প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে আমরা ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন-১৯৭৩ সংশোধন করতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু সেটা সংসদে করতে হতো। গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের কারণে আইনটি সংশোধন হয়েছিল।
শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উদ্যোগে অধ্যাপক কবীর চৌধুরী স্মারক বক্তৃতা-১৩ আয়োজনে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ’৭১-এর গণহত্যার বিচার : সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ’৭১-এর গণহত্যার বিচার : সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাট্যকার রামেন্দু মজুমদার, শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী প্রমুখ।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে প্রথম রায়টি ছিল মওলানা আবুল কালাম আজাদের। দ্বিতীয় রায়টি ছিল কাদের মোল্লার। কাদের মোল্লাকে আজীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। কাদের মোল্লার রায়ের পরই শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ হয়। কারণটি ছিল, কেন ট্রাইব্যুনাল এই রায় দিল। নমনীয়তা কেন প্রকাশ করল। এর প্রতিবাদ করতে কিছু মানুষ সমবেত হয়েছিলেন। আর কিছু মানুষ গিয়েছিলেন আইনের প্রতি একটা চাপ সৃষ্টি করতে। আইনটির মধ্যে একটি ব্যালেন্সের অভাব ছিল। একপক্ষ আপিল করতে পারবেন সাজার বিরুদ্ধে। অপরপক্ষ অপ্রতুল সাজার বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন না। শুধু খালাসের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। সেদিন আমরা যাবৎজীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলাম। এই আইনে সাজা কতটুকু হবে তা বলা ছিল না। আমরা আইনটিকে সংশোধন করতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু সেটা সংসদে করতে হবে। গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের কারণে আইনটি সংশোধন হয়েছিল।
শাহরিয়ার কবির বলেন, অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর জন্মদিন উপলক্ষে কবীর চৌধুরীর স্মারক বক্তৃতার তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছিল। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে একটি প্রতীকী গণ আদালত করা হয়েছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের। সেই আদালতে ৫ লাখের বেশি মানুষের সমাবেশ ঘটেছিল। অধ্যাপক কবীর চৌধুরী এই আদালতের বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আরেকজন বিচারক ছিলেন হাবীব। এই বিচারকার্যের জন্য জামায়াত সমর্থিত বিএনপি সরকার অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, অধ্যাপক আহমদ শরীফ, মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডারসহ ২৪ জন উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে তারা রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দিয়েছিল। আমাদের দুর্ভাগ্য শহীদ জননী জাহানারা ইমাম যিনি এই আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন, তিনি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ মাথায় নিয়ে ১৯৯৩ সালে মারা গেছেন। এরপর আমরা অভিভাবক হিসেবে অধ্যাপক কবীর চৌধুরীকে পেয়েছিলাম। বিভিন্ন ধরনের ঝড়ঝাপটা তিনি সামলিয়েছেন।
অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, প্রসিকিউশন এবং তদন্ত সংস্থায় চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে নতুনভাবে নিয়োগ না দেওয়া হলে। ৪০০ তদন্ত চিহ্নিত করা আছে। সম্পূর্ণ তদন্ত করার মতো লোকবল নেই। প্রায় ১৩ বছর আগে যারা যুক্ত ছিলেন, তাদের বয়স ছিল প্রায় ৬০ এর মতো। এখন তারা প্রবীণ হয়ে গেছেন। এখন তাদের সেই কর্মস্পৃহা নেই। আর যারা তরুণ রয়েছেন তাদের সংখ্যা অপ্রতুল। এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশের জাতীয় ট্রাইব্যুনাল প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে আনুমানিক ২৫০ কোটি টাকা খরচ করে ৫৪টি মামলার রায় প্রদান করেছে। এই মামলাগুলোতে মোট আসামির সংখ্যা ছিল ১৪৮ জন। এর মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা ১৪৬ জন। এখন পর্যন্ত বিচার শেষে খালাস পেয়েছেন দুজন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা ১০৬। অন্যান্য আসামিরা আমৃত্য থেকে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন।
মন্তব্য করুন