মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৪, ০৭:২৫ এএম
অনলাইন সংস্করণ

বন্যায় দিশেহারা মৌলভীবাজার-রাজনগরের দেড় লাখ মানুষ

মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলা আটটি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামই এখন পানিতে নিমজ্জিত। ছবি : কালবেলা
মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলা আটটি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামই এখন পানিতে নিমজ্জিত। ছবি : কালবেলা

প্যারালাইজড হয়ে দুই বছর ধরে পঙ্গু জুলেখা বেগম। ছেলে দিনমজুর। বন্যায় বন্ধ হয়ে গেছে কাজ তাই ঘরে নেই খাবার। সারাদিন তাদের ঘরের চুলোয় জ্বলেনি আগুন। অসুস্থ মাকে নিয়ে কোথায় যাবে এখন সেই চিন্তায় চোখে অন্ধকার দেখছেন ছেলে নুরুল মিয়া।

মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলা আটটি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামই এখন পানিতে নিমজ্জিত। মনু ও কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে দুদিন ধরে এসব গ্রামের পর গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। ডুবে গেছে রাস্তা ঘাট। বন্ধ হয়ে গেছে যান চলাচল। বসতঘর ছেড়ে মানুষ উঠেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। মৌলভীবাজার জেলার মনু, কুশিয়ারা ও জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে কেউ ছুটছেন স্বজনের বাড়ি আবার কেউ ছুটছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। তবে আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো পৌঁছায়নি ত্রাণ। তাই শুকনো চিড়া মুড়িই দিয়ে আহার নিবারণের চেষ্টা।

হামরকোনা গ্রামের বাসিন্দা নুরুল মিয়া বলেন, ‘আমার অসুস্থ মাকে আজ খাবার দিতে পারিনি। কাজে যেতে পারি নি। সরকারি কোন ত্রাণও আসেনি। আমরা খুব কষ্টে দিন পাড় করছি।’

দাউদপুর আশ্রয়কেন্দ্রে আসা রহিমা বলেন, ‘সাঁতার দিয়ে ঘর থেকে বাহির হয়ে এসেছি। আশ্রয়কেন্দ্রে এসে এখন আমরা খাদ্যের অভাবে পড়েছি।’

পাউবো সূত্রে জানা যায়, বিকেল ৩টায় মনু নদীর পানি কুলাউড়ায় রেলওয়ে ব্রিজে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ব্রিজে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সদর উপজেলার কুশিয়ারা নদী শেরপুর ব্রিজে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ‍ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে পানিবন্দি মানুষদের খোঁজখবর নিতে কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান।

মৌলভীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাসরীন চৌধুরী বলেন, সদর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ বন্যা আক্রান্ত। ১৩টির বেশি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে সবার নিকটবর্তী প্রাথমিক বিদ্যায়লয়গুলোকেই আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে গ্রহণ করা।

রাজনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুপ্রভাত চাকমা বলেন, আমরা চেষ্টা করছি বন্যা কবলিত মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে যেতে। এখন পর্যন্ত যারা এসেছেন তাদের জন্য খাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হবে। পাশাপাশি বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক উর্মি বিনতে সালাম জানান, জেলার সাতটি উপজেলায় শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ৫৬টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় পানিবন্দি লোকদের উদ্ধারে প্রয়োজনীয় তৎপরতা চালাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন।

মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বলেন, খলিলপুর ইউনিয়নের বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছি। কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রের বন্যাদুর্গত মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্র ও বন্যাদুর্গত এলাকার জন্য প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত ত্রাণের মজুদ আছে। ইতোমধ্যে বিতরণ শুরু হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৪ নারী পেলেন বেগম রোকেয়া পদক

সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পাসওয়ার্ড, কেন এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ

আইপিএল নিলামে বাংলাদেশের সাত ক্রিকেটার, জায়গা পাননি সাকিব

জামাল ভূঁইয়ার কাছ থেকে আইফোন উপহার নিলেন বরিশালের সানি বেপারী

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা কার বেশি, জানা গেল জরিপে

আলোনসোর ভবিষ্যৎ নিয়ে জরুরি বৈঠকে রিয়াল

স্বামীকে ত্যাগ নয় ,কাছে টেনে নিলেন ভারতীয় অভিনেত্রী

বাঁধ ভেঙে পানির নিচে ৫০০ একর আমন ক্ষেত 

ঢাকা কলেজ ও আইডিয়ালের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ

অ্যাশেজের শেষ তিন টেস্ট থেকে ছিটকে গেলেন অজি তারকা

১০

আলুবীজ উৎপাদনে বিপ্লব, টিস্যু কালচারে বছরে ২৫ লাখ প্লান্টলেট

১১

ভোট দিতে প্রবাসী নিবন্ধন ২ লাখ ৭৪ হাজার ছাড়াল

১২

জাপান / এক সপ্তাহের ‘শক্তিশালী ভূমিকম্পের’ সতর্কতা জারি

১৩

হেনস্তার শিকার ভারতীয় সংগীতশিল্পী

১৪

গুম-নির্যাতনের মামলা / ৩ সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে হাজির 

১৫

যুবদলের স্বেচ্ছাশ্রমে কাঠের সেতু, ২ ইউনিয়নের ভোগান্তি লাঘব 

১৬

আবু সাঈদ হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিতে ট্রাইব্যুনালে হাসনাত আব্দুল্লাহ

১৭

জন্ম থেকেই হাত নেই, ছোট আরশাদুল পা দিয়েই লেখে

১৮

ডিমেনশিয়ার ৬ শারীরিক লক্ষণ

১৯

নির্বাচনে বিএনপি বেশি আসনে জিতবে বলে মনে করছে ৬৬ শতাংশ মানুষ

২০
X