

রাজধানীর হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেটের কাছে ড্রাম থেকে রংপুরের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের ২৬ টুকরা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় শাহবাগ থানার করা মামলায় নিহতের বন্ধু মো. জারেজুল ইসলাম ওরফে জরেজ (৩৯) ও তার প্রেমিকা শামীমা আক্তার ওরফে কহিনুরকে (৩৫) পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জেনিফার জেরিনের আদালত এই আদেশ দেন।
শনিবার সন্ধ্যায় আসামিদের আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পুলিশ পরিদর্শক মো. আখতার মোর্শেদ।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, প্রাথমিক তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে বাদীর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। আসামি মো. জারেজুল ইসলাম ও শামীমা আক্তার এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছেন। এই ঘটনায় অন্য কোনো অজ্ঞাত আসামি জড়িত আছেন কিনা, ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য আসামিদের সাত দিনের পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা একান্ত প্রয়োজন।
রিমান্ড আবেদনে চার কারণ উল্লেখ করেন মামলার এই তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানিকালে আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। শুনানি শেষে আদালত আসামিদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) প্রধান আসামি জরেজ মিয়াকে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। অপরদিকে একই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শামিমাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের সঙ্গে পূর্ব পরিচয়ের মাধ্যমে শামিমার সঙ্গে তার পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে আশরাফুল হকের বন্ধু জরেজ মিয়ার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন শামিমা। এসব বিষয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে কদমতলী এলাকার একটি বাসায় শামিমা ও তার পরকীয়া প্রেমিক জরেজ মিয়া দুজনে মিলে প্রথমে আশরাফুল হককে হত্যা করার পাশাপাশি লাশ সেই বাসার ভেতরে রেখে দেন।
দুজনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, হত্যার দুদিন পর ১৩ নভেম্বর আশরাফুল হকের লাশ সেই বাসার বাথরুমে নিয়ে ২৬ টুকরো করেন তারা। পরে দুটি ড্রামে ভরে সিএনজিযোগে দুজন শাহবাগ জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের কোণে পানির পামসংলগ্ন রাস্তায় রেখে পালিয়ে যান।
ওই ঘটনায় গত ১৪ নভেম্বর আশরাফুলের বোন আনজিরা বেগম বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় এই হত্যা মামলাটি করেন। মামলায় আশরাফুলের বন্ধু জরেজ মিয়াকে প্রধান আসামি করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ১৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেটের কাছে নীল রঙের দুটি ড্রামে আশরাফুলের খণ্ড খণ্ড মরদেহ পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিক পরিচয় শনাক্ত না হলেও পরে আঙুলের ছাপ নিয়ে আশরাফুলের পরিচয় নিশ্চিত হয় পুলিশ। আশরাফুল হক (৪২) রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
ব্যবসায়ী আশরাফুলকে হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু জরেজুল ইসলাম ওরফে জরেজকে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিকভাবে পরকীয়ার কারণে এ হত্যাকাণ্ড বলে জানিয়েছে ডিবি।
স্বজনরা জানান, আশরাফুল ছিলেন কাঁচামালের ব্যবসায়ী। গত ১১ নভেম্বর রাতে বন্ধু জরেজের সঙ্গে বাড়ি থেকে ঢাকায় যান আশরাফুল হক। পরদিন বুধবার (১২ নভেম্বর) রাত ৯টা পর্যন্ত পরিবারের সঙ্গে তার কথা হয়েছিল। এরপর থেকে আর তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন