রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৩৬জন শিক্ষার্থীকে অবৈধভাবে ভর্তির অভিযোগ উঠেছে। তারা সবাই প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। তাদের ভর্তি অবৈধ উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কাছে অভিযোগ করেছেন খোদ ভর্তি কমিটির একজন সদস্য। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি অভিযোগ তদন্ত করে প্রাথমিক সত্যতাও পেয়েছে।
সূত্র বলছে, ভিকারুননিসার এক শিক্ষার্থীর বাবা তার সন্তানের প্রকৃত জন্মসনদ বাদে আরও তিনটি ভুয়া জন্মসনদ তৈরি করে দুটি শাখার প্রভাতী ও দিবা বিভাগে ভর্তির জন্য আবেদন করেন। লটারির ফলাফলে দেখা যায়, ঐ শিক্ষার্থী সেই চার আবেদনেই প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে। পরবর্তীতে ওই শিক্ষার্থীর বাবা তাকে একটি শাখায় ভর্তি করেন। এমনিভাবে আরও দুজন অভিভাবক ভুয়া জন্মসনদ তৈরি করে একটির বদলে দুটি করে আবেদন করেন। বাকিরা করেন একটি করে। এমনিভাবে ৩৬ জন শিক্ষার্থীর আবেদন দাঁড়ায় ৪১ টি।
এরপর বিষয়টি নিয়ে ভর্তি কমিটির একজন সদস্য অভিযোগ করলে প্রাথমিক তদন্তে সেই অভিযোগের প্রমাণ পায় ভিকারুননিসায় ভর্তিতে অনিয়মের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি। কমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোমিনুর রহমান এসব অনিয়মের কারণে ভিকারুননিসার ভর্তি কমিটির সদস্যদের কাছে লিখিত জবাব চেয়েছে। লিখিত জবাব দেওয়ার জন্য তাদের চার কর্মদিবস সময় দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচিত হওয়া শিক্ষার্থীদের তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে, ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে কারও জন্মসনদ অনলাইনে পাওয়া যায়নি। আবার কারও জন্মসনদের একটি সংখ্যা ভুল। কারো আবেদন করা বয়সের সঙ্গে জন্মসনদের বয়সের মিল নেই। কোনো কোনো শিক্ষার্থীর জন্মসনদের স্থলে বাবার জন্মসনদ নম্বর দেওয়া হয়েছে। কেউ বাবার নামের বানান পরিবর্তন করে একাধিক আবেদন করেছে।
এভাবে জন্মসনদ জালিয়াতির মাধ্যমে অন্তত ৩৬ জনের ভর্তির বিষয়ে তথ্য মিলেছে। এর মধ্যে রয়েছে- মূল প্রভাতি বাংলা মাধ্যমে ৯ জন, মূল দিবা বাংলা মাধ্যমে দুই জন, মূল দিবা ইংরেজি মাধ্যমে চার জন, ধানমন্ডি প্রভাতিতে এক জন, ধানমন্ডি দিবায় তিন জন, বসুন্ধরা প্রভাতিতে দুই জন, বসুন্ধরা দিবায় তিন জন, আজিমপুর প্রভাতিতে তিন জন এবং আজিমপুর দিবা শাখায় সাত জন শিক্ষার্থী।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের ভর্তির নীতিমালা অনুযায়ী, সব শিক্ষার্থীর জন্মনিবন্ধনের ফটোকপি/অনলাইন কপি আবেদনকৃত ফরমের সঙ্গে জমা দিতে হবে। সব জন্মসনদ অনলাইনে যাচাই করা হবে। আবেদনকারীর অনলাইন জন্মনিবন্ধনের সঙ্গে আবেদন ফরমের কোনো ভুল বা তথ্যে গরমিল থাকলে ভর্তির জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবে।
অন্যদিকে, স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তিতে লটারি পরবর্তী কার্যক্রম বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) অফিস আদেশ অনুযায়ী, কোনো তথ্য পরিবর্তন করে একাধিক বার আবেদন করে থাকলে তার ভর্তির নির্বাচন বাতিল হবে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে কোনো শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়ে থাকলে তাকে ভর্তি করা যাবে না। বিধিবহির্ভুতভাবে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলে এবং পরবর্তীতে তা প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধান দায়ী থাকবেন।
ভিকারুননিসার ৬ সদস্যের ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন- ধানমন্ডি প্রভাতি শাখার প্রধান মাহমুদ আহমদ, মূল দিবা শাখার প্রধান শাহ আলম, বসুন্ধরা দিবা শাখার প্রধান জগদীস চন্দ্র পাল, মূল দিবা শাখার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক চাঁদ সুলতানা এবং আজিমপুর প্রভাতি শাখার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক আকন্দ।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) কেকা রায় চৌধুরীকে কল করা হলেও তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
জানতে চাইলে ভর্তি কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালবেলাকে বলেন, যিনি চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেছেন, তিনিও অবৈধ ভর্তিতে অভিযুক্ত। তিনি নিজে ভর্তির একটি নীতিমালা করেছেন ঠিকই, কিন্তু সেটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেন নি। তিনি বলেন, শনিবার সকাল ১১টায় কলেজের মিলনায়তনে সব শাখা মিলে সভা করা হবে। সেখানে অভিযোগের বিষয়ে লিখিত জবাব লিখে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে।
জানতে চাইলে মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের তদন্তে কি উঠে আসে তার ওপর ভিত্তি করে আমরা পদক্ষেপ নিব।
মন্তব্য করুন