হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

গরমে গরিবের এসি যেন মাটির ঘর

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর। ছবি : কালবেলা
গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর। ছবি : কালবেলা

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর। শীত-গ্রীষ্ম সব ঋতুতেই মাটির ঘর আরামদায়ক বাসস্থান। দেশে চলছে গ্রীষ্মকাল। গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহ আর গরমে অতিষ্ঠ দেশের মানুষ। এ তীব্র গরমে মাটির ঘর যেন গরিব মানুষদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তীব্র গরমেও মাটির ঘরের ভেতরে বিরাজ করে ঠান্ডা। তাই গরিব মানুষের জন্য এসব মাটির ঘর যেন এসি।

একটা সময় দেশের প্রতিটি গ্রামে গ্রামেই মাটির ঘর পাওয়া যেত। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশের মতো কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার চির ঐতিহ্যের নিদর্শন সবুজ শ্যামল ছায়াঘেরা শান্তির নীড় মাটির ঘর। যা এক সময় ছিল গ্রামের মানুষের কাছে মাটির ঘর বা গরিবের এসি বাড়ি নামে পরিচিত।

মাটির

ঘরের কদর কমিয়ে দিয়েছে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন ও বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এসব মাটির ঘর ঠান্ডা থাকায় এক সময় এটাকে গরিবের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরও বলা হতো। এ ঘর গরমের সময় আরামদায়ক। তাই অনেক গ্রামেই বিত্তশালীদের দোতলা মাটির ঘরও ছিল।

এ উপজেলার অনেক গ্রামে এখনো রয়েছে মাটির ঘর। উপজেলার সিদলা, ধূলজুরী, পুমদিসহ কয়েকটি অঞ্চল ঘুরে চোখে পড়েছে কয়েকটি মাটির ঘর। ঝড়-বৃষ্টি থেকে বাঁচার পাশাপাশি তীব্র গরম ও কনকনে শীতে আদর্শ বসবাস-উপযোগী মাটির ঘর। এসব ঘর শুধু মাটির বাড়িই নয়, ছিল ধান-চাল রাখার জন্য মাটির তৈরি গোলা ঘর ও কুঠি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় একসময় প্রায় প্রতিটি ঘর ছিল মাটির তৈরি। কিন্তু আধুনিকতার স্পর্শে এখন মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। গ্রামে গ্রামে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। গ্রামীণ অর্থনীতির গতি সচল হওয়ায় মাটির ঘরের পরিবর্তে তৈরি হচ্ছে পাকা ঘর। কয়েক বছর পর পর মাটির ঘর সংস্কারের ঝক্কি-ঝামেলা ও ব্যয়বহুল দিক পর্যবেক্ষণ করে মাটির ঘরের পরিবর্তে দালান-কোটা বানাতে উৎসাহী হয়ে উঠেছেন এখানকার মানুষ।

উপজেলার ঢেকিয়া গ্রামের জসিম উদ্দিন জানান, মাটির ঘর তৈরি করতে প্রথমে এটেল বা আঠালো মাটি কাদায় পরিণত করে দুই-তিন ফুট চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হতো। ১০ থেকে ১৫ ফুট উঁচু দেয়ালে কাঠ বা বাঁশের সিলিং তৈরি করে তার ওপর খড় অথবা টিনের ছাউনি দেওয়া হতো। এসব মাটির ঘর তৈরি করতে কারিগরদের সময় লাগত দেড় থেকে দুই মাস। এক সময় আমাদের এলাকার প্রতিটা ঘর মাটি দিয়ে তৈরি করা হতো। অনেকেই মাটি, বাঁশ, টিন সংগ্রহ করে নিজেরাই মাটির ঘর তৈরি করত।

