জ.ই. আকাশ, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৪, ০৪:২৪ এএম
অনলাইন সংস্করণ

ইছামতী নদীতে নাব্যতা সংকট, নদীর বুকে ধান চাষ

ইছামতী নদীতে ধান চাষ। ছবি : : কালবেলা
ইছামতী নদীতে ধান চাষ। ছবি : : কালবেলা

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতী নদী নাব্যতা হারিয়ে যেন মরা খালে পরিণত হয়েছে। মরা নদীতে বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করছেন নদী তীরবর্তী কৃষকরা।

বছর তিনেক আগে নদীটি খনন করা হলেও তেমন কোনো কাজে আসেনি। নদী খননের সময় খননকৃত মাটি নদীর তীর ঘেঁষে রাখায় বৃষ্টিতে সেই মাটি পুনরায় নদীতে এসে ভরাট হয়ে যায়। ফলে নদী খনন যেন অনেকটাই বিফলে রূপ নেয়। নদীটি পুনঃখনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানিয়েছেন স্থানীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক সময়ের প্রমত্তা ইছামতী বর্তমানে যৌবন হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। মূলত বর্ষা মৌসুমে এক-দুই মাস নদীতে পানি দেখা গেলেও বর্ষা মৌসুম শেষ হতে না হতেই আবার নদীটি তার আপন সত্তা হারিয়ে শুকিয়ে যায়। ফলে নদী তীরবর্তী কৃষকরা প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চলতি মৌসুমে বোরো ধান চাষ করছেন। অথচ এই নদীতে নব্বই দশকের মাঝামাঝিতেও চৈত্র-বৈশাখ মাসে ছিল অথৈ পানি। ছিল দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন রকমের মাছ। এছাড়াও উপজেলার সর্ববৃহৎ ঝিটকার হাটে বিভিন্ন জেলা থেকে নৌপথে মালামাল আনা নেওয়া হতো। নদীর নাব্যতা সংকটে এখন আর ব্যবসায়ীরা নৌপথে মালামাল আনা নেওয়া করতে পারে না।

এই নদীর সাথে সংযোগ একাধিক খাল স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়ায় বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমিতে পানি প্রবেশ করতে না পারায় কৃষি জমির উর্বরতাও হ্রাস পেয়েছে বলে দাবি করেন কৃষকরা। নদীতে আগের মতো পানি না থাকায় দেশীয় প্রজাতির মিঠা পানির মাছেরও অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে নদীকেন্দ্রিক জেলেরাও বেকার হয়ে ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন বলে জানান জেলেরা। গ্রীষ্ম মৌসুম শুরু হতে না হতেই নদীর তলায় বোরোধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ হচ্ছে। অনেক জায়গায় নদী হয়ে পড়েছে পানিশূণ্য হাহাকার।

সরেজমিনে দেখা যায়, ইছামতী নদীটি পদ্মা-যুমনা অববাহিকায় জেলার দৌলতপুর, ঘিওর ও শিবালয় উপজেলা হয়ে হরিরামপুরের বাহাদুরপুর এলাকায় এসে পদ্মায় মিলিত হয়েছে। বাহাদুরপুর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য উপজেলার ঝিটকা বাজার সংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত পানি শূণ্য হয়ে নাব্যতা সংকটে একেবারে নদীর তলা শুকিয়ে গেছে। এতে করে ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য নদীর বুক জুড়ে রয়েছে সবুজ বোরো ধানের সমারহ।

কৃষকরা দাবি করে বলেন, এভাবে চলতে থাকলে এক সময় হয়তো নদীর প্রাণ হারিয়ে মানচিত্র থেকে মুছে যাবে। তাই নদীর অস্তিত্ব সংকট কাটিয়ে খনন ও সংস্কার করা জরুরি। নদীর তলদেশে পানি থাকায় এ অঞ্চলের কৃষকরাও সেচ পদ্ধতিতে পানি সংকটে পড়ে।

তবে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ৬৪ জেলার অভ্যন্তরে ছোট নদী, খাল, জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের আওতায় ২০২০/২১ অর্থবছরে ১৫ কোটি টাকা ব্যয় দৌলতপুর থেকে হরিরামপুরের বাহাদুরপুর পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ইছামতী নদী পুনঃখনন করা হয়।

কৃষির ওপর নাব্যতা সংকটের প্রভাব প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি অফিসার মো. তৌহিদুজ্জামান খান কালবেলাকে বলেন, নাব্যতা সংকট এখন সারাদেশেই ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। গ্রামীণ জনপদ উন্নয়নে নদীর সাথে সংযোগ অনেক খালগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এভাবে যদি ধারাবাহিক নাব্যতা সংকট দেখা যায়, তাহলে কৃষির উপর একটা প্রভাব পড়বে। তাই যত দ্রুত সম্ভব নাব্যতা সংকট রোধে কাজ করা প্রয়োজন।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দীন কালবেলাকে জানান, তিন বছর আগে আমরা ইছামতী নদী খনন করেছিলাম। এখন আবার নদীর প্রবেশ মুখ ভরাট হয়ে গেছে। এ জন্য নদীর প্রবেশ খননের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অনুমোদন পেলেই আমরা আবার যতটুকু প্রয়োজন খননের কাজ শুরু করব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যারা মন্দিরে হামলা করত তারা দেশে নেই : এটিএম আজহার

চট্টগ্রামে ‘সমুদ্র পরিবেশ রক্ষা ব্যালাস্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক প্রযুক্তিগত সেমিনার

‘দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় না’

নিখোঁজের ছয় ঘণ্টা পর ডোবা থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার

মেঘনার তীরে দেখা মিলল রাসেল ভাইপারের, অতঃপর...

স্বামীর ছুরিকাঘাতে গার্মেন্টস কর্মী স্ত্রী নিহত

বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নে সাভারে ব্যাপক গণসংযোগ

খেলাধুলা চর্চার মধ্য দিয়েই গড়ে উঠবে মাদকমুক্ত জাতি : আমিনুল হক

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না : সাইফুল হক

যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, বহু হতাহত

১০

বৃষ্টি আর কতদিন থাকবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

১১

ইলিয়াস কাঞ্চনের মৃত্যুর গুজব, যা বললেন ছেলে জয়

১২

শান্তিতে নোবেলজয়ী মারিয়াকে প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন

১৩

দলে দলে ঘরে ফিরছে হাজারো গাজাবাসী

১৪

সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

১৫

রাজধানী থেকে বগুড়া শহর আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেপ্তার

১৬

হেফাজতে ইসলাম সবার জন্য পরামর্শকের দায়িত্ব পালন করছে :  এ্যানি

১৭

দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

১৮

রাবি প্রশাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের অভিযোগ

১৯

ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কার উৎসর্গ করলেন মারিয়া

২০
X