নিজ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের ঘটনায় একাধিক মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। গত সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ পরিচয়দানকারী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়ে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ তাদের (ছাত্রদল)। তবে মামলায় কোনো নিরাপরাধ ব্যক্তির নাম যাতে না আসে সে বিষয়ও খেয়াল রাখা হবে বলে জানিয়েছে ববি ছাত্রদলের একাধিক নেতাকর্মী।
মামলায় নির্যাতনকারীদের মদদদাতার অভিযোগে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের আসামি করা হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তারা৷ একইসঙ্গে এসব ঘটনার বিচারের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দেবে ভুক্তভোগীরা। নির্যাতনের শিকার এসব শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার কথাও জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ছাত্রদলের কমপক্ষে সাত জন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে জানান, অনেকের মেসে হামলা করা হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার বুথ থেকে তুলে নিয়ে রড দিয়ে পিটিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়া করা হয়েছে। হল থেকে গভীর রাতে পিটিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকায় আমরা কোথাও বিচারের জন্য যেতে পারিনি। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে যেটি বিচার চাওয়ার সময় হয়েছে।
কয়েকজন ভুক্তভোগী বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা জানান, বিভিন্ন শিক্ষকরা হামলা-নির্যাতনকারী ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের শেল্টার দিয়েছে। বিচারের নামে মশকরা করেছে। এমনকি এখনো এসব শিক্ষকেরা অনেক ছাত্রলীগ নেতাদের মোটরসাইকেলে ঘুরে বেড়ায়। নির্যাতনকারী সন্ত্রাসী এবং তাদের মদদদাতা শিক্ষকদের আইনের আওতায় আনার প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি রেজা শরীফ বলেন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে রাজনীতি করেছে ছাত্রদল। ফলে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের প্রধান টার্গেট ছিলাম আমরা। আওয়ামী দালাল প্রশাসনের কারণে কোনো নির্যাতনের বিচার আমরা পাইনি। কিন্তু দেশে যেহেতু পুনরায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হচ্ছে তাই আমাদের নির্যাতিত নেতাকর্মীরা এখন সুবিচার পাবার চেষ্টা করবে।
মামলায় মদদদাতা হিসেবে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নাম অন্তর্ভুক্তি করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে আলোচনা করছি। ভুক্তভোগীরা যদি মনে করে যে হামলায় শিক্ষক-কর্মকর্তারা মদদদাতা হিসেবে জড়িত ছিলো, তাহলে তাদের নামও থাকতে পারে।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আল হাসিব বলেন, গত একযুগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য ছাত্রদল নেতাকর্মী হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। কিন্তু আমরা সবাই জানি বিচারহীনতার সংস্কৃতি এতটাই প্রবল ছিল যে কোথাও কেউ অভিযোগ বা মামলা দিতে পারেনি। অনেকে অভিযোগ দিলেও সঠিক বিচার পাইনি তারা। এখন ভুক্তভোগীরা আইনি পদক্ষেপ নিতে গেলে তো আমরা কাউকে বাঁধা দিতে পারি না। তবে আমরা নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবো।
ববি ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক তানভীর রহমান তুলিদ জানান, যারাই বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এখানে কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী হয়রানি হবে না।
এ বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত প্রক্টর ড. রাহাত হোসাইন ফয়সাল বলেন, বিগত দিনে যদি কেউ কোনো হামলার শিকার হয়ে বিচার না পেয়ে থাকে তবে সেটা তো সত্যি দুঃখজনক। আমাদের বর্তমান উপাচার্য বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান চান। তাই সত্যিকারে ক্ষতিগ্রস্ত কেউ যদি বিচার প্রত্যাশা করে তবে তার পাশে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থাকবে।
মন্তব্য করুন