ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) জুলাই গণহত্যার বিচার ও ভারতীয় আধিপত্যবাদ প্রতিরোধে ‘সংহতি যাত্রা’ কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। এ সময় সংহতি যাত্রা থেকে কিছু বিষয়ে অব্যাহতভাবে ব্যর্থতার দরুন সরকারকে দায়িত্বশীল হওয়া এবং ভারতের সব চক্রান্ত রুখে দিতে অভ্যুত্থানকারী শক্তিগুলোর মধ্যে ‘জাতীয় ছাত্র কাউন্সিল’ গঠনের আহ্বান জানানো হয়।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) বিকেল ৪টায় ক্যাম্পাস ও আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে এ কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। এর আগে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ডের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক শুভ দেবের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ।
সৈকত আরিফ বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়েছে। কিন্তু ফ্যাসিস্টদের ষড়যন্ত্র শেষ হয়ে যায়নি; তারা এখনো নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের পক্ষের সবার ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার। কিন্তু অভ্যুত্থানের তিন মাস পেরিয়ে গেলেও অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে কোনো সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তোলার উদ্যোগ আমরা দেখতে পাইনি। অবিলম্বে সরকারের কাছে দাবি জানাই, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্য রক্ষা করতে যথাযথ পদক্ষেপ নিন। সংকীর্ণ গোষ্ঠীস্বার্থে যদি অভ্যুত্থানের ঐক্যকে আপনারা ভাঙনের মুখে ঠেলে দেন বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের ক্ষমা করবে না।
সৈকত আরিফ আরও বলেন, অভ্যুত্থানের তিন মাস পেরিয়ে গেলেও আমরা দেখছি অন্তর্বর্তী সরকার কতগুলো জায়গায় অব্যাহতভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। অভ্যুত্থানে আহতরা ঠিকমতো চিকিৎসা পাচ্ছে না, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকেও স্বাভাবিক করতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি জুলাই গণহত্যার বিচারের দৃশ্যমান কোনো উদ্যেগ আমরা দেখছি না। আমরা সরকারকে বলি, আপনারা গতানুগতিক কোনো সরকার না, হাজারো মানুষের রক্তের উপরে আপনারা দাঁড়িয়ে আছেন, আপনাদের আরও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মশিউর রহমান খান রিচার্ড বলেন, ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা পোড়ানোর তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানাই। পাশাপাশি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যারা ভারতের জাতীয় পতাকাকে পদদলিত করছে তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কেও সজাগ থাকার আহ্বান জানাই। ভারতের আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান; ভারতের জনগণের বিরুদ্ধে না। যারা সম্প্রীতি ও ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে তারা বাংলাদেশের শত্রু। ভারত রাষ্ট্র শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই দেশে অবস্থিত পতিত ফ্যাসিস্টদের সহযোগিতায় দেশে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিচ্ছে। তারা আমাদের দেশে শান্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে পদে পদে বাধা তৈরি করছে। আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। বর্তমান সরকারকে ব্যর্থ করার সব চক্রান্ত রুখে দিতে অভ্যুত্থানকারী শক্তিগুলোর মধ্যে ‘জাতীয় ছাত্র কাউন্সিল’ গঠন করার আহ্বান জানাই। এই দেশে মসজিদ থাকবে, মন্দির থাকবে, মাজার-গির্জা-প্যাগোডা সব নিয়েই সম্প্রীতির বাংলাদেশ অটুট থাকবে। আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে সম্প্রীতির ঐক্যকে যারাই ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাইবে তাদের বিরুদ্ধেই ছাত্র-জনতার প্রতিরোধ ও সংহতি জোরদার করতে হবে।
এ সময় কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন জাসদ ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক মো. নাহিদ, ছাত্র ফেডারেশনের অর্থ সম্পাদক ফারহানা মুনা, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাইদুল রহমান, ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হক, সদস্য সচিব সাকিবুর রনি, ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক নুসরাত হকসহ অন্য নেতাকর্মীরা।
মন্তব্য করুন