কোনো নির্দিষ্ট সময় নয়, সারা বছরই বাজারে শসার চাহিদা থাকায় মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে শসা চাষ করেছেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার চাষি সোহেল হক। এ বছর শসার বাম্পার ফলন আর রমজানের বাজারে আশানুরূপ মূল্য পাওয়ায় তার চোখে-মুখে হাসি ফুটেছে।
চাষি সোহেল হক উপজেলার সদর ইউনিয়নের মহালক্ষীপাড়া এলাকার বাসিন্দা। এ বছর উপজেলা কৃষি অফিসের দিক নির্দেশনায় উন্নত জাতের শসা চাষ করেছেন। ফলন ভালো হওয়ায় ও বাজারে আশানুরূপ মূল্য পাওয়ায় শসা চাষে ব্যয়ের দ্বিগুণ লাভ পাওয়ার আশা করছেন তিনি।
জানা গেছে, চাষি সোহেল হক উন্নত জাতের শসা আবাদ করে কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী ফসলের পরিচর্যা করছেন। ভালো ফলনের লক্ষ্যে সময়মতো কৃষি অফিসের সবধরনের নির্দেশনা মানায় এবং অনুকূল আবহাওয়া পাওয়ায় আশানুরূপ শসা উৎপাদন হচ্ছে তার। এসব উৎপাদিত শসা স্থানীয় বাজারসহ আশপাশের উপজেলা ও জেলা শহরে সরবরাহ হচ্ছে। রমজানের বাজারে শসার স্বাভাবিক চাহিদার চেয়ে চাহিদা বেশি থাকায় বাজারমূল্যও বেশি পাচ্ছেন তিনি। যার ফলে শসা চাষে তিনি এ বছর দ্বিগুণ লাভের স্বপ্ন দেখছেন।
চাষি সোহেল হক কালবেলাকে বলেন, প্রতিবছরই আমি শসার আবাদ করি। এ বছর উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে ৪৭ শতক জমিতে উচ্চ ফলনশীল শসার আবাদ করেছি। বীজ বপনের পর শসার চারা কিছুটা বড় হওয়ার পর শসা গাছের লতা দ্রুত বেড়ে ওঠার জন্য মাচায় উঠিয়ে দিই। অল্প কিছু দিনে এসব লতা মাচায় জড়িয়ে বেড়ে ওঠে। আরও কিছুদিন যাওয়ার পর ফুল ও শসা ধরতে শুরু করে। ক্ষতিকারক পোকা থেকে শসাগাছকে সুরক্ষা দিতে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের পরামর্শ নিই। এ বছর শসার ফলন খুব ভালো হয়েছে। চলমান রমজানের বাজারে শসার চাহিদা থাকায় দামও পাচ্ছি ভালো। শসা আবাদে যাবতীয় খরচ বাদে আশা করছি দ্বিগুণ লাভ পাব। আগামী বছর আরও বেশি জমিতে শসার আবাদ করার ইচ্ছে আছে।
তিনি আরও বলেন, আমার উৎপাদিত এসব শসা পাইকারদের মাধ্যমে স্থানীয় বাজারসহ আশপাশের উপজেলা ও জেলা শহরে যাচ্ছে।
স্থানীয় পাইকারি ব্যবসায়ী আমির হোসেন কালবেলাকে বলেন, এখন রমজান মাস চলছে। রমজানে ইফতারের সময় শসার ব্যবহার হয়। যে কারণে বাজারে শসার চাহিদা ও দাম দুটোই ভালো। খুচরা ব্যবসায়ীদের চাহিদা মেটাতে সোহেলের কাছ থেকে শসা সংগ্রহ করে এসব শসা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। এতে আমারও ভালো লাভ হচ্ছে। বর্তমান খুচরা বাজারে ভালো মানের শসা ৬০-৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুদ রানা কালবেলাকে বলেন, শরীরের পানির ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে শসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সবজি। এতে রয়েছে ভিটামিন কে, সি, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ক্যালসিয়ামি ইত্যাদি উপাদান। অন্যান্য ফসলের চেয়ে শসার উৎপাদন খরচ কম, কিন্তু কৃষকের লাভ তুলনামূলক বেশি। শসার চাহিদা বাজারে সারা বছরই ভালো থাকে। ব্রাহ্মণপাড়ার কৃষকরা দিন দিন সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভজনক হওয়ার কারণে শসা চাষ করে মহিলা, বেকার যুবকসহ ছাত্ররাও স্বাবলম্বী হতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, আধুনিক পদ্ধতিতে যেমন : মালচিং পদ্ধতিতে শসা চাষ করলে অধিক লাভবান হওয়া যায়। ব্রাহ্মণপাড়া সদর ইউনিয়নের মহালক্ষীপাড়া গ্রামের সোহেল একজন আদর্শ কৃষক। তিনি আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে শসা চাষে সফল হয়েছেন। অন্যান্য কৃষকরাও তার সফলতায় অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। শসাসহ অন্যান্য ফসল চাষে উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্য করুন