সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ফকির লালন সাঁইয়ের গানের দুটি চরণ লিখেছিলেন শরিয়তপুরের বাসিন্দা সঞ্জয় রক্ষিত (৪০) নামের এক স্বর্ণকার। পরে এ ঘটনায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঘটনাটি লালন ভক্তসহ সব মহলে উদ্বেগ ছড়ায়। আর এজন্যই সোমবার (৬ মে) বেলা ১১টার দিকে বগুড়া শহরের সাতমাথায় মুজিব মঞ্চে দিনব্যাপী ‘সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে’ শীর্ষক এক কর্মসূচি পালন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।
এতে যে চরণ দুটি লেখায় সঞ্জয়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল সেই গানটি গাওয়া হয়। কর্মসূচিতে লালনের গান ও পদ পরিবেশনা, নাটক, বক্তৃতার মাধ্যমে গ্রেপ্তারের ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লালন ফকিরের বিরুদ্ধে নানা নেতিবাচক প্রচারণাও চালাচ্ছেন, যা প্রগতিশীল সংস্কৃতিকর্মীদের ক্ষুব্ধ করেছে বলে জানানো হয়।
প্রতিবাদ কর্মসূচিতে লালনের ‘এমন সমাজ কবে গো সৃজন হবে’, ‘সময় গেলে সাধন হবে না’, ‘জাত গেল জাত গেল বলে, আমারে কি রাখবেন গুরু চরণদাসী’, ‘মিলন হবে কত দিনেসহ’ বিখ্যাত গানগুলো পরিবেশন করা হয়। কর্মসূচিতে গান পরিবেশন করেন লালন শিল্পী সুকুমার বাউল, হাফিজ বাউল, জগদীশ বাউল, কামরুল নাহার ডালিয়া ও নিখিল চন্দ্র।
এ প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উদীচী বগুড়ার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মামুদুস সোবহান মিন্নু, বগুড়া জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ফরিদ, বগুড়ার জলেশ্বরীতলা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডনিস বাবু তালুকদার, জোটের সহসভাপতি লায়ন আতিকুর রহমান মিঠু, এ বি এম জিয়াউল হক বাবলা, হাকিম এম এ মজিদ মিয়া, আসাদ হোসেন, সহসাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, সংশপ্তক থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান সুজন, থিয়েটার আইডিয়ার পরিচালক নিভা রানী সরকার পূর্ণিমা, কবি আজিজার রহমান তাজ ও মির্জা আহসানুল হক দুলাল।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বগুড়ার সভাপতি তৌফিক হাসান ময়না বলেন, বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ লালন সাঁইজির একটি গানের দুটি চরণ ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন এক যুবক। ধর্ম অবমাননার কথা তুলে তাকে গ্রেপ্তার এবং তার পরবর্তী সময়ে নানা রকম প্রেক্ষাপট তৈরি করে সারা দেশে একটি তাণ্ডব পরিচালনা করার যে আয়োজন দেখতে পাচ্ছি, সেটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য ভয়ংকর। আমরা বোধ হয় খুব বেশি দিন দূরে নেই। যেখানে এই বাংলাদেশকে দেখতে পাব বাঙালি সংস্কৃতিশূন্য, লালনশূন্য। গ্রামের পর গ্রামে লালন অপদস্থ হচ্ছেন। আমরা বগুড়ায় প্রতিবাদ করছি কিন্তু লালনকে লালনের সেই গ্রামে, লালন শিল্পীদের গ্রামে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
মন্তব্য করুন