বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের কক্ষে সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ উঠেছে। এতে অন্তত ৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জুনিয়র শিক্ষার্থীর ওপর র্যাগিংয়ের ঘটনার জের ধরে এ ঘটনার সূত্রপাত।
গত রোববার রাত ১টায় বুটেক্সের জি.এম.এ.জি ওসমানী হলের ৩০১৯ নং রুমে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান জয়সহ তার আরও চার বন্ধু মো. আলমগীর হোসেন, আরমান কবির রিপন, আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ এবং রাফি আহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, ৩০১৯ নং রুমে বুটেক্স শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান এবং তার ব্যাচমেটরা থাকেন। ঘটনার সাথে জড়িত সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী।
হামলার ঘটনায় সরেজমিনে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে বুটেক্স ছাত্রলীগের সাবেক উপপ্রচার সম্পাদক শামসুল আলম অন্তর, সাবেক সহসম্পাদক অনিক সাদমান, সাবেক সহসম্পাদক পিয়াস, সাবেক সহসম্পাদক অচিন্ত কুমার সেন, সাবেক সদস্য জুবায়ের।
এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান জয় জানান, ‘অচিন্তর ফোন পেয়ে আমি হলে যাই। এ সময় অচিন্ত আমার সাথে জুনিয়রের বিষয়ে বাগবিতণ্ডায় লিপ্ত হয়। সে আমার ৪৫তম ব্যাচের জুনিয়র, তার ৪৬তম ব্যাচের জুনিয়রকে হেনস্তা করার অভিযোগ আনে। আমি বিষয়টি অবগত নই জানিয়ে অত্যন্ত ধীরচিত্তে বিষয়টিকে শান্ত করার চেষ্টা করলে অচিন্ত, অন্তর, অনিক, পিয়াস, জুবায়েরসহ প্রায় ১০ জন আমাকে ঘিরে ধরে। আমি তখন পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংসদে দুপুরে এ বিষয়ে কথা হবে জানিয়ে রুমে যাবার চেষ্টা করলে তারা আমার জামা টেনে ধরে। আমি জোর করে স্থান ত্যাগ করে রুমে প্রবেশ করি।’
জয় আরও বলেন, ‘এরপর কিছুক্ষণের মধ্যে আমার রুমের সামনে আমার বন্ধু আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে মারধর শুরু করে অন্তর। আমি দৌড়ে দরজায় গিয়ে থামাতে গেলে পিয়াস আমাকে লাথি মেরে ফেলে দেয় এবং স্টাম্প দিয়ে পায়ে আঘাত করে রুমে প্রবেশ করে। আমাকে বাঁচাতে আলমগীর এগিয়ে আসলে আলমগীরকে ঘুষি মেরে চশমা ভেঙে ফেলে এবং পেছন থেকে অন্তর আলমগীরকে বালতি দিয়ে মাথায় আঘাত করে। আলমগীর পেছনে ফিরলে তার মাথায় স্টাম্প দিয়ে আঘাত করে ফাটিয়ে ফেলে। প্রচুর রক্তপাত হতে থাকে। এ সময় আমাকে আর রিপনকে অনিক এবং পিয়াস আঘাত করে এবং রুম তছনছ করে ফেলে।’
আহত শিক্ষার্থী আলমগীর বলেন, ‘আমি ল্যাব রিপোর্ট লিখছিলাম। হঠাৎ আমার ওপর অতর্কিত হামলা করে এরা। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার মাথায় অন্তর হঠাৎ করে আঘাত করে, এতে আমার মাথা ফেটে যায়। পরবর্তীতে নিকটস্থ শমরিতা হাসপাতালে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মাথায় ব্যান্ডেজ দেয় এবং ওষুধ লিখে দেয়। এ ঘটনায় হল প্রভোস্ট-এর নিকট ইতোমধ্যে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।’
অভিযুক্ত শামসুল আলম অন্তর জানান, ‘৪৬তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী ৪৫তম ব্যাচের কিছু শিক্ষার্থীদের রুমে ভুলক্রমে তালা দেওয়ার ঘটনার সূত্রপাত ধরে ওই জুনিয়রকে ক্ষিপ্ত হয়ে মানসিকভাবে হেনস্তা করে। পরবর্তীতে জয়ের ইন্ধনে ৬-৭ জন শিক্ষার্থী একটা বদ্ধ রুমে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সামিউল শাকিলের ওপর র্যাগিং কার্যক্রম চালায়। সেখানে ৪৬তম ব্যাচের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সামিউল শাকিলকে তারা দীর্ঘ সময় প্রায় ২-৩ ঘণ্টা শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন চালায়। এতজন একসাথে একজন নবাগত জুনিয়রকে এভাবে মারধর করায় সেই জুনিয়রকে হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং ক্লিনিক্যাল টেস্টের মাধ্যমে জানা যায় তার কানের পর্দা ফেটে গেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই র্যাগিংয়ের প্রতিবাদ করায় জাহিদ হাসান জয় এবং তার অনুসারীরা সবার ওপর আক্রমণ চালায়। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকেই আহত হয়।’
অভিযুক্ত অনিক সাদমান বলেন, ‘আমি আমার রুমের সামনে চিৎকার শুনে রুম থেকে বের হয়ে তাদের থামানোর চেষ্টা করি। এই ঘটনায় আমি কোনোভাবে যুক্ত নই।’
এই ব্যাপারে কথা বলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রভোস্ট ড. মো. সামিউল ইসলামকে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন