

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের স্বেচ্ছায় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগের আদেশ স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাকে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় পত্যার্পণ চুক্তির মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে এনে কেন বিচারের মুখোমুখি করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। পররাষ্ট্রও ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এ রুলের জবাব দাখিল করতে বলা হয়েছে।
ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকে করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রোববার বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজি ও বিচারপতি রিয়াজউদ্দিন আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ ও রুল দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল কাইয়ূম লিটন। তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন।
পরে ব্যারিস্টার আব্দুল কাইয়ূম বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংক থেকে এস আলম প্রায় এক লাখ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। এই টাকা যাতে না দিতে হয়, সেজন্য প্রতারণার মাধ্যমে সে এদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন। এজন্য ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকে রিট করা হয়। আদালত শুনানি নিয়ে রুল ও আদেশ জারি করেছেন।’
ব্যাংকিং খাতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পর সপরিবারে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন বহুল আলোচিত এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম। ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর বাংলাদেশি পাসপোর্ট প্রত্যাহার করেন এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাদের তিন ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল আলম ও আসাদুল আলম মাহির। একই দিন বিদেশি নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে স্থায়ী বসবাসের (পারমানেন্ট রেসিডেন্সিয়াল) অনুমোদন পায় পরিবারটি। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে এসব সুবিধা দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অর্থ পাচারের পথ সহজ করা এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জবাবদিহি এড়াতে এমন কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এস আলম পরিবার যেদিন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন, সেইদিনই আবার বাংলাদেশে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পেয়েছিলেন। নাগরিকত্ব ত্যাগ ও স্থায়ী আবাসিক সুবিধা গ্রহণ বাংলাদেশে জটিল প্রক্রিয়া হলেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে একই দিন সন্ধ্যায় অতি গোপনে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই কাজটি করা হয়। তবে নাগরিকত্ব ত্যাগ ও আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করতে হলে পুলিশের বিশেষ শাখার ছাড়পত্রসহ বিভিন্ন দপ্তরের অনুমতি প্রয়োজন হলেও কীভাবে একই দিনে দুটি কাজ সম্পন্ন হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদনপত্র অনুযায়ী, ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর এস আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন, তিন ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল আলম এবং আসাদুল আলম মাহির বাংলাদেশে স্থায়ী আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের এই সুবিধা অর্জনের সুযোগ বা প্রয়োজন নেই। নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন বলেই তারা স্থায়ী আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করেন।
নথিপত্র থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত থেকে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা ঋণ নিলেও স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পেতে এস আলম পরিবারের সদস্যরা জনপ্রতি বিনিয়োগ দেখিয়েছেন মাত্র ৭৫ হাজার ডলার।
এস আলম পরিবারের মালিকানায় রয়েছে ৫৬টি প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া বিগত সরকারের আমলে ৬টি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে এস আলম গ্রুপ। এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম এবং ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন তার ছেলে আহসানুল আলম। শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার হস্তান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাবও জব্দ করেছে সরকার।
মন্তব্য করুন