বাড্ডায় ছেলের বাসায় স্বস্ত্রীক এসেছিলেন চাঁদপুরের বাসিন্দা বশির উল্লাহ। সদরঘাট থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে বাড্ডা আসেন তারা। সিএনজি থেকে ব্যাগ নামিয়ে বাসার সামনে রাখার সময় ভেতরে থাকা একটি ব্যাগ কৌশলে নিয়ে পালিয়ে যায় সিএনজিচালক। ওই ব্যাগে ২৮.৪ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা ছিল বলে দাবি করেন বশির। হজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার ছেলের বাসায় নিয়ে এসেছিলেন তিনি।
গত ২৭ জানুয়ারি দুপুরের এ ঘটনায় ৩০ জানুয়ারি বাড্ডা থানায় মামলা করেন বশির। এই মামলায় মাদারীপুর সদর থানার বালিয়া গ্রাম থেকে চাঁন মিয়া নামে সিএনজিচালককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার কাছ থেকে ২১ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ৫ লাখ সাড়ে ৮৪ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
ডিএমপি বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার রাজন কুমার সাহা কালবেলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, স্বর্ণালঙ্কারের যে পরিমাণ বাদী উল্লেখ করেছিলেন, তা ছিল আনুমানিক। তবে স্বর্ণালঙ্কারের যে বর্ণনা বাদী দিয়েছেন সে অনুযায়ী প্রায় সবগুলোই উদ্ধার হয়েছে। নগদ কিছু টাকা সিএনজিচালক পারিবারিক কাজে খরচ করে ফেলে।
যেভাবে বশিরের ব্যাগ টার্গেট করে সিএনজিচালক মামলাটি তদন্ত করেন বাড্ডা থানার উপপরিদর্শক বেলাল হোসেন। তিনি বলেন, ভুক্তভোগীর বয়স ৭০ বছরের বেশি। চাঁদপুরে গ্রামের বাড়ি স্বামী-স্ত্রী থাকেন। মাঝে মাঝে বাড্ডায় ছেলের বাসায় আসেন। এবার হজের প্রক্রিয়া করার জন্য ঢাকায় এসেছিলেন। সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন বাড়িতে থাকা স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা। কারণ বাড়িতে তাদের আর কেউ থাকেন না।
বেলাল হোসেন বলেন, চাঁদপুর থেকে তারা ঢাকায় আসেন লঞ্চে। এরপর সদর ঘাট থেকে আসেন সিএনজিতে করে। সিএনজিচালক যাত্রী বশিরের গতিবিধি লক্ষ্য করছিল। ব্যাগটি টার্গেট করার কারণ হিসেবে চাঁন মিয়া বলেছে, সদরঘাট থেকে সিএনজিতে ওঠার সময় ৭-৮টি ব্যাগ ছিল তাদের সঙ্গে। একটি হাত ব্যাগ ও অন্য একটি ব্যাগ ছিল ভুক্তভোগী বশিরের স্ত্রীর কাছে। বাকিগুলো কুলি এনে তুলে দেয়। তখনই চাঁন মিয়া ধারণা করে নেয়, ওই ব্যাগে মূল্যবান কিছু রয়েছে।
বাড্ডায় বাসার সামনে আসার পর চালক চাঁন মিয়া নিজেই সব ব্যাগ লিফটের সামনে এনে রাখেন। কৌশলে টার্গেট করা ব্যাগটি রেখে দেন সিএনজির পেছনে। এরপর অনেকটা জোর করেই বশির ও তার স্ত্রীকে লিফটে তুলে দিয়ে ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যান চাঁন মিয়া বলে জানান এ কর্মকর্তা।
ওই ব্যাগে স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকা ছাড়াও পার্সপোর্ট, চেকবইসহ অন্যান্য কাগজপত্র ছিল। চাঁন মিয়া ব্যাগটি নিয়ে যাওয়ার পর স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা আলাদা সরিয়ে কাগজপত্র ও পাসপোর্ট নিয়ে ভুক্তভোগীর এলাকায় যান।
কারণ হিসেবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আসামির বাড়ি মাদারীপুরে। কিন্তু সে চাঁদপুর গিয়েছিল কাগজপত্রগুলো ওই এলাকায় ফেলে আসার জন্য। যাতে ভুক্তভোগী মনে করে, তার ব্যাগটি চাঁদপুরে হারিয়েছে।
তিনি বলেন, এতে সে সন্দেহের বাইরে থাকবে। ওখানে কাগজপত্রগুলো ফেলে চলে আসে ঢাকা। এরপর যায় গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে। সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছি। মাদারীপুর ও ঢাকা থেকে স্বর্ণালঙ্কার এবং নগদ টাকাগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। চুরির টাকা দিয়ে একটা ফ্রিজ কিনেছিল। তাও জব্দ করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন