রংপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

রংপুর মেডিকেল কলেজ ‘কমপ্লিট শাটডাউনের’ হুঁশিয়ারি

রংপুর মেডিকেল কলেজের নতুন অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন চিকিৎসক, শিক্ষার্থী, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ছবি : কালবেলা
রংপুর মেডিকেল কলেজের নতুন অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন চিকিৎসক, শিক্ষার্থী, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ছবি : কালবেলা

রংপুর মেডিকেল কলেজের নতুন অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরে দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করবেন চিকিৎসক, শিক্ষার্থী, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর মধ্যে দাবি মানা না হলে বুধবার (৬ নভেম্বর) থেকে ‘কমপ্লিট শাটডাউনের’ ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

আন্দোলনকারীদের দাবি, পদ বাঁচাতে অধ্যক্ষ ডা. মাহফুজার রহমান নানা কূটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন। এর মধ্যে শহরের বিভিন্ন বেসরকারি নার্সিং কলেজ থেকে শিক্ষার্থী ও গ্রাম থেকে লোকজন এনে মানববন্ধন করেছে।

সোমবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যানারে দাবি আদায়ে মেডিকেল ক্যাম্পাসে চতুর্থ দিনের মতো বিক্ষোভ মিছিল করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেন আন্দোলনের সমন্বয়ক প্রফেসর ডা. শরিফুল ইসলাম মন্ডল।

তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া একজনকে কেন অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তা অজানা। তার পদত্যাগের দাবিতে কয়েকদিন ধরে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সর্বস্তরের চিকিৎসক, শিক্ষার্থী, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের পরেও তাকে অপসারণ না করাটা উদ্বেগজনক।

ডা. শরিফুল ইসলাম আরও বলেন, রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করতেই আন্দোলন শুরু হয়েছে। তাকে অপসারণ করা না হলে এই দুটি প্রতিষ্ঠানে ফ্যাসিবাদ কায়েম হবে এবং কোনো সংস্কার হবে না। বরঞ্চ অনিয়ম অব্যবস্থাপনা বৃদ্ধি পাবে। সেবা পাবে না সাধারণ মানুষ। সেকারণে আমরা শাটডাউন ও কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছি। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত হাসপাতালের আউটডোর, ইনডোরে আমরা চিকিৎসক নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই কর্মবিরতি পালন করব। যদি তারপরেও তাকে অপসারণ করা না হয় তাহলে বুধবার (৬ নভেম্বর) সকাল থেকে হাসপাতাল ও কলেজ কমপ্লিট শাটডাউনে যাব।

ড্যাবের রংপুর মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি ডা. মাহমুদুল হক সরকার বলেন, জুনিয়র হওয়া সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের আমলে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি নিয়ে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের দমনপীড়ন, শহীদ আবু সাঈদের ফরেনসিক প্রতিবেদন বদলাতে চাপ প্রয়োগ, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাসে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া ডা. মাহফুজার রহমানকে অবিলম্বে অধ্যক্ষের পদ থেকে অপসারণ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) ব্যানারে শেখ হাসিনার প্রশংসা করতেন ডা. মাহফুজ। একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ছাত্রলীগের গুণ্ডা হিসেবে পরিচিত শিক্ষার্থী প্রান্তকে আশ্রয় দেন তিনি। যে বৈষম্য এবং ফ্যসিবাদের বিরুদ্ধে ’২৪-এর অভুত্থান সেই স্পিরিটকে নস্যাৎ করার জন্যই হয়ত সরকারে থাকা কোনো দোসর তাকে ওই পদে বসিয়েছে। কিন্তু আমরা সেটা মানব না। তাহলে শহীদদের সঙ্গে বেঈমানি করা হবে।

