রকি আহমেদ
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৫, ০৭:১০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কাঠগড়ায় ৪৮ মিনিট দাঁড়িয়ে কম্পিত নুরুল হুদা খুঁজলেন চেয়ার

আদালত প্রাঙ্গণে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। ছবি : কালবেলা
আদালত প্রাঙ্গণে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। ছবি : কালবেলা

তপ্ত দুপুর। সময় তখন ২টা ৩৮ মিনিট। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদাকে প্রিজন ভ্যানে করে আনা হয় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালনকালে প্রহসন ও রাতে ভোট গ্রহণের অভিযোগে ৪ দিনের রিমান্ডে ছিলেন তিনি।

শুক্রবার (২৭ জুন) একই মামলায় তাকে পাঁচ কারণে ফের ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। বিকেলে এ বিষয়ে শুনানি হবে বলে তাকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। পরে বিকেল সাড়ে তিনটায় আদালত পাড়ায় পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন নিরাপত্তা জোরদারে। আসামিকে সিএমএম কোর্টের ৮ তালায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জোনাইদের আদালতে তোলা হবে। এজন্য হাজতখানা থেকে প্রায় ৪০ কদম দূরে সিএমএম কোর্ট ভবন পর্যন্ত পুলিশ সদস্যরা সারি সারি একে অপরের হাত ধরে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করেন।

হাজতখানার সামনে সাংবাদিকরাও প্রস্তুত হয়ে যান ক্যামেরা নিয়ে। উৎসুক জনতা তখন আশপাশ থেকে ভিড় জমতে থাকে। কাকে আনা হচ্ছে একে অপরের থেকে শুনতে থাকেন। এমন সময় হাজতখানা থেকে বের করা হয় নুরুল হুদাকে। তবে গতকাল সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়ালকে থুতু দেয় জনতা। এ ঘটনা এড়াতে ও বাইরে মানুষের ভিড় কমাতে নিরাপত্তা পরখ করতে হাজতখানার বাইরে আসেন পুলিশের কোতোয়ালি জোনের সিনিয়র এসি ফজলুল হক। প্রায় ৪ মিনিট হাজতখানার প্রাঙ্গণে পুলিশ সদস্যরা নুরুল হুদাকে নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন।

এরপরই নুরুল হুদাকে কড়া নিরাপত্তায় বের করা হয়। এ সময় নুরুল হুদার মাথায় হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও পেছনে হাতমোড়া করে হাতকড়া দিয়ে বেঁধে নিয়ে যেতে দেখা যায়। সাংবাদিক ও উৎসুক জনতার ভিড় ঠেলে আদালতের লিফটে করে বিকেল ৩টা ৪২ মিনিটে নুরুল হুদাকে আদালতের কাঠগড়ায় তোলা হয়। এ সময় বিচারক এজলাসেই ছিলেন। এরপর নুরুল হুদার মাথা থেকে হেলমেট ও এক হাত থেকে হ্যান্ডকাপ খুলে ফেলা হয়। তবে গরমের মধ্যেও তার বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরা ছিল।

এরপর শুরু হয় রিমান্ড শুনানি। তার বিরুদ্ধে মামলায় নির্বাচনে প্রহসন, রাতে ভোট গ্রহণসহ কারচুপির সঙ্গে আরও যুক্ত হয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ। এ মামলায় তাকে ফের ১০ দিনের রিমান্ড চান রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামসুজ্জোহা সরকার। রিমান্ডে নিতে যুক্তি দেখান। এরপর ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের জোর দাবি জানান।

শুনানির শুরু থেকেই নুরুল হুদা মলিন মুখে মাথা নিঁচু করে তদন্ত কর্মকর্তা ও পিপির বক্তব্য শুনতে থাকেন। পিপি ফারুকী বলেন, ‘২০১৮ সালে পাতানো নির্বাচনের অন্যতম হোতা এই নুরুল হুদা। শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগসাজশে তিনি এ নির্বাচন করেন। এর জন্য তিনি বিপুল অর্থ নেন। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন তিনি।’ এভাবে চলতে থাকা শুনানিতে প্রায় ২১ মিনিট ধরে মাথা নিঁচু করে পিপি ও তদন্ত কর্মকর্তার বক্তব্য শুনতে থাকেন।

এরপর বিকেল ৪ টা ৩ মিনিটে তার আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম সজিব শুনানি শুরু করলে নুরুল হুদা মাথা উঁচু করে শুনানি মনোযোগ সহকারে শুনতে থাকেন। আইনজীবী শুনানিতে বলেন, এই মামলার ধারাগুলো জামিনের যোগ্য ছিল। কিন্তু প্রসিকিউশন পরবর্তীতে আবার নতুন ধারা (রাষ্ট্রদ্রোহ) যোগ করতে আবেদন করেন। আদালতে এখন কথা বলতেই ভয় করে। নতুন করে আবার ধারা বা নতুন মামলা দিবে।

