মানিকগঞ্জে ভয়ভীতি দেখিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন, টিনের ঘর এবং গাছ নিলামের সিডিউল ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৪ মার্চ নিলাম কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মানিকগঞ্জ সদর উপজেলাধীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন, অকেজো, জরাজীর্ণ ভবন, টিনের ঘর এবং গাছ নিলামে বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তীতে ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১৪ মার্চ থেকে সিডিউল ক্রয় শুরু হয়ে রোববার (২৪ মার্চ) বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিক্রয় শেষ হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ২৪৪টি সিডিউল বিক্রয় হয়। সিডিউল জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল সোমবার (২৫ মার্চ) বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৬২টি সিডিউল জমা হয়েছে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
সিডিউল ক্রয় করে জমা দিতে পারেননি জাহিদুর রহমান নামে এমন একজন ঠিকাদার অভিযোগ করে বলেন, আমি পূর্ব দাশড়া, চরমত্ত এবং কৃষ্মপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনটি সিডিউল ক্রয় করেছিলাম। কিন্তু রোববার (২৪ মার্চ) সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক রুবেল, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও মানিকগঞ্জ পৌরসভার প্যানেল মেয়র আব্দুর রাজ্জাক রাজার ছোটভাই আল রাফি আমাকে ফোন করে কথা আছে জানিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ইসরাফিলের অফিসে ডেকে নিয়ে যান। এরপর তারা আমার কাছ থেকে তিনটি সিডিউল জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয় এবং বিষয়টি নিয়ে আমি যেন কারও সঙ্গে আলোচনা না করি জানিয়ে আমাকে হুমকি দেয়।
তিনি বলেন, শুধু আমার সিডিউল নয়, আমার মতো আরও যারা সিডিউল ক্রয় করেছে প্রায় সবার কাছ থেকে শিডিউল তারা নিয়ে গেছে।
সাজু নামে আরেক ঠিকাদার বলেন, প্রভাবশালী এসব সিন্ডিকেটের কারণে কাজ করাই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিন্ডিকেটের বাইরে গিয়ে কাজ করার সুযোগ নেই বলে আমি সিডিউল ক্রয় করিনি।
সোমবার (২৫ মার্চ) দুপুর ১টার দিকে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, আ.লীগ নেতা এনামুল হক রুবেল, যুবলীগ নেতা আল রাফি, আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ ১৫-২০ জন যুবলীগ নেতা তাদের সিডিউল জমা দিয়ে শিক্ষা অফিসের বারান্দায় সিডিউল ভক্সের সামনে বসে আছে। তাদের ভয়ে আর যারা সিডিউল ক্রয় করেছিলেন তাদের কেউ অফিসে আসেনি। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীরা পরিস্থিতি ভিডিও করতে গেলে তারা বাধা সৃষ্টি করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক রুবেল বলেন, সিডিউল ছিনতাইয়ের অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, এ রকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি। কাউকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। যারা এ রকম অভিযোগ করেছে এবং যে এটা নিয়ে নিউজ করবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
এদিকে সিডিউল জমাদানের নির্দিষ্ট সময়ের পর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, নিলাম বিজ্ঞপ্তির পর ২৪৪টি সিডিউল বিক্রয় হলেও সিডিউল জমা পড়েছে মাত্র ৬২টি। কিছু সিডিউল বাতিল হয়েছে এবং অধিকাংশই জমা পড়েনি। সকাল থেকে সরকারি দলীয় যুবলীগের নেতাকর্মীরা অফিস ঘিরে বসে থাকায় যারা সিডিউল ক্রয় করেছিলেন তারা কেউ জমা দিতে আসেনি।
সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোয়াজ্জেম হোসেন কালবেলাকে বলেন, সিডিউল জমা দেওয়া নিয়ে কোনো সমস্যা আমাদের নজরে পড়েনি। কাউকে সিডিউল জমাদানে বাধা দেওয়া হয়েছে কিনা সেটাও কেউ জানায়নি। অফিসের আশপাশে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর আমরা পাইনি।
নিলাম কমিটির সভাপতি এবং সদর ইউএনও লিটন ঢালী কালবেলাকে জানান, সিডিউল ছিনতাইয়ের বিষয়টি তার জানা নেই। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে দরদাতাকে পূর্ণ সহযোগিতা করার কথা জানান তিনি।
মন্তব্য করুন