কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ মে ২০২৫, ০৭:০৬ পিএম
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০৮:৫৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ইশরাকের মেয়র পদের গেজেট নিয়ে রিটের শুনানিতে যা হলো

ইশরাক হোসেন। ছবি : সংগৃহীত
ইশরাক হোসেন। ছবি : সংগৃহীত

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া গেজেটের কার্যকারিতা স্থগিত চেয়ে করা রিটের ওপর আদেশের জন্য বুধবার (২১ মে) দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২০ মে) বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ সময় নির্ধারণ করেন।

এর আগে দুপুর ১টায় শুনানি শুরু হয়। চলে প্রায় ২টা পর্যন্ত। এরপর আদালতে বিকেল ৪টা ১০ মিনিট থেকে প্রায় সোয়া ৫টা পর্যন্ত শুনানি চলে। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন। ইশরাকের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এবং ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান মিলন ও খান জিয়াউর রহমান।

আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায় থেকে কয়েকটি ‘ভুল’ আদালতে তুলে ধরে রুল জারির আর্জি জানান। শুনানিতে তিনি বলেন, রিটকারী একজন আইনজীবী, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জনস্বার্থে তার রিট করার অধিকার আছে। নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে করা মামলার আবেদনে দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের ফলাফল বাতিল ঘোষণার দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু পরে আরজি সংশোধন করে নিজেকে মেয়র ঘোষণারও আবেদন জানানো হয়েছে। ইশরাকের করা মামলার এ আরজি সংশোধন আইন অনুযায়ী করা হয়নি। আইনে নির্ধারিত ৩০ দিনের পর আর্জি সংশোধন করা হয়েছে। আর্জিতে যাদের সাক্ষী করা হয়েছে তাদের সাক্ষ্য না নিয়ে অন্যজনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। বিচারক পদে পদে অনিয়ম ও আইন ঠিকমতো প্রয়োগ করেননি।

ইশরাকের আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, রিটকারী উপরে জনস্বার্থে এ রিট করেছেন। কিন্তু বাস্তবে নেপথ্যে ফজলে নূর তাপস ও উপদেষ্টা আসিফের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে এসেছেন। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনের ন্যাচার বিশেষ আইনের মতো, আর্জি সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। সাক্ষীদের ক্ষেত্রেও তাই। এছাড়া আইন অনুযায়ী বিবাবাদীপক্ষ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল না করে থার্ডপার্টির (তৃতীয়পক্ষের) হয়ে হাইকোর্টে এসে রিট করার সুযোগ নেই। রিটটি খারিজ করতে হবে। এছাড়া আদালতের সময় নষ্ট করার জন্য রিটকারী কষ্ট ইমপোজ (খরচ আরোপ) করতে হবে। আদালত উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে বুধবার আদেশের জন্য ধার্য করেন।

জানা যায়, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। তাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচন কমিশন ২ ফেব্রুয়ারি ভোটের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করে। এরপর শপথ নিয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তাপস। সেই নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে তাপস পেয়েছিলেন সোয়া চার লাখ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ইশরাক পান দুই লাখ ৩৬ হাজার ভোট। নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্ট মাসে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করা হয়। এরপর ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান মিয়া। এর মধ্যে গত ২৭ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম। আদালত ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেন। এ রায় পাওয়ার পর ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এদিকে গেজেট প্রকাশের দিন ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে দেওয়া রায় ও ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিল করতে আইনি নোটিশ দেন রফিকুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ নামে দুই ব্যক্তি। নোটিশে গেজেট প্রকাশ এবং ইশরাককে শপথ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।

তখন ওই দুই ব্যক্তির আইনজীবী বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া না মেনে দ্রুত রায়টি দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করেছিলাম, ইসি এই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করবে। চ্যালেঞ্জ করল না। আবার খবরে দেখলাম, আইন উপদেষ্টা বলছিলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের যে মতামত চাওয়া হয়েছিল, সেজন্য অপেক্ষা না করে এই নোটিফিকেশন জারি করে দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল এমন কোনো আদেশ দিতে পারেন না যে আদেশের কোনো কার্যকারিতা নাই। এখানে টার্ম শেষ হয়ে গেছে। অধ্যাদেশের মাধ্যমে মেয়র পদ শূন্য করে দেওয়া হয়েছে। পরে মামুনুর রশিদ হাইকোর্টে রিট করেন।

রিটে ২৭ মার্চের রায় এবং ২৭ এপ্রিলের গেজেট কেন বেআইনি হবে না এবং ইশরাক হোসেনের শপথ পরিচালনা থেকে বিরত রাখার নির্দেশনা কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। এ রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় রায় ও গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চাওয়া হয়েছে। এদিকে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে নগর ভবন ব্লকেড কর্মসূচিতে নেমেছেন তার সমর্থকরা। গত কয়েকদিন ধরে এ নিয়ে তারা কর্মসূচি পালন করে আসছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাখাইনে মানবিক করিডোর : কৌশলগত সুযোগ না ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি?

সিলেটে ইউপি চেয়ারম্যান বরখাস্ত

স্টারলিংকের ইন্টারনেট নিয়ে যেসব তথ্য জানা প্রয়োজন

অর্থনৈতিক অঞ্চল, কারখানায় সন্ত্রাসী হামলায় জিরো টলারেন্স

বোনকে উত্ত্যক্ত করায় মামলা, বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ

গাজা ইস্যুতে ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিত করল যুক্তরাজ্য

সিলেট-১ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হাবিবুর রহমান

পিছু হটছে ভারত-পাকিস্তান সেনারা

কুমিল্লায় হাসনাত আব্দুল্লাহর প‌ক্ষে-বিপ‌ক্ষে মিছিল

সিলেট ও কক্সবাজার থেকে ফ্লাইট চালানোর আগ্রহ এয়ার এরাবিয়ার

১০

বিশ্বাসের পক্ষে জীবন্ত উপন্যাস ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ : ডা. শফিকুর রহমান

১১

সুযোগ পেয়েও অর্থাভাবে আইন বিভাগে পড়ার স্বপ্ন মলিন মোস্তাফিজুরের

১২

আগে বিচার তারপর নির্বাচন : ড. রেজাউল করিম

১৩

চাকরি ছাড়লেন ৫ এএসপি

১৪

গেন্ডারিয়া থেকে ২৮ ব্র্যান্ডের ১৪৫ বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার

১৫

নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের ব্যাখ্যা দিল রাজউক

১৬

আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি, অবস্থান কর্মসূচিতে এনবিআরের কর্মকর্তারা

১৭

খালেদা জিয়ার সঙ্গে রাষ্ট্রদূত মুশফিকের সাক্ষাৎ

১৮

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ চিরতরে বাতিলের আহ্বান টিআইবির

১৯

অসময়ে জ্বলল বসুন্ধরা কিংস

২০
X