শান্তনা আক্তার আশুলিয়ায় তৈরি পোশাকের একটি কারখানায় কাজ করতেন। সেখানেই তার সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে সহকর্মী মাসুদ মিয়ার। প্রেমের সম্পর্কের পর বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্কও হয় তাদের মধ্যে। একপর্যায়ে ওই এলাকার একটি বাসায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করেন। কিন্তু ৩০ বছর বয়সী শান্তনা সন্তানসম্ভাবা হওয়ার খবরে গ্রামের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জে চলে যান মাসুদ। সেখানে সন্তানের পিতৃত্ব ও স্ত্রীর মর্যাদা চাইতে গেলে খুন হন ওই নারী, সঙ্গে নির্মমভাবে খুন করা হয় সদ্যোজাত শিশুটিকেও।
এ হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা মাসুদ মিয়াকে (৩৫) গ্রেপ্তার করলে বেরিয়ে আসে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। গত সোমবার রাতে র্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা বিভাগ ও র্যাব-১ এর সদস্য গাজীপুরে যৌথ অভিযান চালায়।
গত ১৫ জুলাই রংপুরের পীরগঞ্জ থানার খালাশপীর এলাকায় একটি আখক্ষেত থেকে অজ্ঞাতপরিচয়ে ওই নারী ও সদ্যোজাত কন্যাশিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পীরগঞ্জ থানা পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা ও লাশ গুমের মামলা করে। শিশু ও নারীর নৃশংস ওই জোড়া খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) সকালে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ক্লুলেস ওই জোড়া খুনের রহস্য উদ্ঘাটন এবং আসামি গ্রেপ্তারের তথ্য জানান সংস্থাটির কর্মকর্তারা। সেখানে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ঘটনাটি চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করলে র্যাব গোয়েন্দারা নজরদারি শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার রাতে গাজীপুরের গাছা থানার তারগাছ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘাতক মাসুদকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাসুদ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার ও সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য উদ্ধৃত করে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ১০ বছর ধরে আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানায় অপারেটর হিসেবে চাকরি করতেন মাসুদ। ২০২২ সালের ফ্রেরুয়ারিতে সেখানে চাকরিতে যোগ দেন শান্তনাও। একই কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়।
গ্রেপ্তার মাসুদ জানিয়েছেন, স্বামীর সঙ্গে শান্তনার বিচ্ছেদ হলেও সেটা গোপন রেখে তার সঙ্গে প্রেমে জড়িয়েছিলেন। একপর্যায়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে আশুলিয়া এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। পেটে সন্তান এলে শান্তনা তাকে প্রতিনিয়ত বিয়ের জন্য চাপ দেন। এতে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন। পরে মিথ্যা বলে শান্তনাকে ঢাকায় রেখে গ্রামের বাড়ি পীরগঞ্জে চলে যান। শান্তনা সেখানে গেলে বিষয়টি পরিবার জেনে যায়। এরপর তাকে খুনের পরিকল্পনা করেন মাসুদ।
র্যাব মুখপাত্র কমান্ডার মঈন বলেন, গত ১২ জুলাই শান্তনা মাসুদের বাড়িতে যান। সন্তানের স্বীকৃতি এবং তাকে বিয়ে করতে তাকে চাপ দেন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে শান্তনাকে বিয়ে ও কাবিনের প্রতিশ্রুতি দেন মাসুদ। পরের দিন তার এক আত্মীয় পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কৌশলে শান্তনাকে ঢাকার বাসে তুলে দেন। তবে মাসুদ তাকে মোবাইল করে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনেন। বাড়ি ফেরার পথে কৌশলে আখক্ষেতে নিয়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ও পেটে লাথি দিয়ে হত্যার পর লাশ ফেলে যান মাসুদ। মাসুদের পায়ের আঘাতে শান্তনার গর্ভে থাকা সন্তান ভুমিষ্ঠ হয় এবং উভয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
মন্তব্য করুন