স্কুলে যেতে হচ্ছে। এতে করে ১৫ টাকার স্থলে আমাদের প্রায় ৬০-৭০ টাকা করে বেশি খরচ হচ্ছে। আমরা চাই এসএসসি পরীক্ষার আগেই যেন এখানে একটা বিকল্প সড়ক করা হয়।
বলিহার গ্রামের সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিকল্প সড়ক না করে সেতু নির্মাণের কারণে কেউ অসুস্থ হলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া যাচ্ছে না। অন্য এলাকা দিয়ে ঘুরে রোগী নিয়ে যেতে হয়। আমরা অবিলম্বে এখানে একটা টেকসই বিকল্প সড়ক করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মির্জা বলেন, বিকল্প সড়ক হিসেবে একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি বাবদ ৩৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সাঁকোটি তৈরি করতে আমাদের প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়। সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ার পর আমরা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু কোনো বরাদ্দ পাচ্ছি না। তারপরও আমরা জনগণের ভোগান্তির কথা ও আমাদের কাজের সুবিধার্থে খুব শিগগিরই একটি বিকল্প সড়ক নিজ খরচে তৈরি করে দিব। ভেকু ভাড়া না পাওয়ায় কাজ শুরু করতে পারছি না।
এ বিষয়ে স্থানীয় কৈকুড়ি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নূর আলম মিয়া বলেন, ঘটনাস্থলে আমি গিয়েছিলাম। আমি উপজেলা প্রকৌশলীকে বিষয়টি জানিয়েছি। ঠিকাদারের সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুব শিগগিরই একটা সড়ক করে দিবেন।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম বলেন, যে বরাদ্দ ছিল ওটা দিয়ে ওখানে একটা বাঁশের সাঁকো করা হয়েছিল। তা ভেঙে গেছে। নতুন বরাদ্দের চেষ্টা চলছে। হয়তো দুতিন দিনের মধ্যে নতুন একটা বিকল্প সড়কের কাজ আমরা শুরু করতে পারব।
মন্তব্য করুন