মো. মিরাজ মল্লিক, বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:১৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বশেমুরবিপ্রবি ক্যাফেটেরিয়া : চুক্তি ভেঙে চলে গেল ঠিকাদার!

বশেমুরবিপ্রবির ক্যাফেটেরিয়া। ইনসেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো। ছবি : কালবেলা
বশেমুরবিপ্রবির ক্যাফেটেরিয়া। ইনসেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো। ছবি : কালবেলা

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া ছাত্র-শিক্ষকের আড্ডার প্রাণকেন্দ্র। মানুষ তার সমগ্র জীবনে অন্যতম একটি আনন্দঘন আড্ডার মুহূর্তের দেখা পায় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। যেখানে দলবেঁধে তারুণ্য, আড্ডা কিংবা খুনসুঁটির এবং এর অন্যতম স্থান হিসেবে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক্যাফেটেরিয়া’।

দীর্ঘ কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর চালু হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া। প্রতীক্ষার সমাপ্তি ঘটিয়ে এ বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে উদ্বোধন করা হয় কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া। ২ বছর মেয়াদি চুক্তিতে যার টেন্ডার পান ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ‘নাসের ইন্টারন্যাশনাল’। কিন্তু ক্যাফেটেরিয়া কিছুদিন পরিচালনা করলেও নিয়মের তোয়াক্কা না করে চুক্তি ভঙ্গ করেই চলে যান ওই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ‘নাসের ইন্টারন্যাশনাল’।

জানা যায়, সেখানে অভ্যন্তরীণ মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে রফাদফার মাধ্যমেই পরিচালনা করার সুযোগ করে দেন ভিন্ন আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে। ক্যাফেটেরিয়ার চুক্তি সম্পাদন পত্রে ২ ও ৭ নম্বর শর্তে উল্লেখ রয়েছে স্বয়ং চুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানকেই ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনা করতে হবে, কোনো প্রকার সাব-কন্ট্রাক্ট প্রদান করা যাবে না এবং শর্তাবলি লঙ্ঘিত হলে কর্তৃপক্ষ কারণ দর্শানো ছাড়া চুক্তি বাতিল ও জামানত (৫০ হাজার টাকা) বাজেয়াপ্ত করতে পারবেন।

চুক্তি বাতিল করেছে কিনা বিষয়ে জানতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নাসের ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, ‘ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এখন কোনো প্রকার চুক্তিই নেই। এখন কীভাবে চালাচ্ছে কিংবা কি করছে এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো সংযোগই নেই।’

তবে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ক্যাফেটেরিয়ার রফাদফা হয়েছে কিনা এবং তারা জামানতের টাকা ফেরত নিয়েছেন কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘এটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ ছাড়া জামানতের টাকা অন্যভাবেই সমন্বয় করে নিয়েছেন বলে জানান।’

তবে নতুন প্রতিষ্ঠান কীসের ভিত্তিতে এবং কীভাবে চুক্তি সম্পাদন ছাড়া ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনা করছেন এ বিষয়ে ক্যাফেটেরিয়া ম্যানেজার জানান, ‘আমরা নাসের ইন্টারন্যাশনাল বা কারও অধীনে নই ‘খান ট্রেডার্স’ হিসেবে পরিচালনা করছি। প্রশাসনকে আমরা ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র দিয়েছি। তবে প্রশাসন এখনো আমাদের কাছে কোনো চুক্তিপত্র হ্যান্ডওভার করেনি।’

টেন্ডার বা নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ছাড়া অভ্যন্তরীণভাবে প্রশাসন কোনো চুক্তি করতে পারে কিনা জানতে চাইলে বশেমুরবিপ্রবি প্রকল্প পরিচালক তুহিন মাহমুদ জানান, ‘এভাবে অভ্যন্তরীণ কোনো চুক্তি দেওয়ার নিয়ম নেই। তবে আগে টেন্ডার প্রকাশের মাধ্যমে নাসের ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গেই সঠিকভাবে চুক্তি হয়েছিল।’

