

টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইন ইনভেস্টমেন্টের প্রলোভন দেখিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া একটি প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিট।
বৃহস্পতিবার (০৪ ডিসেম্বর) রাজধানীতে তার নিজ বাসা থেকে নাদিম (৩২) নামের ওই প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়। নাহিদ কুমিল্লা জেলার দক্ষিণকান্দি গ্রামের মো. কায়েস মিয়ার ছেলে।
শুক্রবার (০৫ ডিসেম্বর) সিআইডির ফেসবুক পেজে এক পোস্টে জানানো হয়, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, একটি বেসরকারি ব্যাংকের একজন সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসারের হোয়াটসঅ্যাপে অজ্ঞাত নম্বর থেকে একটি বার্তা আসে। বার্তা প্রেরণকারী নিজেকে ‘নাজনীন’ নামে পরিচয় দিয়ে দাবি করে যে তিনি ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম Upwork-এর প্রতিনিধি। বাসায় বসে পার্ট-টাইম কাজের মাধ্যমে আয় করার প্রলোভন দেখালে ভুক্তভোগী সরল বিশ্বাসে প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন।
প্রথমে ইউটিউব সাবস্ক্রিপশনসহ কয়েকটি ছোট অনলাইন টাস্ক করিয়ে ভুক্তভোগীর মোবাইল আর্থিক সেবার (বিকাশ) মাধ্যমে সামান্য অর্থ ১৫০ টাকা, পরে ২ হাজার ১০০ টাকা প্রদান করে আস্থা তৈরির চেষ্টা করা হয়। এরপর তাকে @upworkfrontdesk2013 নামক একটি টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত করা হয়, যেখানে ভুয়া সদস্যরা অভিনয় করছিলেন যে তারা নিয়মিত কাজ করে বড় অঙ্কের অর্থ উপার্জন করছেন। এতে ভুক্তভোগীর বিশ্বাস আরও বৃদ্ধি পায়। পরবর্তী ধাপে বড় টাস্কের কথা বলে প্রতারকরা ‘Crypto Account’ খুলতে ২ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে বলে। এরপর জানানো হয়, আরও ৩ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে তার ব্যালেন্স ৭ হাজার টাকা প্রদর্শন করবে এবং তিনি অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন। ভুক্তভোগী অর্থ পাঠানোর পর তাকে ‘VIP-TASK GROUP’-এ যুক্ত করা হয়, যার এডমিন ছিল ‘Hamza’ (প্রোফাইল নাম)। গ্রুপে দেখানো হয় যে সবার Crypto Account-এ ৭ হাজার টাকা জমা রয়েছে।
সিআইডি জানায়, অর্থ উত্তোলন করতে চাইলে ভুক্তভোগী ব্যক্তিকে জানানো হয়, ক্যাশ আউটের জন্য আরও ১৫ হাজার ৮০০ টাকা দিতে হবে। সরল বিশ্বাসে তিনি অর্থ প্রেরণ করেন। তবে ব্যালেন্স প্রদর্শনে অসঙ্গতি দেখা দিলে তিনি বিষয়টি জানতে চাইলে নতুন টাস্ক ও নতুন শর্ত আরোপ করা হয়। এভাবে একের পর এক টাস্ক, বড় লাভের লোভ এবং ভুয়া হিসাব দেখিয়ে প্রতারক চক্রটি বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে মোট ১ কোটি দশ লাখ ৫৮ হাজার ৩০৫ টাকা হাতিয়ে নেয়। ঘটনার পর ভুক্তভোগী ব্যক্তি ডিএমপির লালবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তভার গ্রহণের পর সিআইডির সিপিসি ইউনিটের একটি চৌকশ দল প্রতারক চক্রের সদস্য নাদিমকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন, এনআইডিসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ করা হয়। সিআইডি এই চক্রের অন্যান্য অজ্ঞাত সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
সাধারণ জনগণের প্রতি সিআইডির পরামর্শ :
* অনলাইনে সহজভাবে বড় অঙ্কের অর্থ উপার্জনের প্রলোভনে বিশ্বাস করবেন না।
* যে কোনো লেনদেনের আগে উৎস ও পরিচয় যাচাই করুন।
* প্রতারণার শিকার হলে দ্রুত নিকটস্থ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে জানান।
মন্তব্য করুন