অহিদ উদ্দিন মুকুল, নোয়াখালী ব্যুরো
প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৫:১০ এএম
অনলাইন সংস্করণ

জরাজীর্ণ ঘরেই নির্ঘুম রাত কাটে শ্যামলী রানির

জরাজীর্ণ ঘরেই নির্ঘুম রাত কাটে শ্যামলী রানির। ছবি : কালবেলা
জরাজীর্ণ ঘরেই নির্ঘুম রাত কাটে শ্যামলী রানির। ছবি : কালবেলা

নেই স্বামী, নেই ছেলে সন্তান। ধার দেনা করে দুই মেয়েকে বিয়ে দিলেও নিজের খাবার জোটে না। এক বেলা খেতে পারলেও উপোস থাকেন দুই বেলা। অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনোমতে চলছে জীবন। দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ একটি ঘরে একাই বসবাস করছেন। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের ছয়ানী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের জগেন্দ্র উকিলের বাড়ির মৃত ফরেশ চন্দ্র মজুমদারের স্ত্রী শ্যামলী রানি মজুমদার। কুয়াশা-বৃষ্টি-বাতাসের আতঙ্কে ভাঙা ঘরে নির্ঘুম রাত কাটে তার।

জানা যায়, মাত্র দুই শতক জমিতে রেখে শ্যামলী রানি মজুমদারের ১০ বছর আগে স্বামী ফরেশ চন্দ্র মজুমদার মারা গেছেন। এ ছাড়া তার নেই কোনো সহায়-সম্বল। ঋণ করে মানুষের কাছে হাত পেতে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে এখন নিঃস্ব তিনি। বেঁচে থাকার তাগিদে অন্যের বাড়িতে করছেন ঝিয়ের কাজ। এভাবে জীবিকা নির্বাহ করে চলছেন শ্যামলী রানি। বসতঘর জরাজীর্ণ, নেই জানালা কিংবা দরজা। জোড়াতালি দেওয়া ওই ভাঙা ঘরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে চলছেন তিনি। একমুঠো খাবারের যোগানে সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে রাতে ঠিকভাবে ঘুমটাও জোটে না তার কপালে। শীতের কুয়াশায় আর বৃষ্টি-বাতাসে আতঙ্কে একাকী নির্ঘুম রাত কাটে তার। বর্ষাকালে আকাশের মেঘ দেখলে দৌঁড়ে যেতে হয় অন্যের ঘরে। আর শীতকালে কনকনে বাতাস আর কুয়াশায় ভিজে যায় বিছানাপত্র।

শ্যামলী রানি মজুমদারের প্রতিবেশী তাপস মজুমদার বলেন, এই ঘরটায় থাকার মতো অবস্থা এই। পুরো ঘরটাই প্রায় ভেঙে গেছে। এতদিন এখানে থাকলেও আজ কয়েক দিন একেক সময় একেক মানুষের ঘরে থাকছেন। উনার দুটো মেয়ে আছে। তাদের বিয়ে দিয়েছেন। তারা কখনো স্বামীসহ বেড়াতে আসতে পারে না। সকালে আসলে বিকেলে চলে যায়। এই ঘরে বসার মতো অবস্থা নেই।

আরেক প্রতিবেশী সুজন মজুমদার বলেন, বিধবা শ্যামলী রানি এখন খুবই কষ্টে দিনপার করছেন। একটি মাত্র ঘর, তাও আবার ভাঙাচোরা। একদম বসবাস অনুপযোগী। সরকারি কিংবা কোনো ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান তাকে পুণর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিলে ভালো হতো।

শ্যামলী রানির বড় মেয়ে অপর্ণ্যা রানি মজুমদার বলেন, আমার মা খুব কষ্টে আছেন। আমাদের ঘর নেই। আমাদের বাবা নাই, ভাই নাই। আমরা স্বামীর বাড়ি থেকে আসতে পারি না। দিনে এসে দিনে চলে যাই। জামাইদের বসার মতো জায়গা নেই।

বিধবা শ্যামলী রানি মজুমদার বলেন, আমার স্বামী ও নেই ছেলেও নেই।ঘর ভাঙার পরে কান্নাকাটি করে মানুষের ঘরে থাকি। কী আর করব? আমার বাঁচারও দায়। ঘরের কারণে খুব কষ্টে আছি।

স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শিখা সংসদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঘরটা দেখে আমরা অবাক হয়েছি। ঘরটি খুবই জরাজীর্ণ। তিনি খুব কষ্টে বসবাস করছিলেন। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আমরা শ্যামলী রানির পাশে দাঁড়াতে চাই। আমাদের প্রবাসী বিত্তবানরা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। আমরা সে টাকায় নতুন ঘর নির্মাণ করে দিতে চাই। বিত্তবানরা এগিয়ে এলে সমাজে আর অসহায় মানুষ থাকবে না। আমাদের সমাজ পরিবর্তন হলে, আমাদের দেশ পরিবর্তন হবে।

ছয়ানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওহিদুজ্জামান বলেন, আমি বিধবা শ্যামলী রানির কষ্টের কথা জানি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে তার জন্য ঘর করে দেওয়া যায় কিনা তা চেষ্টা করব। এ ছাড়া সরকারি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এনসিপি শাপলা প্রতীক নিয়েই নির্বাচনে অংশ নেবে : সারজিস 

ঢাকার তাপমাত্রা নিয়ে সুখবর দিল আবহাওয়া অফিস

গাজা যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে ইউরোপজুড়ে লাখো মানুষের বিক্ষোভ

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

ঘুম থেকে ওঠার পরই কি সারা শরীরে ব্যথা হয়, ভয়াবহ রোগের লক্ষণ নয় তো?

আকিজ গ্রুপে চাকরি, পাবেন গ্র্যাচুইটিও

ট্রাফিক জরিমানার নামে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে প্রতারণা, ডিএমপির সতর্কতা

আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটালেন নদীপাড়ের মানুষ

টিভিতে আজকের যত যত খেলা

সোমবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

১০

তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে, ডিমলার বন্যা রক্ষা বাঁধ ঝুঁকিতে

১১

৬ অক্টোবর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১২

তিস্তার পানির তোড়ে ভেঙে যেতে পারে ফ্লাইড বাইপাস সড়কটি

১৩

বজ্রপাতে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মৃত্যু

১৪

দুই বাংলাদেশি যুবককে ফেরত দিল বিএসএফ

১৫

বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী জনগণের পাশে রয়েছে : নীরব

১৬

শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা আজ

১৭

ছক্কার ঝড় তুলে ম্যাচসেরা সাইফের মুখে আত্মবিশ্বাসের কথা

১৮

আফগানদের হোয়াইটওয়াশ করে তৃপ্ত জাকের

১৯

আবারও ভারতের কাছে কুপোকাত পাকিস্তান

২০
X