ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় নৃশংস জঙ্গি হামলায় জড়িয়ে রয়েছে নব্য জেএমবির নাম। ২০১৬ সালের ১ জুলাই ভয়াবহ ওই হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের অনেকে নিহত হন। গ্রেপ্তার হন প্রথম সারির জঙ্গিরা। এতে কোণঠাসা হয়ে পড়েন নব্য জেএমবি। তবে তিন বছর আগে বিদেশে বসে প্রায় নিঃশেষ হওয়ার পথে থাকা অতি উগ্রবাদী এই সংগঠনটিতে চাঙ্গা করার চেষ্টা চালায় মোহাম্মদ কামরুল হাসান ওরফে মাহাদী হাসান জন নামের এক জঙ্গি।
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই মাহাদী হাসানই নব্য জেএমবির এখন পর্যন্ত ‘সর্বশেষ’ আমির। যিনি আবু আব্বাস আল বাঙালি নামে অনলাইনে নব্য জেএমবির নামে কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। তাকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি।
সিটিটিসি কর্মকর্তারা বলছেন, আপাতত নব্য জেএমবির কোনো সাংগঠনিক কাঠামো নেই। দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টানা অভিযানে সংগঠনটির শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরী ও সরোয়ার জাহান মানিকসহ শীর্ষ নেতাদের কয়েকজন নিহত হওয়ার পর কোণঠাসা হয়ে যায় সংগঠনটি। ২০২০ সালে বিদেশে অবস্থান করা মোহাম্মদ কামরুল হাসান ওরফে মাহাদী হাসান সংগঠনটির আমির নিযুক্ত হয়। পরে ওই ব্যক্তি ‘আবু আব্বাস আল বাঙালি’ নাম দিয়ে সংগঠনটির পক্ষে ইন্টারনেটে নানা প্রচারণা চালাতে থাকে। পরে সিটিটিসি তুরস্কে থাকা ওই ব্যক্তির অবস্থান শনাক্ত করে।
সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান জানান, সিটিটিসির তথ্যে তুরস্কের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে ওই জঙ্গিকে সেখানে গ্রেপ্তার করে। অবশ্য তিনি বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। এরই মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই জঙ্গির বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে। তাকে দেশে ফেরানোর সব চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
সিটিটিসি সূত্র জানায়, মাহাদী হাসান এক সময় বগুড়ায় ছাত্রশিবিরের নেতা ছিল। এরপর জঙ্গিবাদের দীক্ষা নিয়ে নব্য জেএমবিতে যোগ দেয়। নব্য জেএমবির আমির বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হয়ে ওঠে। ২০১৪ সাল থেকে পরবর্তী তিন বছর চাঞ্চল্যকর জঙ্গি হামলায় পেছনের কুশীলব হিসেবে কাজ করেছে। ২০১৬ সালে তামিম চৌধুরী পুলিশের অভিযানে নিহত হলে মাহাদী শ্রমিক ভিসায় সৌদি আরবে চলে যায়। এরপর অবৈধভাবে তুরস্কে প্রবেশ করে। সেখান থেকে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক একটি জঙ্গি সংগঠনের নেতা আবু আইয়ুব আস সামির সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। পরে তিনি সিরিয়ায় এক জঙ্গি নিহত হলে তার স্ত্রীকে বিয়ে করেন।
মোস্টওয়ান্টেন্ড এই জঙ্গির গ্রামের বাড়ি বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায়। তার বিরুদ্ধে দুপচাঁচিয়া থানায় পাঁচটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে জঙ্গি হামলার অন্যতম আসামিও তিনি।
মন্তব্য করুন