

আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনকালে গুম-খুনের মাধ্যমে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হেফাজতে থাকা ১৫ সেনা কর্মকর্তার জামিন আবেদন করা হয়েছে।
বুধবার (২১ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে প্রিজনভ্যানে করে আসামিদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এ সময় সেনা কর্মকর্তাদের পক্ষে তাদের আইনজীবী জামিনসহ মোট তিনটি আবেদন দাখিল করেন।
আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে গুম-খুন এবং জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা তিনটি পৃথক মামলায় সাবেক ও বর্তমান ২৫ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৩২ জন আসামিকে আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করার দিন ধার্য ছিল। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগের ওপরও আজ শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে শুরু হবে শুনানি।
তিনটি মামলার মধ্যে দুটি দায়ের হয়েছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম ও নির্যাতনের মাধ্যমে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে। আর অন্যটি দায়ের হয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায়।
গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় করা দুটি মামলার একটিতে ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন, র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কে. এম. আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন ও কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (বর্তমানে অবসরকালীন ছুটিতে আছেন)। এ ছাড়া র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম বর্তমানে সেনা হেফাজতে রয়েছেন।
এই মামলার আসামিদের মধ্যে র্যাবের সাবেক তিনজন মহাপরিচালকও আছেন। তারা হলেন বেনজীর আহমেদ (পরে আইজিপি হন), এম খুরশিদ হোসেন ও মো. হারুন-অর-রশিদ। তারা পলাতক। এ ছাড়া মামলার আসামি শেখ হাসিনা, তার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও র্যাবের সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মাদ খায়রুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন।
আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা আরেক মামলায় শেখ হাসিনা, তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ মোট ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় ডিজিএফআইয়ের সাবেক তিন পরিচালক—মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী—বর্তমানে সেনা হেফাজতে আছেন।
এই মামলায় আরও আসামি করা হয়েছে ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচ মহাপরিচালককে। তারা হলেন— লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আবেদিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী এবং মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক। এ ছাড়া ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ তৌহিদুল উল ইসলাম, মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মখছুরুল হকও এই মামলার আসামি। তাদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম, মেজর মো. রাফাত-বিন-আলম, পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. রাশেদুল ইসলাম এবং সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমানকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে রেদোয়ানুল ও রাফাত সেনা হেফাজতে আছেন, আর রাশেদুল ও মশিউর বর্তমানে পলাতক।
এদিকে সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা ঘিরে রাজধানীর কাকরাইল, মৎস্য ভবন, পল্টনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ভোর থেকেই ট্রাইব্যুনাল ও হাইকোর্টের মাজারগেট এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেখানে পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি বিজিবি এবং সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে। সব মিলিয়ে পুরো এলাকায় নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
মন্তব্য করুন