পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে ৩ লাখ টাকা ঋণ করে সৌদি আরব গিয়েছিলেন মাদারীপুরের জোবায়ের ঢালী (৩৫)। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সৌদি আরব গিয়ে সোফা কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুনে পুড়ে মারা যান তিনি। জোবায়ের ঢালীর বাড়ি মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার আলিনগর ইউনিয়নের সস্তাল এলাকায়। তিনি ওই এলাকার ইউনুস ঢালী ও হালানী বেগমের ছেলে।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ৫ ভাইবোনের মধ্যে জোবায়ের সবার বড়। এ ছাড়া তার পরিবারে স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তান রয়েছে। অভাব-অনটনের সংসারে সচ্ছলতা ফেরানোর জন্য ২ বছর আগে ৩ লাখ টাকা ঋণ করে সৌদি আরবে পাড়ি জমান জোবায়ের ঢালী। সেখানে গিয়ে আল আহসা শহরের হুফুফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটি এলাকায় একটি সোফা কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন। গত শুক্রবার বিকেলে কারখানাটিতে আগুন লেগে জোবায়েরসহ ১০ জনের মৃত্যু হয়। পরে এক নিকট আত্মীয়র মাধ্যমে জোবায়েরের মৃত্যুর খবর পায় স্বজনরা।
শনিবার বিকেলে জোবায়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানভর্তি অনেক মানুষ। এত মানুষ এ বাড়িতে আর কখনো দেখেনি ৬ বছরের আবদুল্লাহ আর তার বোন ৪ বছরের আয়েশা। তাই অপলক দৃষ্টিতে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল ওরা। কিন্তু অবুঝ এ শিশু দুটি জানে না তাদের বাবা আর বেঁচে নেই। তাদের বাবা আর কোনোদিন ফিরে এসে তাদের কোলে নেবে না। স্ত্রী শারমিন বেগম কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন।
শারমিন বেগম বিলাপ করে বলেছিলেন, আল্লাহ আমারে এ কি শাস্তি দিল। আমার অবুঝ বাচ্চাগুলা এতিম হইয়া গেল। ওরা এখন কারে বাবা বলে ডাকব। শেষবারের মতো ওর বাবার মুখটা দেখতে চাই।
জোবায়ের ঢালীর বাবা ইউনূস ঢালী বলেন, আমাদের সব আশা শ্যাষ হইয়া গেল। বাবায় আমাগো সবাইরে ছাইড়া দূরে চলে গেল। এখন সরকারের কাছে একটাই দাবি আমার সন্তানের লাশ যেন দ্রুত আনা হয়। আর এই অবুঝ বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকাইয়া প্রধানমন্ত্রী যেন আমাদের পাশে দাঁড়ায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদারীপুর কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পিংকি সাহা বলেন, আমরা খবর পাওয়ার পর পরিবারটির খোঁজখবর নিচ্ছি। নিহতের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব। এ ছাড়া নিহতের পরিবার আবেদন করলে আমাদের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।
মন্তব্য করুন