তিনি আরও বলেন, ভূমিকম্প বা বন্যা না হলে একটি মাটির বাড়ি শত বছরেও বেশি স্থায়ী হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে কালের বিবর্তনে ইটের দালানকোটা আর বড় বড় অট্টালিকার কাছে হার মানছে মাটির বাড়িঘর। মাটির ঘরে দেয়ালে কাঠ বা বাঁশের শিলিং তৈরি করে তার ওপর খর বা টিনের ছাউনি দেওয়া হতো। মাটির বাড়িঘর অনেক সময় দোতলা পর্যন্ত করা হতো। মাটির ঘর বড় মাপের হয় না। গৃহিণীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাটির দেয়ালে বিভিন্ন রকমের আল্পনা এঁকে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বর্ষা মৌসুমে মাটির বাড়িঘরের ক্ষতি হয় বলে বর্তমান সময়ে দীর্ঘ স্থায়িত্বের কারণে গ্রামের মানুষ ইটের বাড়ি নির্মাণের আগ্রহী হচ্ছেন।

উপজেলার ধূলজুরী গ্রামের গৃহিণী জেসমিন বেগমের বাড়িতে মাটির ঘর আছে। তিনি জানান, অর্থ সংকটে আজও তার টিনের ঘর তৈরি করা হয়নি। স্বামীর তৈরি করা মাটির ঘরটিতেই সন্তান স্বামী নিয়ে বসবাস করছেন তিনি। তাদের পূর্বপুরুষরাও এই মাটির তৈরি বাড়িতেই জীবন কাটিয়ে গেছেন।

হোসেনপুর আদর্শ মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক আশরাফ হোসেন সোহাগ জানান, মাটির বাড়ি বসবাসের জন্য আরামদায়ক হলেও যুগের পরিবর্তনে আধুনিকতার সময় অধিকাংশ মানুষ মাটির বাড়ি ভেঙে অধিক নিরাপত্তা ও স্বল্প জায়গায় দীর্ঘস্থায়ীভাবে অনেক লোকের নিবাসকল্পে গ্রামের মানুষরা ইটের বাড়িঘর তৈরি করেছেন। অনেকেই শখ করে আবার অনেকেই বাড়ি করার অর্থবিত্ত না থাকায় মাটির বাড়িতেই বসবাস করছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বায়ার্নের কোচ হবেন কি না জানালেন জিদান  

সুরা মুলক বাংলা উচ্চারণ, অর্থ ও ফজিলতসহ

ন্যাশনাল ব্যাংক দখল হয়নি : চেয়ারম্যান

খরচ কমাল আলোক ফাঁদ

কালবৈশাখী ঝড়ে দেয়ালচাপায় দুই নিরাপত্তাকর্মী নিহত

শনিবার স্কুল খোলার প্রতিবাদে ১ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালনের আহ্বান

দেশে এখন জিরো লোডশেডিং, দাবি প্রতিমন্ত্রীর

নাটোরে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী

বিএনপি অগণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতায় আসতে চায় : মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী

১০

ডিএনসিসির একার পক্ষে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় : মেয়র আতিক

১১

ম্যানেজার নেবে মেঘনা গ্রুপ, পদসংখ্যা অনির্ধারিত

১২

তিন মাসে বেকার বেড়েছে প্রায় আড়াই লাখ 

১৩

ধানের পরিবর্তে চিটা, সর্বস্বান্ত কৃষক

১৪

‘শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপজেলা পর্যন্ত পালন করা হবে’

১৫

তিস্তার চরের মিষ্টি কুমড়ায় কৃষকের মুখে হাসি

১৬

সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে / কোথাও আগুন জলছে কি না ড্রোন উড়িয়ে দেখছে বনবিভাগ

১৭

উপকূলে লবণাক্ততার কারণে আবাদি জমিকে আবাদযোগ্য করা হবে : কৃষিমন্ত্রী 

১৮

অফিসার পদে উরি ব্যাংকে নিয়োগ, কর্মস্থল ঢাকা

১৯

সুন্দরবনের আগুন কয়েকদিন পর্যবেক্ষণে থাকবে : মন্ত্রিপরিষদ সচিব

২০
X