ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় এখন মাঠের পর মাঠ চলছে বেগুনের আবাদ। প্রতিনিয়তই এখানে বাড়ছে বেগুন চাষ। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া বেগুন চাষের উপযোগী হওয়ায় বাম্পার ফলন পাচ্ছেন কৃষকরা।
বাজারেও বেগুনের ভালো দাম পেয়ে এখন তাদের চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক।
সদরপুর উপজেলার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঋতুভেদে প্রায় সব ধরনের সবজি উৎপন্ন হয় সদরপুরে। অন্যান্য সবজির চেয়ে বেগুন বেশি লাভজনক হওয়ায় বেগুন চাষে ঝুঁকছেন এখানকার কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, বি পি হাইব্রিড, আইরেট, সিন্দুরী, সাদা, লাফাসহ বিভিন্ন জাতের বেগুন চাষ করেছেন তারা।
শৌলডুবী গ্রামের কৃষক জসিম উদ্দিন জানান, তিনি ৪০ শতাংশ জমি প্রতিবছর ২০ হাজার টাকায় ইজারা নিয়ে গত তিন বছর ধরে বেগুন চাষ করছেন। অন্যান্য সবজির তুলনায় সারা বছরই বেগুনের একটু ভালো দাম পাওয়া যায়। বেগুন চাষ করে তার সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে।
মাঠ শৌলডুবী গ্রামের কৃষক আনোয়ার ফকির জানান, নিজস্ব এক বিঘা জমিতে তিনি বেগুনের ক্ষেত করেছেন। বেগুন বিক্রি করে তিনি লাভবান হয়েছেন।
বাঁধানো ঘাঠ গ্রামের কৃষক শাহাবুদ্দিন মোল্লা তার ১০ কাঠা জমিতে এবং ভাষানচর গ্রামের মোশারফ হোসেন ৭ কাঠা জমিতে ও ফজলুল হক ৯ কাঠা জমিতে এবং রফিকুল প্রামাণিক ১৫ কাঠা জমিতে এবার বেগুনের চাষ করেছেন।
তারা জানান, বেগুন চাষে বোরো ধান আবাদের চেয়ে পানি কম লাগে। সার ও শ্রমিক খরচও অনেক কম। তুলনামূলকভাবে বাজারে মূল্য বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এক বিঘা জমিতে বেগুন আবাদ করলে সব মিলিয়ে খরচ পড়ে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। ওই জমি থেকে বেগুন পাওয়া যায় ১২০ থেকে ১৫০ মণ।
বেগুন চারা রোপনের এক মাস পর থেকেই ফলন শুরু হয়। একটানা ৬ মাস ফলন অব্যাহত থাকে। ফলন শুরু হওয়ার পর থেকেই সপ্তাহে দুইবার করে ক্ষেত থেকে বেগুন তোলা যায়। সপ্তাহের দুইদিনে ৮ থেকে ১২ মণ বেগুন তোলা হয়। বাজার ভালো হলে প্রতি মণ বেগুন ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি করা যায়।
সদরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমান জানান, উপজেলার শৌলডুবীর বেগুনের সুনাম দীর্ঘদিনের। কৃষকদের বেগুন বিক্রি করতে কষ্ট করে হাটে বাজারে যেতে হয় না। স্থানীয় শৌলডুবী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ, মজুমদার বাজার, সাদিপুর বাজার, বাড়ৈরহাট, নীল মনির বাজার, কৃষ্ণপুর বাজার, বাঁধানোঘাট, পোস্ট অফিস মোড় নামক এলাকায় প্রতিদিন সকাল-বিকাল দুই দফা বেগুনের হাট বসে।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররা এসে হাট থেকে হাজার হাজার মণ বেগুন কিনে বস্তাবন্দি করে দেশের বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যান। অপরদিকে পাইকারি কাঁচা তরকারি ব্যবসায়ীরা সরাসরি ক্ষেত থেকে কিনে নগদ টাকা দিয়ে যায়। এতে কৃষকরাও বেশি লাভবান হচ্ছেন।
পাইকারি বেগুন ক্রেতা শহিদুল ইসলাম জানান, সদরপুরের বেগুনের কদর রয়েছে দেশের বিভিন্ন বাজার ও হাটে। তারা এখান থেকে বেগুন কিনে ঢাকার কাওরান বাজার, শ্যামবাজার, যাত্রাবাড়ী, দোহার বাজার, নারিশা বাজার, কার্তিকপুর, শ্রীনগর, মাদারীপুর, বরিশাল, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে থাকেন। বিভিন্ন বাজারে এখানকার বেগুন ১ হাজার দুইশ থেকে শুরু করে দেড় হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়।
সদরপুর কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর এ উপজেলায় ১৯০ হেক্টর জমিতে বেগুনের চাষ করা হয়েছে। গত বছর বেগুন চাষের জমির পরিমান ছিল ১৭০ হেক্টর। গত বছরের চেয়ে এ বছর ২০ হেক্টর বেশি জমিতে বেগুনের চাষ করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় বলেন, এ এলাকার কৃষকরা অত্যন্ত পরিশ্রমী। পাশাপাশি চাষাবাদের বিভিন্ন কলাকৌশল জানার জন্য তারা বিভিন্ন কৃষি বিষয়ক সেমিনারে অংশ নিয়ে থাকেন। বেগুন চাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা বেগুন চাষে উৎসাহী হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এ অঞ্চলের কৃষকরা বেগুন চাষে অভাবনীয় বিপ্লব ঘটিয়েছেন যা দেখে অন্যান্য জেলার কৃষকরা উৎসাহিত হতে পারেন।
ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম জানান, জেলার সদরপুরের শৌলডুবীর বেগুন চাষিদের আমরা মৌসুমের সময়ে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকি। এছাড়া আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা বেগুন ক্ষেতগুলোতে বিশেষ নজর রাখেন যেন চাষাবাদে কোনো সমস্যা না হয়।
মন্তব্য করুন