মোবাইল চুরির পর থানায় জিডি করে পুলিশের পক্ষ থেকে চরম অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী। কলাবাগান থানায় জিডি করার পর তদন্ত কর্মকর্তার গড়িমসির কারণে মোবাইল উদ্ধার করতে রীতিমত হিমশিম খেয়েছেন তিনি। পরবর্তীতে নিজ প্রচেষ্টায় লোকেশন ট্র্যাক করে মোবাইল উদ্ধার করেছেন রাহাত আহসান নামেও ওই শিক্ষার্থী।
মোবাইল চুরি এবং উদ্ধারের বিষয়ে রাহাত জানান, ২৭ মে সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজের মোবাইল খুঁজে পাচ্ছিলেন না তিনি। শুধু তার নয়, রুমমেটের ফোনটাও ছিল না। মোবাইলে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস, ছবি, ভার্সিটির ডকুমেন্টস ছিল। ঘটনার পর বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে দ্রুত কলাবাগান থানায় যান তিনি। তবে সেখানে গিয়ে কোন সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
রাহাত বলেন, আমাদের কাছে সিসিটিভি ফুটেজ ছিল এবং চোরকে শনাক্ত করতে পেরেছিলাম শুরুতেই। পুলিশকে বললাম দ্রুত ব্যবস্থা নিলে ফোনগুলো উদ্ধার সম্ভব। আমার আইফোনের লোকেশন তখন কামরাঙ্গীরচর দেখাচ্ছিল। অর্থাৎ, প্রযুক্তিগতভাবে চোরকে ট্র্যাক করা একদমই সম্ভব ছিল। কিন্তু পুলিশ আমাদের কথা খুব একটা গুরুত্বের সঙ্গে নিল না। বারবার অনুরোধ করেও কোনো সহযোগিতা পাইনি। এমনকি তাদের বারবার শুধু এক কথাই ছিল যে, আইফোন তো পাওয়া যায় না। সে মুহূর্তে কোনো উপায় না পেয়ে শুধু একটা জিডি করে আসি।
তিনি বলেন, জিডির তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. আনিছ মিয়াকে ফোন করে পুরো ঘটনা বললাম। কিন্তু উনি সরাসরি বললেন, ‘আমি কিছু করতে পারব না’- এবং ফোন কেটে দিলেন। এরপর থেকে বারবার ফোন দিলেও আর কোনো উত্তর পেলাম না। সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো পথই খুঁজে পাচ্ছিলাম না, হতাশা আর অনিশ্চায়তায় পুরো রাত পর্যন্ত কাটল, এরপর রাতে একটা আশার আলো দেখি। ভাইয়ের কয়েকজন কলিগ, যারা কামরাঙ্গীরচরের স্থানীয়, তারা আমার দেওয়া লোকেশন ট্র্যাক করে ভাইয়ের মোবাইলটা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। যে লোকের কাছ থেকে ফোনটা পাওয়া যায়, সে জানায় চোরের নাম সেলিম ওরফে বাবা সেলিম। কিন্তু আমার আইফোনের কোনো খোঁজ পাওয়া গেল না। অনেক হুমকি, ধমক দিয়েও কোনো লাভ হলো না। কারণ আইফনের লক খুলতে না পারায় নাকি সে তা কিনেনি। তখন রাত প্রায় ১টা, আর কোন উপায় না পেয়ে ফিরে আসতে হয়। রাতেই চেয়েছিলাম পুলিশের সঙ্গে এই তথ্যগুলো শেয়ার করতে, কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা তখনো ফোন ধরেননি। হয়তো এই ক্লূ ধরে তারা আমার ফোন বের করতে পারবে।
পরদিন সকালে অন্য নাম্বার থেকে ফোন দিলে উনি বলেন, ‘একটা ফোন যেভাবে পেয়েছেন, আরেকটাও ওইভাবে বের করেন।’ উনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি কিছুই করবেন না। উপরন্তু বলেন, ‘চোর ধরে আনেন, তারপর দেখি।’ আমি যখন ওনার দায়িত্বের কথা মনে করে দিতে চাই, তখন উনি আবার ফোন কেটে দেন। এইভাবে দু’দিন কেটে যায়। তৃতীয় দিনে আমি একবার একটা ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিই, কিন্তু সেই পোস্ট দীর্ঘসময় স্থায়ী ছিল না। ডিলিট করে দিই — ভয় ছিল চোরের কোনো সহযোগী দেখে ফেললে আরও সাবধান হয়ে যাবে। পরে সেই পোস্ট থেকে স্থানীয় এক ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করতে পারি। আমি তাকে লোকেশন আর সিসিটিভি ফুটেজ দিই। উনি চোরকে চিনে ফেলেন। এই দিকে ঢাকাতে প্রচুর বৃষ্টি এর মধ্যেই, প্রায় ৪ ঘণ্টা পর আমার আইফোনও উদ্ধার করতে সক্ষম হই। ঠিক ৪ দিন পর মোবাইলটা হাতে পাই।
তিনি বলেন, এরপর আমি আবার ফোন দিলাম সেই তদন্ত কর্মকর্তাকে। আশা ছিল এইবার হইতো উনি সাহায্য করবে বললাম, ‘চোর ধরা পড়েছে, আপনি আমার সঙ্গে চলেন। আমার নিরাপত্তা দরকার।’ উনি এইবার বলেন, ‘টাকা দিয়ে নিয়ে আসেন।’ আমি আবার বলি, ‘আপনাকে আমার সঙ্গে যেতে হবে, আমি এলাকা চিনি না, আমি একা ভয় পাচ্ছি।’ উনি আবার বলেন, ‘পারব না’।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী বলেন, আমি একজন সাধারণ ছাত্র হয়ে, শুধুমাত্র ফোনের লোকেশন ও কিছু স্থানীয় মানুষের সাহায্য নিয়ে আমার মোবাইল উদ্ধারের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি এবং আল্লাহর রহমতে সক্ষমও হয়েছি। দোকানের নাম, চোরের নাম এমনকি সুনির্দিষ্ট জায়গার তথ্যও আমি নিজেই জোগাড় করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। তারপরেও পুলিশ যদি বলে ‘তারা কিছু করতে পারবে না’, তাহলে তাদের সরকারি অর্থ দিয়ে পোষার মানে কী? যদি একজন সাধারণ মানুষ এতদূর এগিয়ে যেতে পারে, তাহলে পুলিশের- যাদের হাতে ক্ষমতা, প্রশিক্ষণ ও রিসোর্স আছে- তারা কেন এগিয়ে আসবে না? যদি এত তথ্য দিয়েও পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না আসে, তাহলে সাধারণ জনগণের জন্য পুলিশের অস্তিত্বের মানেটাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার এসআই আনিছ মিয়া বলেন, আমি বলেছি, অনেক বৃষ্টি। এজন্য যেতে পারব না। রাতে যাওয়া সম্ভব না, পরদিন সকালে যাব। কিন্তু এর মধ্যে তারা মোবাইল উদ্ধার করে ফেলে। এজন্য আর যাওয়া হয়নি।
মন্তব্য করুন