ভাঙা রাস্তা মেরামতের জন্য একাধিকবার জনপ্রতিনিধিদের কাছে গিয়েও মেলেনি সমাধান। শেষে নিজের খরচে রাস্তা মেরামতের কাজে লেগে পড়েন দরিদ্র ভ্যানচালক মিস্টার আলি। খরচ জোগাতে এবার নিজের চার্জার ভ্যানের ব্যাটারি বিক্রি করেছেন তিনি।
ভাঙা রাস্তা মেরামত করায় যেন তার পেশা ও নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তা মেরামতের পাগল হিসেবে এলাকায় সবার কাছে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি।
গত সোমবার (৩ জুন) সরেজমিনে দেখা যায়, তপ্ত দুপুরেও থেমে নেই ষাটোর্ধ্ব মিস্টার আলী। চৌকা-মনাকষা রাস্তার একটি ভাঙা অংশ মেরামতের কাজে ব্যস্ত তিনি। সরু এ রাস্তার পাশের মাটি নেমে গেছে। উঠে গেছে পিচ কার্পেটিং। জানা গেছে, ১২-১৩ বছর থেকে ভাঙা রাস্তা মেরামতের কাজ করছেন তিনি। নিজের আয় রোজগারের টাকা, ঋণের টাকা খরচ করে রাস্তার মেরামতের কাজ করছেন। ভাঙা রাস্তা মেরামতের জন্য নিজের ঘরের দেয়াল ভেঙে নিয়ে গেছেন ইট। বিক্রি করেছেন বাড়ির গাছ-গাছালি। নিষেধ করেও থামানো যায়নি তার ‘রাস্তা মেরামতের’ নেশা।
ভ্যানচালক মিস্টার আলি জানান, ১২-১৩ বছর আগে বর্ষা মৌসুমে রিকশা নিয়ে বের হয়ে ভাঙা রাস্তায় রিকশা নিয়ে আটকে যান তিনি। ভাঙ্গা রাস্তায় দুই দিকে তার মতো আটকে আছে রিকশা, ভ্যান ও মাইক্রোবাস। তিনি নেমে পড়েন ভাঙা রাস্তার আশপাশে ইট ও খোয়া কুড়াতে। কুড়ানো ইট-খোয়া ভাঙা রাস্তায় ফেলে রাস্তা পার হওয়ার উপযোগী করেন। এই রাস্তা মেরামতের মধ্য দিয়েই শুরু হয় তার ভাঙা রাস্তা মেরামতের কাজ।
তিনি জানান, রাস্তায় রিকশা, ভ্যান নিয়ে চলাচলের সময় দেখেছেন বিভিন্ন সময়ে ভাঙা রাস্তায় পড়ে দুর্ঘটনার ঘটনা। রিকশা উলটে পড়ে, গাড়ি উলটে মানুষের হাত-পা ভেঙে যাওয়া ও গাড়ির ক্ষতি হওয়া। একাধিকবার জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েও সমাধান হয়নি। পরে নিজ থেকেই তিনি রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু করেন।
উৎসাহ জোগাতে তৎকালীন ইউএনও আবুল হায়াত এবং শিবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মনিরুল ইসলাম ১০ হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তা দেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলজিইডি নির্বাহী অফিসার মোজাহার আলী প্রামানিক তাকে একটি প্রজেক্টে রাস্তা মেরামত কাজে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন।
পথচারী মনাকষা বাজার এলাকার একে আজাদ বাচ্চু বলেন, মিস্টার আলি দরিদ্র মানুষ হয়েও নিজ পরিশ্রমে, নিজ খরচে রাস্তা মেরামত করছেন। তার ভালো কাজের আমরা প্রশংসা করি এবং উৎসাহ জোগায়।
আরেক পথচারী মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম হোসেন মন্টু বলেন, মিস্টার আলি নিজে দরিদ্র হয়েও করছেন জনসেবা। কারো কাছ থেকে পয়সা না নিয়ে নিজ উদ্যোগে করছেন রাস্তা মেরামতের কাজ। এই কাজে তাকে সরকারি অথবা বেসরকারিভাবে সহযোগিতা করা দরকার।
মিস্টার আলির সম্পর্কে খোঁজ নিতে শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউপির পোড়াডিহি গ্রামে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার নিজের ঘর নেই। থাকেন ছেলের ঘরে। ঘরের দেয়ালের ইট খুলে নিয়ে রাস্তা মেরামত করেছেন। বাড়ির আঙিনায় রাখা একটি চার্জার ভ্যান। সম্প্রতি এ চার্জার ভ্যানের ব্যাটারি বিক্রি করেও রাস্তার মেরামতের কাজে খরচ করে ফেলেছেন।
মন্তব্য করুন