আইনজীবীর বক্তব্য কিছুক্ষণ শোনার পর আবার মাথা নিঁচু করে মলিন মুখে শুনানি শুনতে থাকেন। বিকেল ৪টা ১০ মিনিটের দিকে যখন তার আইনজীবী আইনের উদ্ধৃতি দিয়ে কেন এ মামলা চলতে পারে না তা আদালতে তুলে ধরেন।

আইনজীবী বলেন, ‘রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা ব্যক্তি করতে পারেন না। এ মামলা চলতে পারে না।' তখন নুরুল হুদা বিচারকের দিকে অসহায়ের মতো তাকান। পরে আবার হতাশ হয়ে মাথা নিঁচু করে শুনানি শুনতে থাকেন তিনি।

এরপর বিকেল ৪টা ১৬ মিনিটে আইনজীবী তৌহিদ শুনানিতে আদালতকে বলেন, ‘আসামি একজন মুক্তিযোদ্ধা, সাব সেক্টর কমান্ডার ছিলেন।’ তখন মাথা নিঁচু অবস্থাতেই নুরুল হুদার চোখ ছলছল করতে দেখা যায়। পরে ৪টা ১৭ মিনিটে ফের পিপি বক্তব্য শুরু করেন। এ সময় নুরুল হুদা কাঠগড়ায় থাকা অন্য আসামিদের দিকে দেখতে থাকেন। এ সময় এক হাত দিয়ে ঝুঁলে থাকা হাতকড়া হাতে ধরে, আরেক হাত দিয়ে কাঠগড়ার লোহার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরে ফের মাথা নিঁচু করে শুনানি শুনতে থাকেন তিনি।

এরপর বিকেল ৪টা ২১ মিনিটের দিকে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে কাঠগড়ায় নিচে দেখতে থাকেন। এ সময় তিনি বসার জন্য কিছু খুঁজতে থাকেন। কিন্তু কিছু না পেয়ে তিনি মলিন মুখে ফের মাথা নিঁচু করে শুনানি শুনতে থাকেন। এরপর বিভিন্ন সময় তার পা কাঁপাতে দেখা যায়। কখনো এক পায়ে ভর দিয়ে,পরে অন্য পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে থাকেন তিনি। এ সময় পা কাঁপতে থাকে। আসামিপক্ষে আরও আইনজীবীরা বক্তব্য দিতে চাইলে বাধা দেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষের চেয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বেশি সময় নিয়ে শুনানি করেন। এটা নিয়ে এজলাসে দুই পক্ষে হট্টগোলও তৈরি হয়।

পরে বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক আসামির ফের ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। শুনানি শেষে ফের তার মাথায় হেলমেট ও পেছনে হাতমোড়া করে হাতকড়া পরিয়ে হাজতখানায় নেওয়া হয়। পরে ফের তাকে রিমান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়।

এর আগে গত রোববার সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ দিন স্থানীয় জনগণ তাকে আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। এসময় তাকে জুতা দিয়ে মুখে আঘাত করতেও দেখা যায়। পরদিন নুরুল হুদাকে ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

এর আগে গত ২২ জুন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব ‘পালন না করে’ উল্টো ‘ভয়-ভীতি দেখিয়ে’ জনগণের ভোট ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন করার অভিযোগে মামলা করে বিএনপি। দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ মামলাটি দায়ের করেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মধ্যরাতে ছাত্রীর প্রবেশপত্র পৌঁছে দিয়ে প্রসংশায় ভাসছেন শিক্ষক

আন্দোলনে অচল এনবিআর, বন্ধ হচ্ছে আমদানি-রপ্তানি

‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ নিয়ে আপত্তি, পুনর্বিবেচনা করছে সরকার

ইরান হামলা ইসরায়েলকে রুখল না সিরিয়া, কেন এই নীরবতা

হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে বিমান

জন্মদিনে বার্সার ১০ নম্বর জার্সি পাবেন ইয়ামাল

দেড়শ বছরের পুরোনো পিতলের রথযাত্রা উদযাপিত

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে জিতল কে?

রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত ৮

বাংলাদেশ থেকে ৩ পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করল ভারত

১০

‘ঢাবি আমার সনদ বাতিল করেছে অথচ আমি কোনো পরীক্ষাই দেইনি’

১১

তাইজুলের স্বপ্ন সাকিবকে ছাড়িয়ে যাওয়ার

১২

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কর্মসূচি ঘোষণা

১৩

গাজায় ইসরায়েল সমর্থিত ত্রাণকেন্দ্রে ময়দার বস্তায় মিলল মাদক

১৪

ফিরতি যাত্রা আগামী শনিবার / বিশ্বশান্তি কামনায় উৎসাহ-উদ্দীপনায় রথযাত্রা অনুষ্ঠিত, মানুষের ঢল

১৫

জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন জরুরি : জামায়াত আমির

১৬

আগামী ৩ দিনের বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অফিসের নতুন বার্তা

১৭

মোবাইলে গেম খেলা নিয়ে দ্বন্দ্ব, ইট দিয়ে শিশুকে খুন

১৮

সংস্কারের নামে নির্বাচন পেছানো যাবে না : নীরব

১৯

গাজার ত্রাণ সংস্থায় কেন এত বড় সহযোগিতা যুক্তরাষ্ট্রের

২০
X