সমাবেশে ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের বিভাগীয় সভাপতি ডা. মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ডা. মাহফুজ একজন চিহ্নিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী ব্যক্তি। যা তিনি তার ব্যক্তি জীবনেও লালন করেন। যিনি আওয়ামী লীগের সকল ধরনের ক্ষমতা ভোগ করে ক্যাম্পাসকে ফ্যাসিবাদের চারণভূমিতে পরিণত করেছিলেন। নিজেই দাঁড়িয়ে থেকে ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিয়ে আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেছেন।

তিনি বলেন, তিনি নিজের পদে থাকতে ক্যাম্পাসের বাইরে গিয়ে লোক ভাড়া করে এনে মানববন্ধন করাচ্ছেন। যার সঙ্গে রংপুর মেডিকেল কলেজের কোনো চিকিৎসক শিক্ষার্থী, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী নাই। তিনি গ্রাম থেকে লুঙ্গিপরা সাধারণ মানুষকে টাকা দিয়ে এনে মানববন্ধনে দাঁড় করিয়েছেন। বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়া নার্সদের তার পক্ষে ব্যবহার করছেন। এটা আমাদের চিকিৎসক সমাজের জন্য নির্লজ্জ ঘটনা।

ডা. হোসেন আরও বলেন, দুই হাজার শহীদ ও ৩০ হাজার ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী ডা. মাহফুজকে কোনোভাবেই রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রধান ব্যক্তি হিসেবে মানবে না কেউ। যারা এটাকে এখনো জিইয়ে রেখেছেন। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। তা নাহলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এর দায় দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে।

এর আগে গত মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মুহাম্মদ মকবুল হোসেনের স্বাক্ষর করা চিঠিতে রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে শাহ মো. সরওয়ার জাহানকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। একই কলেজের উপাধ্যক্ষ মাহফুজার রহমানকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়। এর পরদিন থেকে তার পদত্যাগের দাবিতে ক্যাম্পাসজুড়ে আন্দোলন শুরু হয়। একইদিন অধ্যক্ষের কক্ষে তালা লাগিয়ে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ-মিছিল চালিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকার / এখনি দেশে ফেরার পরিকল্পনা নেই হাসিনার, থাকবেন ভারতে

বিএনপিকে সতর্কবার্তা জামায়াতের

র‍্যাগিংয়ের দায়ে ৩ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বহিষ্কার

সন্তানের মৃত্যুশোকে রেললাইনে শুয়ে পড়লেন মা

সালমান শাহকে নিয়ে যে দাবি করেন সামিরা

আকিকা দেওয়ার দায়িত্ব কার, নিজের আকিকা নিজে দেওয়া যাবে কি?

সরানো হলো যশোরের ঐতিহ্যবাহী গদখালী ফুলের বাজার

জকসু নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজগুলো চ্যালেঞ্জিং : প্রধান নির্বাচন কমিশনার

রাবির সুইমিংপুলে শিক্ষার্থীর মৃত্যু, বিচারসহ চার দাবিতে বিক্ষোভ

‘ওরা আমার স্বামীকে গুলি করে মারল, আমি এখন কী করব?’

১০

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গোপন নথি ফেসবুকে, সমালোচনার ঝড়

১১

সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচে বোলিংয়ে বাংলাদেশ, দেখে নিন একাদশ

১২

‎জবি ছাত্রদল নেতার উদ্যোগে ফুচকা ফেস্ট

১৩

জামায়াত নেতাদের সঙ্গে কমনওয়েলথ প্রতিনিধি দলের বৈঠক 

১৪

জুলাই অভ্যুত্থানের মামলায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

১৫

এত চেষ্টা করেও দিল্লির আকাশে মিলল না এক ফোঁটা পানি

১৬

মালয়েশিয়ায় পাচারকালে নারী-শিশুসহ ২৬ রোহিঙ্গা উদ্ধার

১৭

শিক্ষকদের আপত্তি টিকল না, লটারিতেই স্কুলে ভর্তি

১৮

প্লট দুর্নীতি  / আত্মসমর্পণ করে কারাগারে রাজউকের খুরশিদ

১৯

ডেঙ্গুতে আরও ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৯৬৪

২০
X