অন্যদিকে খাবারের দাম ও মান নিয়ে শিক্ষার্থীদের রয়েছে নানা অসন্তোষ। এমনকি কিছুদিন পূর্বে ডালের বাটির মধ্যে ঘাসফড়িং ও মাছি পাওয়া গেলে সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে নেটিজেনরা নানা মন্তব্য ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী তুহিন বাদশা জানান, ‘শিক্ষার্থী হিসেবে ক্যাফেটেরিয়াতে কম মূল্যে ভালো খাবার আমাদের অধিকার। ক্যাফেটেরিয়ার চেয়ে কম দামে বাইরে খাবার পাওয়া যায়। ৬ মাস পার হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এখনো কোনো মূল্য তালিকাই প্রকাশ করেনি। বর্তমান মূল্য থেকে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে খাবারের মূল্য অর্ধেক করতে হবে। প্রশাসনের ভর্তুকির পাশাপাশি নজরদারিতে নিতে হবে।’

এসব বিষয়ে ক্যাফেটেরিয়া প্রশাসক ড. মো. বশির উদ্দিন জানান, ‘নাসের ইন্টারন্যাশনাল চলে গেছে ঠিক না বর্তমান এরা তাদের পার্ট। তারা কাদের দিয়ে চালাবে এটা তাদের ব্যাপার। আমরা এদের থেকে ৫০ হাজার ফি টাকা নিয়ে কনভার্ট করে দেওয়া হয়েছে। তবে অভ্যন্তরীণ মোটা অঙ্কের টাকা-পয়সার চুক্তির বিষয়ে তার কাছে কোনো লিখিত আসেনি বলে জানান। ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ে সামনের সপ্তাহে একটা মিটিং করবেন বলেও জানান। খাবারে পোকার অভিযোগ বিষয়ে তিনি বলেন, যেখানে ১৫০০-১২০০ শিক্ষার্থী খায় সেখানে ১০-১২ জনের কাছে এমন হতেই পারে।’

এ ছাড়াও চুক্তি অনুযায়ী অভ্যন্তরীণভাবে টেন্ডার দেওয়া যাবে না। তবে কেন দেওয়া হয়েছে প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ‘অভ্যন্তরীণভাবে দেওয়া হয়নি সেখানে কোনো সমস্যা থাকলে ১০ দিনের মধ্যে একটা কমিটির মিটিং দিব। আইনের মধ্যে থেকে কীভাবে আমরা বেরিয়ে আসতে পারি সেই চেষ্টা করব।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কিবোর্ডে লুকিয়ে থাকা কয়েকটি আকর্ষণীয় রহস্য, যা জানেন না অনেকে

খুলনায় জোড়া হত্যা মামলায় ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড

চট্টগ্রাম বন্দরে নিলাম অযোগ্য ১৯ কনটেইনার বিপজ্জনক পণ্য ধ্বংস

এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মামলা

‘কাল্পনিক অভিযোগে জামায়াত নেতাদের বিচারিক হত্যা করেছে আ.লীগ’

সাধারণ এই ৪ ভুলেই শরীরে আয়রনের মাত্রা কমবে হুড়মুড়িয়ে

বিক্রি হওয়ার পথে বিখ্যাত মারকানা স্টেডিয়াম

ড্যাবের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হলেন ডা. শাকিল

দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে চান? প্রতিদিনের ডায়েটে রাখুন এই ৪ ফল

শক্তি বাড়িয়ে উপকূলের আরও কাছে ঘূর্ণিঝড় মেলিসা

১০

ধর্মকে বিকৃত করে নির্বাচন বানচাল জনগণ মেনে নেবে না : ফারুক

১১

সিলেটে অটোরিকশা চালুর দাবিতে সড়ক অবরোধ

১২

অধ্যক্ষ-প্রধান শিক্ষক ও প্রভাষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে পরিপত্র জারি

১৩

সাবেক এমপি জয়সহ ৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা  

১৪

জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে দাঁড়িয়ে গালাগাল, সেই তরুণী গ্রেপ্তার

১৫

হাসপাতালে ভর্তি অভিনেতা হাসান মাসুদ

১৬

মোটরসাইকেল থেকে নেমেই দুই বাড়িতে গুলিবর্ষণ

১৭

৫৪ বছরের অন্যায়ের জবাব দেবে ইসলামী রাজনীতি : মুফতি সাকী

১৮

রাজধানীতে বাংলা এডিশন টিমের ওপর হামলা

১৯

শিশুদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে রাশিয়া

২০
X