পঞ্চগড় প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৪, ১০:৪৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

দক্ষিণ এশিয়ার সেরা গোলরক্ষকের জুটত না দুই বেলা খাবার

সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবল দলের গোলরক্ষক ইয়ারজান বেগম ও তার বসতভিটা। ছবি : কালবেলা
সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবল দলের গোলরক্ষক ইয়ারজান বেগম ও তার বসতভিটা। ছবি : কালবেলা

অজপাড়াগাঁয়ে ভাঙাচোরা ঝুপড়ি ঘরের সন্তান ইয়ারজান বেগম। বাঁশের বেড়ার ফাঁক গলে বাইরে থেকে চোখে লাগে ঘরের ভেতরকার মানবেতর ছবি। রোববার রাতে সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের নেপাল জয়ের পর দেশের নারী ফুটবলর মঞ্চে খোদাই হয়ে যায় এক গোলরক্ষকের নাম।

কিশোরী ইয়ারজান হয়ে গেলেন বাংলাদেশের প্রাণ। ইয়ারজান বেগম যেন নারী ফুটবলের নয়া প্রতীক। অসুস্থ বাবা আর শ্রমিক মায়ের কষ্টকে শক্তিতে রুপ দিয়ে ইয়ারজানই এখন ১৬ বছর বয়সীদের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা গোলরক্ষক। ফুটবলপ্রেমের আড়ালে এ জয়িতার আছে মর্মস্পর্শী এক জীবনগল্প।

ইয়ারজানের অসাধারণ নৈপুণ্যে ভারতের বিপক্ষে ৩-২ গোলে জয় পান লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। ভারতের বিপক্ষে দেশকে জেতাতে পারলেও দারিদ্রতার কবল থেকে নিজের পরিবারকে জেতাতে পারেননি এ গোলরক্ষক। ইয়ারজানের মায়ের কষ্ট, বাবার অসুস্থতা হার মানায় শত বিশ্ব জয়কে।

পঞ্চগড় উপজেলা সদরের হাড়িভাসা ইউনিয়নের খোপড়াবান্দি গ্রামের ঝুপড়ি ঘরে বাবা-মা ও ছোট বোনের সঙ্গে থাকেন সাফ জয়ী তারকা ইয়ারজান। অভাবের সংসারে দুই বেলা খাবার জুটত না তাদের। ইয়ারজানের অসুস্থ বাবা কাজ করতে পারেন না। অন্যের জমিতে দেড় থেকে দুইশ টাকা মজুরি দিয়ে সংসারের চাকা সচল রাখেন তার মা রেনু বেগম।

প্রত্যন্ত এলাকার গরীব ঘরের মেয়ে হওয়ায় তার ফুটবল খেলাকে বাঁকা চোখে দেখতেন কেউ কেউ। তবে লোকলজ্জা পেছনে ফেলে এগিয়ে যান ইয়ারজান। হাড়িভাসা স্কুলের ফুটবল দলে খেলে তিনবার জেলা চাম্পিয়ন হয়েছিলেন। সর্বশেষ সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে দেশের হয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনেন। এতেই উৎসবে মাতেন এলাকারবাসী। মিস্টি বিতরণ করেন সবার মাঝে। বাঁকা চোখে দেখা মানুষরা এখন গর্ব করেন ইয়ারজানকে নিয়ে।

ইয়ারজানের বাবা আব্দুর রাজ্জাক জানান, ‘স্ত্রীর দুই-আড়াইশ টাকা দিয়ে তাদের সংসার চলে। মেয়েকে প্রতিদিন ভাড়া দিতে পারতেন না। তাকে খেলতে নিষেধ করলেও মানতো না। ধার দেনা করেই মেয়ের ফুটবল খেলার টাকা জোগাড় করতেন তারা।

ইয়ারজানের মা রেনু বেগম জানান, মেয়ের ফুটবল খেলার জন্য অনেক মানুষ কটুকথা বলতেন। তবে প্রতিবাদ করতেন না। বিশ্বাস ছিল মেয়ের প্রতি। এখন সেই বিশ্বাস ও স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।

টুকু ফুটবল একাডেমির পরিচালক টুকু রেহমান জানান, অনেক কষ্ট করে অনুশীলনে যেত। গ্রামের মানুষের অনেক কথা শুনতে হয়েছে তাকে। তার খেলার প্রতি আগ্রহ দেখে অবাক হতেন।

বাফুফের মহিলা কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ জানান, ফুটবল ফেডারেশন থেকে ইয়ারজানকে ট্রেনিং থেকে শুরু করে সব কিছুতে সবসময় সহযোগিতা করা হয়েছে। সরকারকে ইয়ারজানের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান তার।

ফাইনাল শেষে ইয়ারজানের আনন্দ অশ্রু সবাই দেখলেও দারিদ্রতা জয়ের অশ্র আড়ালেই থেকেছে। সামনে দীর্ঘ পথ ধরে এগিয়ে যাওয়ার হাত ছানি ইয়ারজানের। সেই এগিয়ে যাওয়ার সারথি হতে ফেডারেশন ও সরকারকে পাশে চান এলাকাবাসী।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নিয়োগ দিচ্ছে আকিজ গ্রুপ

মধ্যপ্রাচ্যে খাদ্য সহায়তায় নতুন কৌশলে যুক্তরাষ্ট্র

গায়েহলুদে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে বর-কনে

১৩ মাসে কোরআনের হাফেজ হলেন শিশু মাকসুদুর

বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকে চাকরির সুযোগ, দ্রুত আবেদন করুন

আজ থেকে ঘরে বসেই মেট্রোরেলের কার্ড রিচার্জ করবেন যেভাবে

‘পরিমার্জিত’ শান্তি পরিকল্পনায় একমত যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন 

প্রাণ গ্রুপে বড় নিয়োগ, লাগবে না অভিজ্ঞতা 

চোর সন্দেহে শাহিনকে গণপিটুনি, অতঃপর...

অনলাইনে ইসরায়েলের পক্ষে কার্যকলাপের দায়ে ৮ বছরের কারাদণ্ড

১০

ঢাকায় দিনের তাপমাত্রা কেমন থাকবে জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

১১

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

১২

মঙ্গলবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৩

২৫ নভেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৪

অবসর নিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক

১৫

বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার বিএনপির দুই নেতার

১৬

ভূমিকম্প: প্রশাসনের জরুরি পদক্ষেপ, ভাঙা হবে ২৪ ভবন

১৭

পর্তুগালের কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেল ব্রাজিল

১৮

‘এলডিসি উত্তরণ ও বন্দর নিয়ে কেবল নির্বাচিত সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে’

১৯

দেশের ৮১ সরকারি কলেজ স্থান পেল ‘এ’ ক্যাটাগরিতে

২০
X