গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে চাপ দেওয়ার অভিযোগ এনেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
রাজধানীর গুলশানে নগর ভবনের সামনে গণঅধিকার পরিষদের কর্মীদের বিক্ষোভ-সমাবেশের পরদিন এ অভিযোগ এনেছে ডিএনসিসি।
গতকাল বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডিএনসিসি বলেছে, নিজের পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ না দেওয়ায় নুরের কর্মীরা নগর ভবনের সামনে মঙ্গলবার বিশৃঙ্খলা করেছেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নুর তার পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার জন্য গত ১৮ মে ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুর রহমানকে ফোন করেন। তখন সেই প্রকৌশলী নুরকে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ও পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালার আইনি বিষয় ব্যাখ্যা করে আইনের বাইরে গিয়ে কোনো কিছু করার সুযোগ না থাকার কথা তুলে ধরে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু নুর তার কোনো কথা না শুনে কাজ দেওয়ার জন্য চাপ দেন। ডিএনসিসির অফিসে তালা লাগানোর হুমকি দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বিকেলে নগর ভবনের সামনে কিছু লোক নিয়ে গণঅধিকার পরিষদের ব্যানারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও ডিএনসিসি প্রশাসকের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হয়। এতে ডিএনসিসির স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে কললিস্টের দুটি স্ক্রিনশট যুক্ত করে দিয়েছে ডিএনসিসি। সেখানে দেখা যায়, ‘ভিপি নুর’ নামে সেভ করা নম্বর থেকে শনিবার তিনটি কল ও একটি মেসেজ আসে। মেসেজে ১০ নম্বর জোনের ১৪ কোটি ও ১৬ কোটি টাকার দুটি কাজ এবং ৪ নম্বর জোনের ১৪ কোটি ও ১১ কোটি টাকার দুটি কাজের কোড নম্বর দেওয়া আছে। শেষে লেখা রয়েছে, ‘এখান থেকে একটি দিতে বলেন, ধন্যবাদ।’
এ বিষয়ে নুরুল হক নুর ফেসবুকে লিখেছেন, এজাজ নিজেই সিটি করপোরেশনকে তার নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। তার পছন্দ ও কমিশনের বাইরে কেউ কোনো কাজ পায় না। তারপরও আমরা কিন্তু সে অভিযোগে তার পদত্যাগ চাইনি। আমরা নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীর পৃষ্ঠপোষক ও জঙ্গিবাদের কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ায় তার পদত্যাগ চেয়েছি। তিনি জবাব না দিয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাকে দিয়ে নাটক করাচ্ছেন।
এদিকে, ডিএনসিসি মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে দাবি করেছে গণঅধিকার পরিষদ। একই সঙ্গে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের গ্রেপ্তারের দাবিও জানিয়েছেন তারা। বুধবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীর নেতা ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার স্পষ্ট তথ্য-প্রমাণের পর প্রশাসকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকতে পারেন না। মোহাম্মদ এজাজের হিযবুত তাহরীর ও জঙ্গিবাদের কার্যক্রমে যুক্ত থাকা ও একই অভিযোগে ২০১৫ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি সম্প্রতি আলজাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের ফেসবুক পোস্টেও উঠে এসেছে।
যে কারণে সুস্পষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই এজাজকে প্রশাসক পদ থেকে অপসারণ ও গ্রেপ্তারের দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর গণঅধিকার পরিষদ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়। যেখানে গণঅধিকার পরিষদ ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সমর্থন জানায়।
এর আগে গত মঙ্গলবার ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজকে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীরের নেতা উল্লেখ করে তার অপসারণের দাবিতে গুলশানে ডিএনসিসির সামনে বিক্ষোভ-সমাবেশ করে গণঅধিকার পরিষদ। আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে মোহাম্মদ এজাজকে অপসারণ ও গ্রেপ্তারের দাবি জানান সংগঠনের নেতারা। তা না হলে আগামী শনিবার থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দেয় গণঅধিকার পরিষদ।
মন্তব্য করুন
আর্কাইভ 
| ১৫ জুন ২০২৫ 
